রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রশাসনে ভুল বার্তা দেবে 

সম্পাদকীয়

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে-কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে-কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, শাস্তি দেওয়ার ছয় মাস না যেতেই ‘নবীন কর্মকর্তা’ বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ক্ষমা (অব্যাহতি) পেয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুন্নেছা আক্তার।

নামজারি নিয়ে অনিয়মের কারণে ফয়জুন্নেছা আক্তারের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। বিধিমালা অনুযায়ী যথাযথভাবে সব বিধিগত প্রক্রিয়া শেষে তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দুই বছরের জন্য ‘বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ করে, অর্থাৎ ষষ্ঠ গ্রেডে ৩৫ হাজার ৫০০-৬৭ হাজার ১০ টাকা বেতন স্কেলের নিম্ন ধাপ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতনে অবনমিতকরণসূচক লঘুদণ্ড দেওয়া হয় ফয়জুন্নেছাকে।

১ আগস্ট জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ফয়জুন্নেছাকে দেওয়া লঘুদণ্ডাদেশ থেকে অব্যাহতির জন্য নির্ধারিত সময়ে আপিল করায় রাষ্ট্রপতি সদয় হয়ে আদেশ করেছেন, ‘আপিলকারী একজন নবীন কর্মকর্তা’। তাঁর চাকরির বয়স বিবেচনা করে তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতির প্রদান করা হলো।

ফয়জুন্নেছা আক্তার সরকারি চাকরিতে যোগ দেন ২০১৪ সালে। সে হিসাবে চাকরির ১০ বছর পরও তিনি ‘নবীন কর্মকর্তা’ থাকেন কী করে? এখানে আইনের অপব্যবহার হয়েছে কি না, সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দুই বছর কাজ করলে বা শিক্ষানবিশ হলে তাঁকে ‘নবীন কর্মকর্তা’ বলা যেতে পারে। ১০ বছর কর্মরত থাকার পর তাঁকে নবীন বলা যায় না।

এর আগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে হত্যা মামলার অনেক দণ্ডিত আসামিও ছাড়া পেয়ে গেছেন। বিদেশে পলাতক আসামিকে দেশে এনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার সুবিধা দেওয়ার উদাহরণও আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্বাহী বিভাগের সুপারিশেই এসব মন্দ নজির স্থাপন করা হয়েছে। এর পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। তবে কারাগারে কোনো ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হলে কিংবা বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়লে বিশেষ অনুকম্পা পেতে পারেন।

সরকারি কর্মকর্তা ফয়জুন্নেছা আক্তারের ক্ষমার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে শাস্তি হওয়ার পর একের পর এক কর্মকর্তা দণ্ড মওকুফ করিয়ে নিলে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে, প্রশাসনেও ভুল বার্তা যাবে।

পৃথিবীর সব দেশে রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমা করার ক্ষমতা নেই। আমাদের সংবিধানে আছে। এর অর্থ এই নয় যে এর যথেচ্ছ ব্যবহার চলতে থাকবে। দেশের মানুষ আশা করে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতার অপব্যবহার হবে না। জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চত করতে হলে ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ নীতি সমুন্নত রাখা প্রয়োজন। দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী যেকোনো উপায়ে শাস্তি থেকে রেহাই পেলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না।