আগের বিনিয়োগকারীরা কেন বঞ্চিত হবেন

সম্পাদকীয়

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যে বাড়িয়েছে, তা ভালো পদক্ষেপ বলেই মনে করি। অন্তত সঞ্চয়পত্রের আয় দিয়ে যাঁরা চলেন, তাঁদের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনে দেবে আশা করা যায়।

যখন ব্যাংকের সুদের হার নয়–ছয়ের মধ্যে সীমিত ছিল, তখনো সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ৯ থেকে ১১ শতাংশ কিংবা তার কিছুটা বেশি ছিল। সে সময় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনাও কম ছিল না। সরকারের পক্ষ থেকেও নানাভাবে সঞ্চয়পত্র কেনাকে নিরুৎসাহিত করা হতো। বর্তমানে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার অনেক বেশি। ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ১২ শতাংশ। এ অবস্থায় ১২ শতাংশের নিচে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।

এই প্রেক্ষাপটে সরকার যে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সঠিক। নতুন হারে কোনো সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১২ শতাংশের কম হবে না। তবে বিনিয়োগসীমার ভিত্তিতেও মুনাফার হারে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে এক রকম; আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে কম। অর্থাৎ স্বল্প বিনিয়োগকারীরা বেশি সুবিধা পাবেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবার সঞ্চয়পত্রে পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর এত দিন মুনাফার হার ছিল ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এখন করা হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। তবে বিনিয়োগের পরিমাণ সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি হলে মুনাফা হবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বাইরে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

১ জানুয়ারির আগে যাঁরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা আগের হারে মুনাফা পাবেন বলে সরকার জানিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বাকি মেয়াদে তঁারা যাতে নতুন হারে মুনাফা পেতে পারেন, সরকার সেই ব্যবস্থা করতে পারে।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেছেন, ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতের সুদের হারও এখন বেশি। তাই সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বৃদ্ধির বিষয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রাজস্ব আয় ভালো না থাকার কারণেও সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।

কারণ যা–ই থাকুক না কেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ানোয় আমানতকারীরা লাভবানই হবেন। কিন্তু এখানেও সরকার পেনশনারদের জন্য যে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে, সেটাও পক্ষপাতমূলক বলে মনে হয়। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেননি, এমন লাখ লাখ মানুষ সঞ্চয়পত্রের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাঁদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও পেনশনারদের সমান করা হলে বৈষম্যের প্রশ্ন উঠত না।

সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ালেও প্রবাসীদের জন্য যে তিনটি বিনিয়োগ বন্ড আছে, তার মুনাফার হার বাড়ানো হয়নি। এটা অযৌক্তিক ও অন্যায্য। সরকার যদি প্রবাসীদের কাছ থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ আশা করে, তাহলে এসব বন্ডের মুনাফার হারও যৌক্তিক হারে বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করতে আরও বেশি আগ্রহ দেখাবেন।