আমরা হামেশাই শুনি দেশে রেলপথে প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু ময়মনসিংহের ব্যস্ত রেলস্টেশন বিসকার চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। স্টেশনটির দাপ্তরিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে আছে ১০ বছর ধরে। লোকাল ট্রেন এই স্টেশনে দিনে ১২ বার থামে। প্রতিদিন হাজারখানেকের বেশি যাত্রী ওঠানামা করে।
কিন্তু ট্রেনগুলো যাত্রী ওঠানামার জন্য যথেষ্ট সময় দেয় না, আবার বিসকা থেকে টিকিট কাটারও সুযোগ নেই। ফলে বিসকা স্টেশনের যাত্রীদের শম্ভুগঞ্জ রেলস্টেশনে নেমে টিকিট সংগ্রহ করে আবারও ট্রেনে চড়তে হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদক নিজেই বিসকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত রেল ভ্রমণ করেন। তিনি শতাধিক যাত্রীকে স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখেন। তাঁরা হুড়মুড় করে ট্রেনে চাপেন এবং একজন ছাড়া কেউই শম্ভুগঞ্জে স্টেশনে নেমে টিকিট কাটেননি।
১০ বছর ধরে স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মোটাদাগে তিনটি সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, দাপ্তরিক কার্যক্রম না থাকায় ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কে বিসকা এলাকার বাসিন্দারা কোনো খোঁজখবর পাচ্ছেন না।
ফলে অফিস-আদালতগামী মানুষ এবং যাঁরা শাকসবজি নিয়ে ময়মনসিংহে যান, তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন। দ্বিতীয়ত, ওঠানামার জন্য খুব অল্প সময় দেওয়ায় হুড়মুড়িয়ে উঠতে গিয়ে অনেকেই আঘাত পেতে পারেন। তৃতীয়ত, অধিকাংশ যাত্রী পরের স্টেশনে নেমে টিকেট না কাটার কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে তাদের ‘ভিশন ও মিশন’ নিয়ে বলা আছে। ভিশন হলো নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও সময়ানুবর্তী রেলসেবা দেওয়া। আর আট দফা মিশনের শুরুতে আছে, রেলওয়ে ট্র্যাক ও স্টেশন অবকাঠামোর উন্নয়ন। বিসকা রেলস্টেশনের এই অবস্থা কেন—তার উত্তরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের জনবলসংকটের কথা বলেছে।
কিন্তু গুরুত্বের বিবেচনায় বিসকা গুরুত্বহীন এমনটা বলা যাচ্ছে না। শম্ভুগঞ্জ স্টেশনের স্টেশনমাস্টার মাহমুদুল হাসান অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন বিসকা রেলস্টেশনের। তিনি বলেছেন, যাত্রীসংখ্যা বিবেচনায় বিসকা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বারবার স্টেশনটির কার্যক্রম শুরু করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।
গত বছর জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, আওয়ামী লীগের শাসনামল ছাড়া এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে রেলওয়ের কোনো উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে রেল খাতে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে, যার ফল রেলওয়ে পেতে শুরু করেছে। কিন্তু বিসকাবাসী কেন এই সুফলবঞ্চিত, সেই প্রশ্নের জবাব আছে?