হোটেল-মোটেলকে নিয়ম মানতে বাধ্য করুন

সম্পাদকীয়

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কক্সবাজার শহর। কিন্তু বিশ্বের অন্য পর্যটন নগরীগুলো যেভাবে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে, কক্সবাজারকেও সেভাবে সাজানোর সদিচ্ছা কোনোভাবেই আমরা দেখি না। এখানে যত্রতত্র হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ গড়ে উঠেছে।

এর জন্য পাহাড় কাটা, প্যারাবন ধ্বংস করা, নদী দখল করা—কোনো কিছুই বাকি রাখা হয়নি। সমুদ্রসৈকতের পাশে শুধু কলাতলীতে মাত্র তিন বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে ৫৩৮টি হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট-কটেজ। এ যেন কংক্রিটের জঙ্গল। আরও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে এসব হোটেল-রিসোর্টের আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নেই।

ফলে অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের বর্জ্য নদী ও সমুদ্রে গিয়ে মিশছে এবং দূষণ বাড়াচ্ছে। এর ফলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কিন্তু বিষয়টি দেখার কেউ নেই যেন। জেলা প্রশাসন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা গতানুগতিক পদক্ষেপ নিলেও সেখানে কার্যকর কোনো ফল আসছে না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এসটিপি না থাকায় সেপটিক ট্যাংক দিয়ে হোটেলগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। হোটেল কর্তৃপক্ষগুলোও বলছে, হোটেলে মলমূত্র সেপটিক ট্যাংকে জমা হলেও অতিথিদের (পর্যটক) ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা সংরক্ষণের ব্যবস্থা তাদের নেই। এখন এসটিপি না বসানোর ফলে বর্ষা মৌসুমে সেপটিক ট্যাংকের মলমূত্র নালা ও রাস্তা দিয়ে সমুদ্র ও পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সামুদ্রিক ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতির মুখে পড়ছে। শুধু তা-ই নয়, কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যাও তৈরি করছে।

ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এসটিপি নির্মাণ করতে আগ্রহী হন না অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের মালিক। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে পর্যটন ব্যবসা থেকে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করে যাচ্ছেন তাঁরা। মুনাফা অর্জনে তাঁরা যতটা বেশি মনোযোগী, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব উদ্যোগ গ্রহণে ততটাই উদাসীন। এমনকি বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে এসটিপি আছে বলে দাবি করা হলেও তা নিয়ে সন্দিহান পরিবেশবিদেরা।

সেখানকার পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় বলছে, ২০-২৫টি ছাড়া পাঁচ শতাধিক হোটেলের পরিবেশ ছাড়পত্রও নেই। এসটিপি স্থাপন ও পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণের জন্য নোটিশ করা হলেও সাড়া মিলছে না। তাহলে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া এসব হোটেল-মোটেল কীভাবে চলছে? সেগুলো চলতে দেওয়া হচ্ছে কেন? এটি পর্যটন নগরীটিকে ধ্বংস করার নামান্তর।

হোটেল-মোটেলমালিকেরা বলছেন, কাউকে কেন্দ্রীয়ভাবে এসটিপি স্থাপনের উদ্যোগ নিলে তাঁরা অর্থসহায়তা দেবেন। অন্যদিকে সেখানকার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয় বলছে, কক্সবাজারে এসটিপি স্থাপনে বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) আগ্রহ আছে। উদ্যোগ নিলে বাস্তবায়ন সম্ভব। কিন্তু সেই উদ্যোগ কেন নেওয়া হচ্ছে না? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সদিচ্ছা ও কর্মতৎপরতা জরুরি বলে আমরা মনে করি।