বাজার অর্থনীতি ঠিক রাখতে মনোযোগী হোন

একের পর এক আকস্মিক বন্যা কৃষক ও খামারিদের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। দেড় মাসের মধ্যে ফেনী–কুমিল্লার বন্যা, এরপর কুড়িগ্রামে বন্যা এবং সর্বশেষ দেখা গেল শেরপুর–নেত্রকোনায় বন্যা। এ তিন বন্যায় লাখো কৃষক ও খামারির শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে কৃষক ও খামারিরা তো পথে বসবেনই, উৎপাদন কমে গিয়ে বাজারে পণ্যের চাহিদায়ও টান পড়বে। সেই চাপ এসে পড়ে ভোক্তার ঘাড়েও। ফলে বাজার অর্থনীতি ঠিক রাখতে কৃষক–খামারিদের পাশে দাঁড়াতেই হবে।

ফেনী–কুমিল্লার বন্যা নিয়ে সরকারি–বেসরকারিভাবে সবাই যতটা সরব ছিল, তেমনটি দেখা যায়নি উত্তরবঙ্গ ও শেরপুর–নেত্রকোনার বন্যার ক্ষেত্রে। ফলে এ দুই অঞ্চলে কৃষক ও খামারিদের ক্ষতির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে না। শেরপুর–নেত্রকোনার বন্যা শেষ হয়ে গেলেও ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন সেখানকার কৃষক–খামারিরা।

শেরপুর–নেত্রকোনার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রোপা আমন ও সবজিচাষিরা। নেত্রকোনার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, পাঁচ উপজেলার অন্তত ২০ হাজার ৯০৯ হেক্টর জমির রোপা আমন ধানের খেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ৭০ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সবজি নষ্ট হয়েছে ১৬০ হেক্টর জমির। এতে ৫ হাজার ৩২০ কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার বক্তব্য, ১ হাজার ৭৩০টি পুকুর এবং মৎস্যখামার ডুবে গেছে। এতে ভেসে গেছে প্রায় আট কোটি টাকার মাছ। 

শেরপুরের কৃষকেরা বলছেন, ১৯৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা তাঁরা দেখেননি। জেলাটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক। এ বছর ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টরই বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৫৯ হেক্টর জমির শাকসবজি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২ দশমিক ৭ হেক্টর জমির বস্তায় আদা চাষ আক্রান্ত হয়েছে। শুধু নালিতাবাড়ী উপজেলায় কৃষিতে আনুমানিক ২৩১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পেয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে এখনো অনেক জায়গায় পানি না নামায় জেলাটির কৃষিতে পুরোপুরি ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি।

শেরপুর–নেত্রকোনার কৃষক ও খামারিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। এতগুলো মানুষ ও তাঁদের পরিবারের অনিশ্চয়তার বিষয়টি সরকারকেই ভাবতে হবে। এ ছাড়া বাজারে চাল, সবজি, ডিম, মুরগি, মাছের সরবরাহ ঠিক রাখতে হলেও তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সার ও বীজের সরবরাহ বাড়িয়ে কিংবা প্রণোদনা দিয়ে কৃষক ও খামারিদের পাশে দাঁড়ান।