বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় গ্যাস ও জ্বালানি আমদানি করতে না পারায় দেশে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। শিল্পকারখানাগুলোতে চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। এ অবস্থায় অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক করাটা সরকারের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। সে জন্য গ্যাস ও জ্বালানির সরবরাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্যাসের বকেয়া বিল।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) জ্বালানি খাতের প্রতিবেদকদের সঙ্গে বুধবার এক মতবিনিময় সভায় জানিয়েছে, গত আগস্ট মাস পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাসের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে পাওনা ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর সরকারি সার কারখানায় গ্যাস বিল পাওনা ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
দেশে কয়েক মাস ধরেই গ্যাস-সংকট চলছে। সংকট মোকাবিলায় খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যাচ্ছে, দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট হলেও এখন গ্যাস সরবরাহ নেমে এসেছে ২৭৮ কোটি ঘনফুটে। আগের সপ্তাহে সরবরাহের পরিমাণ ছিল ২৫০ কোটি ঘনফুট। ফলে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও শিল্পকারখানা ও বাসায় গ্যাসের সরবরাহ তেমন বাড়েনি। এতে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ধরে রাখা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাসায় রান্নার কাজেও গ্যাস ঠিকমতো পাচ্ছেন না রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের গ্রাহকেরা।
সরকারি সংস্থায় গ্যাস, বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ না করার একটা রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এই সংস্কৃতির অবসান হওয়া প্রয়োজন। সরকারি সংস্থার কাছ থেকে বকেয়া বিল আদায়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করছে পেট্রোবাংলা। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ নেবে। বেসরকারি খাত, বিশেষ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে কেন এতটা পাওনা বকেয়া পড়ল, সেটা তদন্ত করে বের করা প্রয়োজন।
বিগত সরকারের আমলে কতগুলো গোষ্ঠীর স্বার্থে ভাড়াকেন্দ্রিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে যেভাবে ব্যবসা করার জন্য প্রতিযোগিতাহীন সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল, সেটা আখেরে সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হয়েছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে কীভাবে গ্যাসের বকেয়া বিল আদায় করা যায়, তা নিয়েও শক্ত ও যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
গ্যাস ও জ্বালানি তেল বিক্রির অর্থ দিয়ে পেট্রোবাংলাকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, পরিশোধন ও বাজারজাতকরণের কাজ করতে হয়। বিপুল অঙ্কের বকেয়া বিল সংস্থাটির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। এ ছাড়া অবৈধ সংযোগ ও গ্যাস চুরির কারণেও বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অপচয় হয়। সৎ গ্রাহকেরা তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হন। গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিকভাবেই সিস্টেম লস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে যেকোনো মূল্যেই গ্যাস চুরি বন্ধ করতে হবে।
বিগত সরকারের আমলে নেওয়া শুধু আমদানিনির্ভর জ্বালানি নীতি দেশকে কতটা সংকটে ফেলতে পারে, গত তিন বছর তার প্রমাণ আমরা দেখেছি। ফলে জাতীয় স্বার্থকে কেন্দ্রে রেখে জ্বালানি নীতি ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। পুরোনো কূপের সংস্কার এবং স্থল ও সমুদ্রে নতুন কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান বাড়াতেই হবে।