একটি ঘূর্ণিঝড় জনপদে আঘাত হেনে চলে যায়, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির রেশ রয়ে যায় দীর্ঘদিন। কোনো এলাকা এক সপ্তাহ পরও বিদ্যুৎহীন থাকে, কোথাও বিধ্বস্ত সড়ক বা কালভার্ট পড়ে থাকে, উপকূলীয় জনপদে নিখোঁজ জেলেদের অপেক্ষায় থাকেন স্বজনেরা, আবার কোথাও স্কুলঘর ধসে পড়ে ব্যাহত হয় শিক্ষার্থীদের পাঠদান। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় একটি ছবি ছাপা হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, টিনের চালসহ একটি স্কুলের পুরো কাঠামোই পাশের পুকুরে পড়ে আছে। এখন খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। স্কুলঘরটির পুনর্নির্মাণ নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান। পশ্চিম চর জুবলি আব্দুল মালেক উকিল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে স্কুলঘরটি উড়ে যায়। বিদ্যালয়ের মাটির ভিটাটাই এখন অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষ। সেখানে খোলা আকাশের নিচে ভাঙাচোরা চেয়ার-টেবিল বসিয়ে কোনোরকমে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীদের বসার মতোও চেয়ার-টেবিল নেই। চার থেকে পাঁচ দিন ধরে এমন পরিবেশে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। গত বুধবার শুরু হয় বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা। বিদ্যালয়টির ২০০ শিক্ষার্থী খোলা আকাশের নিচে রোদের মধ্যে বসে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
ওই এলাকায় একসময় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। ২০০৯ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী বাহাউদ্দিনের উদ্যোগে সাবেক স্পিকার আব্দুল মালেক উকিলের নামে ‘পশ্চিম চর জুবলি আব্দুল মালেক উকিল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। নতুন শিক্ষানীতির আলোকে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মানুষের সাহায্য-সহায়তায় স্কুলটির কার্যক্রম চলে আসছে। বড় কোনো অনুদান না পাওয়ায় বা সরকারি না হওয়ায় কোনো ভবন ওঠেনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি মেরামতে সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন প্রধান শিক্ষক।
প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ও ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে, স্কুলটি নিয়ে কিছু করা যায় কি না। আমরা আশা করব, উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক হবে। এ ছাড়া আমরা আরও জানতে পেরেছি, সুবর্ণচরের চরবাটায় সওদাগরহাট উচ্চবিদ্যালয় নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় স্কুলটির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। উপজেলা প্রশাসন সে স্কুলের ব্যাপারেও খোঁজখবর নিয়ে এগিয়ে আসবে—এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।