বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে সারা দেশে তালগাছ লাগানোর কাজ করছে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। উঁচু গাছ বলে তারা তালগাছকে বেছে নিয়েছে। অন্যদিকে কখনো জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামোর নামে, আবার কখনো বিদ্যুতের লাইন টানার নামে সরকারেরই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তালগাছের ওপর চড়াও হচ্ছে। কখনো তারা গাছ উপড়ে ফেলছে, কখনো মাথা মুড়িয়ে দিচ্ছে।
অথচ দিন কয়েক আগেই হাইকোর্ট পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের সময় ৩০টি তালগাছ উপড়ে ফেলার ঘটনায় নির্দেশনা দিয়েছেন। হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বলেছেন, অনিবার্য প্রয়োজনে যে গাছটা কাটবে, ওই গাছের পরিবর্তে ১০টি গাছ লাগাতে হবে পার্শ্ববর্তী বা অন্য জায়গায়।
আগে গাছ লাগাতে হবে, তারপর কাটা যাবে। হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখেই হয়তো এবার মাগুরার চাউলিয়া ইউনিয়নের কুকিলা গ্রামে আর গাছ কাটেনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তারা ২৩টি তালগাছের মাথা মুড়িয়ে দিয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসন উপকারিতার কথা জানিয়ে তালগাছ লাগাচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদক গ্রামের মানুষ ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিদ্যুতের তার এ পথ দিয়ে যাওয়ার আগেই তালগালগুলো লাগানো হয়েছিল। যদিও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা বলছেন, তালগাছগুলো লাগানো হয়েছে বিদ্যুতের তার লাগানোর পর।
তালগাছগুলো আগে লাগানো হোক কিংবা পরে, পল্লী বিদ্যুৎ কি তালগাছগুলো রক্ষার কোনো চেষ্টা করেছে? প্রথম আলোকে মাগুরা জেলার পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপক স্বদেশ কুমার ঘোষ বলেন, তাঁরা তালগাছের মাথা মুড়িয়ে দেওয়ার পর নতুন করে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেননি। ভবিষ্যতে নিতে পারেন।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে বাংলাদেশের সরকারি সংস্থাগুলো বরাবরই খেয়ালখুশিমতো চলে আসছে। কেউ গাছ কাটে, মাথা মুড়িয়ে দেয়, আবার কেউ গাছ লাগায়। যারা গাছ লাগায়, তাদের সবার মধ্যেও সমান আন্তরিকতা নেই। বড় গাছ কেটে ফুলের গাছ লাগানোর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা শহরে। পরিবেশবাদীদের আন্দোলন, ক্ষোভ, দুঃখ কোনো কিছুকেই পাত্তা দেয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দিকেই আছে বাংলাদেশের নাম।
একটা সময় জলবায়ু পরিবর্তনকে অনেক দূরের ইস্যু মনে হলেও, এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এক মাসের ব্যবধানে সারা দেশে দুটি দাবদাহ হয়ে গেল। আষাঢ় মাসের প্রথম দিনেও সারা দেশে বৃষ্টি হয়নি।
বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গত বছরেই ৩১৬ জন বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। আর মাস দুয়েক আগে এক দিনে প্রাণ গেছে নয়জনের।
মনে রাখতে হবে, নির্বিচার গাছ কাটার ফল শুধু পরিবেশবাদীরাই ভোগ করবেন না, ভুগবেন সবাই। উন্নয়নের নামে যা কিছুই করা হোক না কেন, গাছ বাঁচিয়ে করাই শ্রেয়। কারণ, উন্নয়ন ও গাছ দুটিই আমাদের প্রয়োজন।