নাগরিক সমাজে এখন পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ শাকসবজির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এখন নিরাপদ কৃষি নিয়ে কাজ করছেন। গড়ে তুলেছেন নিজস্ব খামার, উদ্বুদ্ধ করছেন স্থানীয় কৃষকদেরও। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতেও এমন সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তবে এতে কৃষক ও ভোক্তা কতটা উপকৃত হচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। রাজশাহীতে একজন কৃষি কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব নামে প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই সেই প্রযুক্তি হাওয়া হয়ে গেছে। তাহলে এই উদ্যোগ কেন নেওয়া হলো?
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আমরা দেখছি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার করে ১৯২ কোটি টাকার নিরাপদ সবজি উৎপাদন বেড়েছিল বলে দাবি করা হয়। মো. শফিকুল ইসলাম নামে রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার সাবেক একজন কৃষি কর্মকর্তা এ কাজে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গোদাগাড়ীর একটি গ্রামকে ‘নিরাপদ সবজির গ্রাম’ বলেও ঘোষণা করেছিলেন। তানোরেও সবজি উৎপাদন করেন দ্বিগুণ। এসবের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৬’ পেয়েছেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দুই উপজেলার কোথাও এখন সেই প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায়নি। নিরাপদ সবজির উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে।
কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়। পোকা দমনে শুধু জৈব বালাইনাশক, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও হলুদ স্টিকি ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। কীটনাশকের বদলে নিমের ছালের রস ব্যবহার করা হয়েছিল। আড়াই থেকে তিন মাসে এ উদ্যোগ অনেকটা সফল হয়।
এখন চাষিরা জানাচ্ছেন, তাঁরা কেউ আগের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি চাষ করছেন না। কোটি কোটি টাকার সবজি উৎপাদন বাড়লেও কেন কৃষকেরা সেই প্রযুক্তি ব্যবহারে ইচ্ছুক নন? তাহলে সেই সাফল্যের দাবির মধ্যে কোনো গোঁজামিল ছিল? তেমনটিই ঘটে থাকলে জাতীয় কৃষি পুরস্কারের স্বীকৃতি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
কৃষকদের বক্তব্য, গ্রামের সব চাষি যখন কীটনাশক ব্যবহার করেন, তখন ওই প্রযুক্তিতে আর কাজ হয় না। বর্তমানে নাটোরে একটি প্রকল্পে কাজ করা শফিকুল ইসলামের বক্তব্য, তিনি তানোর ও গোদাগাড়ীতে ১০ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
এখন যদি কেউ তাঁর ‘উদ্ভাবিত’ প্রযুক্তি ধরে না রাখেন, তাহলে তো তাঁর কিছুই করার নেই। তাঁর এ বক্তব্য অনেকটা দায়সারামূলক। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে তাঁর সাফল্য সত্যি হয়ে থাকলে তিনি অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
কিন্তু এমন উদ্যোগগুলোর ধারাবাহিকতা না থাকাটা দুঃখজনক। এ প্রযুক্তি নিয়ে কী ঘটেছে, কেন তা ব্যর্থ হলো, তা তদন্ত করে দেখা হোক।