কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই

সম্পাদকীয়

কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সংঘর্ষ-সহিংস পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন সাংবাদিকেরা। কয়েকজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। এ নিয়ে আমরা সম্পাদকীয় লিখেছিলাম।

অবশেষে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের নানা প্রেক্ষিত ও বিপুল রক্তপাতের পর গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষ বিজয় উল্লাসে মেতে উঠলেও কিছু সুযোগসন্ধানী বা দুর্বৃত্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। বাদ যায়নি সংবাদমাধ্যমও। বিশেষ করে কয়েকটি টিভি চ্যানেল বা সম্প্রচারমাধ্যমের অফিসে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই নিন্দনীয়। আমরা এর কঠোর প্রতিবাদ জানাই।

গত সোমবার রাজধানীসহ দেশের নানা জায়গা থেকে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের খবর আসতে থাকে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সোমবার কারওয়ান বাজারে এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ; বারিধারায় একাত্তর টেলিভিশন, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়কে সময় টেলিভিশন, তেজগাঁওয়ে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অফিস ও গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

সদ্য পদত্যাগ করা সরকারের আমলে সংবাদমাধ্যমকে চরম বাধা ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে বারবার। ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে দেশে মুক্তচিন্তা ও বাক্‌স্বাধীনতা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। অনেককে জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। এই আইনের বড় শিকার হতে হয়েছিল সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদেরও। নাগরিক সমাজ, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক মহল সব সময় এ আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। আন্তর্জাতিক মহলও এই আইন নিয়ে বারবার উদ্বেগ জানায়। সেই আইন সংস্কার করে যে সাইবার সুরক্ষা আইন হয়েছে, তাতেও খুব একটা হেরফের নেই। স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এই আইন এখন বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।

কখনো কোনো সরকারের আমলেই সংবাদমাধ্যমের কার্যক্রম মসৃণ ছিল না। এখানে পেশাদারি সাংবাদিকতার যথেষ্ট অভাব আছে। সরকারি ও আইনি চাপের পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতায় মালিক-উদ্যোক্তারাও অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ান। নানা সংকট, সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে করে সংবাদমাধ্যমগুলো কাজ করে যাচ্ছে।

তবে এটাও ঠিক যে অনেক সংবাদমাধ্যম সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা খুব একটা বিবেচনায় নেয় না। সাংবাদিকতার সঙ্গে ক্ষমতার একটি সম্পর্ক এবং সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষমতার মোহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই বাস্তবতাও কোনো সংবাদমাধ্যম অফিসে হামলার বৈধতা দেয় না। আমরা সংবাদমাধ্যমের অফিসে হামলার ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত।

আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের অফিসগুলোতে হামলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলায় এখন সেনাবাহিনী দায়িত্বে আছে। আমরা আশা করব, সংবাদমাধ্যমের অফিসসহ দেশে সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।