২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সরকারি নিরাপদ আবাসনের বিকল্প নেই

সম্পাদকীয়

একটা সময় দেশে বড় বড় যৌনপল্লি থাকলেও কালের পরিক্রমায় নানা বাস্তবতায় বেশির ভাগই হারিয়ে গেছে। কয়েকটির অস্তিত্ব টিকে আছে, তার মধ্যে দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লিটি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় অবস্থিত।

যৌনপল্লিতে জন্ম নেওয়া কন্যাশিশুদেরও অনেকের সেই কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। যৌনপল্লির নারীদের দুরবস্থা নিয়ে কমবেশি আলোচনা সব সময়ই হয়।

কিন্তু সেখানে জন্ম নেওয়া শিশুদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটা অমীমাংসিতই থেকে যায়। শুধু কন্যাশিশু নয়, ছেলেশিশুরাও এখানে বড় হয়ে ওঠে অনিরাপদভাবে। রাষ্ট্র ও সরকারের যথেষ্ট করণীয় থাকলেও তা অনুপস্থিত। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দৌলতদিয়ার যৌনপল্লিতে মায়েদের সঙ্গে বসবাস করছে তিন শতাধিক কন্যাশিশু। যৌনপল্লির পরিবেশ নানাভাবে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, এসব কন্যাশিশু সহজেই যৌন পেশায় জড়িয়ে পড়তে পারে বা যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে।

এখন তাদের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতির আয়োজনে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লিতে বেড়ে ওঠা কন্যাশিশুদের নিয়ে এমন বাস্তবতা উঠে আসে। সরকারি কর্মকর্তারা তাঁদের নিজ নিজ জায়গা থেকে পল্লির অসহায় শিশু ও নারীদের সাহায্যার্থে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী চার বছরের অধিক বয়সী কোনো শিশু যৌনপল্লির ভেতর অবস্থান করতে পারবে না। তার মানে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লিতে সুস্পষ্টভাবে আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে। কিন্তু আইন প্রণয়নকারীরা কি এটি ভেবেছেন, এসব শিশু কোথায় থাকবে তাহলে? এ ছাড়া চার বছরের অধিক বয়সী শিশুরা মাকে ছাড়া থাকবেই বা কীভাবে? শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ আবাস হচ্ছে তার মায়ের কোল। ফলে শিশুকে তার মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলাটা অমানবিকই। যৌনপল্লির এ কঠিন বাস্তবতায় বেসরকারি সংস্থাগুলো দাতাদের সহযোগিতায় কিছু শিশুর জন্য তুলনামূলক নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা তৈরি করেছে ঠিকই, কিন্তু তা সাময়িক। দাতাদের অর্থসহায়তা শেষ হয়ে গেলে এসব শিশুকে নিয়ে তখন আবারও শঙ্কা তৈরি হবে।

বেসরকারি সংগঠনগুলোর একটাই দাবি, সরকারকেই কোনো উদ্যোগ নিতে হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গোটা দেশে শিশু পরিবার গড়ে তুলে অভিভাবকহীন অসংখ্য শিশুর জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করেছে, যদিও সেগুলোর কার্যক্রম নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে।

তাহলে যৌনপল্লির এসব শিশুর দায়িত্ব কেন সরকার নেবে না? সরকার আইন করে মায়ের সঙ্গেও থাকতে দেবে না, আবার দায়িত্বও নেবে না, তা কী করে হয়? আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারকদের দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা উচিত।