নাগরিক ভোগান্তির দ্রুত অবসান হোক

অন্তর্বর্তী সরকার অন্যান্য কমিশনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার সংস্কারেও একটি কমিশন গঠন করেছে এবং তারা পুরোদমে কাজও শুরু করেছে। এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার সংস্থাকে শক্তিশালী করতে সরকারের আগ্রহেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করি। বাস্তবতা হলো ব্যতিক্রম বাদে দেশের স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো প্রায় অকেজো। ৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের পর ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া সব স্থানীয় সরকার সংস্থা তথা উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ছাড়া বাকি সব সিটি করপোরেশন চলছে প্রশাসক দ্বারা। জনপ্রতিনিধি ছাড়া সিটি করপোরেশন চালালে নাগরিকদের কী ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়, তা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলোয়। বুধবার প্রথম আলোর দুই প্রতিবেদক উত্তর সিটির ছয়টি ওয়ার্ড ও দক্ষিণ সিটির দুটি কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পান, সেবাপ্রার্থীরা হয় সনদ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছেন, অথবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭৫টি ও উত্তরে ৫৪টি ওয়ার্ড আছে; যেখান থেকে নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যুসনদ দেওয়া হয়। এর বাইরে নাগরিক, চারিত্রিক, উত্তরাধিকারী (ওয়ারিশ), আয়, অবিবাহিত, দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ না হওয়া, পারিবারিক সদস্য, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার সত্যায়িত সনদও দেওয়া হয় এই দপ্তর থেকে। বিভিন্ন প্রত্যয়ন, অনাপত্তিপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় যাচাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর দিতে হয় কাউন্সিলরকে। 

কাউন্সিলরদের পদচ্যুতির পর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে জন্ম ও মৃত্যুসনদ দেওয়া হয়। দুই সিটি করপোরেশনের অধীন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস আছে ১০টি করে। দক্ষিণ সিটির ৭৫ জন কাউন্সিলর যে কাজ করতেন, সেটি মাত্র ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিয়ে করা কঠিন। উত্তরেও ৫৪ জনের কাজ ১০ জন নির্বাহী কর্মকর্তাকে করতে হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন সচিব থাকার কথা থাকলেও সব ওয়ার্ডে নেই। অনেক ওয়ার্ডের দপ্তর স্থানান্তর করার কারণেও নাগরিকদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। 

প্রথম আলোয় ২৯ আগস্টও এক প্রতিবেদনে ঢাকার নাগরিকদের সনদ নিতে যে ভোগান্তিতে পড়তে হয়, তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে নগরবাসী খণ্ডকালীন দুই প্রশাসকের স্থলে সার্বক্ষণিক প্রশাসক পেয়েছেন। 

প্রায় দুই কোটি জন–অধ্যুষিত দুই সিটি করপোরেশনকে প্রশাসক দিয়ে কিংবা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাজ নির্বাহী কর্মকর্তাদের দিয়ে করা সম্ভব নয়। দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন না হলেও নতুন নির্বাচনের সময় আসন্ন। এই অবস্থায় আমলা দিয়ে সিটি করপোরেশন পরিচালনা না করে সরকারকে নতুন নির্বাচনের কথাই ভাবতে হবে। আর সমস্যা কেবল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নয়, সব স্থানীয় সরকার সংস্থাই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র থাকলেও কাউন্সিলর নেই। 

অতীতে প্রতিটি রাজনৈতিক সরকারই স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে ‘দলীয় অফিসে’ পরিণত করেছিল। এ অবস্থার অবসান জরুরি। আমরা আশা করব, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত সুপারিশ করবে এবং সরকার তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। তবে নির্বাচন যত দিন না হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে অন্তর্বর্তী সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে। আপাতত নির্বাহী কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়িয়ে সেটা করা যেতে পারে। এতে সেবাপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে।