আর কত মৃত্যু, আর কত নাশকতা

সম্পাদকীয়

রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনে আগুনে পুড়ে চারজনের মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মবিদারক। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা ও সম্পদ ধ্বংস করার কাজ যারা করছে, তাদের ধিক্কার জানাই। নির্বাচন কিংবা রাজনীতির নামে যদি নিরীহ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, তার চেয়ে নৃশংসতা আর কিছু হতে পারে না।

বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ঢাকায় আসছিল। কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর অল্প কিছুক্ষণ আগে রাত ৯টার দিকে ট্রেনটিতে আগুন লাগে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুন কয়েকটি বগিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী যে যাঁর মতো করে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে আসেন। ফায়ার সার্ভিসের এক বার্তায় বলা হয়, দুর্বৃত্তরা বেনাপোল এক্সপ্রেসের চারটি বগিতে আগুন দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ নিয়ে দেশে গত ২৮ অক্টোবরের পর ট্রেনে আগুন ও নাশকতার ঘটনায় মোট নয়জনের মৃত্যু হলো। গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সেই ঘটনায় মা-শিশুসহ চারজন মারা যান।

যে যাত্রীরা বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন, তাঁরা ঘুণাক্ষরেও কি ভাবতে পেরেছিলেন, এ রকম ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে! নির্বাচনের দুই দিন আগে খোদ রাজধানীতে ট্রেনে আগুন দেওয়া হবে! জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। বাসে-ট্রেনে একের পর এক নাশকতা ঘটার পরও সরকার যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কতটা সতর্ক ছিল?

নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‍্যাব ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারা দেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এটাই কি তার নমুনা? আর কত নিরীহ মানুষকে এভাবে আগুনে পুড়ে মরতে হবে?

বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) বলেছেন, বগির ভেতর থেকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ডিবিপ্রধান বলেছেন, ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি নেতা-কর্মীরা জড়িত এবং আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভিডিও কনফারেন্সে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিলেন বলেও তিনি দাবি করেন। আবার র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেছেন, নাশকতা হতে পারে, এ রকম তথ্য তঁাদের কাছে ছিল; কিন্তু কোথায় হবে, সেটা জানা ছিল না।

ডিবিপ্রধানের ভাষ্য অনুযায়ী, তঁারা যদি আগেই ভিডিও কনফারেন্সের কথা জেনে থাকেন, তখন গ্রেপ্তার করলেন না কেন? তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন দেওয়ার তিন সপ্তাহ পরও এর হোতাদের খুঁজে বের করতে না পারা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। আমরা চাই এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত হোক এবং এই ঘৃণ্য দুষ্কৃতকারীরা শাস্তি পাক। কিন্তু এই তদন্ত হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য।