২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হোক

সম্পাদকীয়

আজ বিজয়া দশমী। শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশের হিন্দুধর্মাবলম্বীরা শত শত বছর ধরে এ উৎসব উদ্‌যাপন করে আসছেন। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব হলেও সর্বজনীন রূপ পেয়েছে।

শারদীয় দুর্গোৎসবের দুটি দিক—ধর্মীয় ও সামাজিক। ধর্মীয় আচারাদির বিষয়টি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের নিজস্ব। কিন্তু সামাজিক উৎসব সবার জন্য অবারিত। পূজা উপলক্ষে আয়োজিত মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে সব ধর্মের মানুষ আসেন। দুর্গোৎসবের একটি অর্থনৈতিক দিকও আছে। পূজা সামনে রেখে সনাতন ধর্মের মানুষ নতুন পোশাক কেনেন।

পুরাণমতে, ‘দুর্গম’ নামের এক অসুর ছিলেন, যিনি জীবজগতে দুর্গতি সৃষ্টি করতেন। ভারতবর্ষে বাঙালি হিন্দুরা দুর্গাকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের দেবী হিসেবেও গণ্য করেন। ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ থেকে জানা যায় যে রামচন্দ্র রাবণবধের জন্য অকালে শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। তখন থেকে এর নাম অকালবোধন বা শারদীয় দুর্গাপূজা। শুক্লা-ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধন হয় এবং সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে (মহানবমী) পূজা দিয়ে দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

বঙ্গদেশে প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন করেন রাজশাহী জেলার তাহেরপুরের রাজা কংস নারায়ণ, মতান্তরে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। দুর্গা দেবীর মাতৃরূপ ও শক্তিরূপ বাঙালি হিন্দুমানসে আজও সমুজ্জ্বল। তিনি শুধু সৌন্দর্য-মমতা সৃজনের আধারই নন, অসহায় ও নিপীড়িতের আশ্রয়স্থল। তাঁর এক রূপ অসুরবিনাশী, আরেক রূপ মাতৃময়ী ভালোবাসার। শক্তি ও মমতার এ দুই গুণেই তিনি দেবকুলের কাছে পরম পূজনীয়। এবার দুর্গা এসেছিলেন দোলায় চড়ে, যাবেন ঘোড়ায় চড়ে।

শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু আরাধনার উপলক্ষ নয়, আনন্দ-মিলনেরও ক্ষেত্র। সেই আনন্দ ধর্ম-সম্প্রদায়ের গণ্ডি ছাপিয়ে সমাজের সবাইকে আবাহন করে। দুর্গোৎসব তাই হয়ে উঠেছে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বৃহৎ সামাজিক উৎসব। আবার স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তে মাঝেমধ্যে অঘটনও ঘটে।

গত আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের পর বেশ কিছু স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলো এগিয়ে আসায় পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসে। এই প্রেক্ষাপটে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নির্বিঘ্ন পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্‌যাপন করতে পেরেছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক ছিল। এটা অবশ্যই স্বস্তির দিক।

 রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যে কোনো বিভাজন ও বৈষম্য থাকতে পারে না। এটাই বাংলাদেশের আবহমান সমাজের ঐতিহ্য ও রীতি। দেশের সমৃদ্ধি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বার্থে সেই ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে।

সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা।