অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়

দেশে প্রতিদিনই ঘটছে ধর্ষণের ঘটছে। পত্রিকার পাতার সেসব খবর এখন আমাদের গা সয়ে গেছে বলা যায়। ধর্ষণের প্রতিবাদে মানুষকে এখন আগের মতো ফুঁসে উঠতেও দেখা যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ঘৃণ্য এই অপরাধের সঙ্গে অল্প বয়সী ও শিক্ষার্থীদেরও নাম আসছে।

আমাদের সমাজবাস্তবতা যে পাল্টে যাচ্ছে, শিক্ষাব্যবস্থায়ও নৈতিক ভিত্তি তৈরি হচ্ছে না, সেই আলোচনাই এখানে দাবি রাখে। গত বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও তরুণদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদের হাট নামে কথিত বিনোদনকেন্দ্রে এ ধর্ষণের ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে বেশ উদ্বেগ তৈরি করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সখীপুরের কচুয়া দক্ষিণপাড়া এলাকায় চাঁদের হাট নামে ওই বিনোদনকেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। মূলত সেটি কোনো বিনোদনকেন্দ্র নয়। সেখানে সাইনবোর্ডসর্বস্ব আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে, যেখানে তেমন শিক্ষার্থীও নেই।

জায়গাটিতে নানা ধরনের গাছপালা ও ফুলের বাগান থাকায় দর্শনার্থীরা ওই স্থানে ঘুরতে আসেন। ওই এলাকায় বেশ বনজঙ্গলে ঘেরা। একটি চক্র সেখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নিত। নারী হেনস্তা ও ধর্ষণও বাদ যেত না।

সর্বশেষ সেখানে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়া এক সাহসী নারী থানায় মামলা করলে চক্রটির ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। যদিও ধর্ষণের সঙ্গে আরও ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, বাকিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে ভয়াবহভাবে পিটিয়ে, তাঁর মানিব্যাগ-মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর ওই নারীকে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের একজন আসিফ হাসান সরকারি মুজিব কলেজের শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সরকারি মুজিব কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার রকিবুল বিজয়ের অনুসারী।

ওই কলেজ থেকে এবার তাঁর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কোনো সংগঠনের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অপকর্মের অভিযোগ এলে যেমন বক্তব্য পাওয়া যায়, এখানেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

বলা হচ্ছে, অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে আসিফকে শিশু-কিশোর সংগঠনটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শিশু-কিশোর সংগঠনের যুক্ত শিক্ষার্থী এভাবে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে, এটি অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়।

চাঁদের হাটে বেড়াতে আসা যুগলদের আটক করে এ ধরনের কাজ এর আগেও অনেকবার ঘটেছে। এসব অপরাধের সঙ্গে যারাই জড়িত, সবাইকে আইনি ব্যবস্থার মধ্যে আনা হোক। এই ধর্ষণকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা দাবি করছি। আর চাঁদের হাটে সাইনবোর্ডসর্বস্ব এতগুলো প্রতিষ্ঠানের নামে কী হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।