আশির দশকেও ঢাকা শহরে ছিল অন্তত দুই হাজার পুকুর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, দখলবাজি ও মানুষের পরিবেশবিষয়ক অসচেতনতার কারণে সেসব পুকুর হারিয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগেও এ শহরে পুকুর ছিল ১০০টি, সেই সংখ্যা এখন ৩০টির কম। ঢাকা শহরের যে ভয়াবহ দাবদাহ, তার অন্যতম কারণও জলাশয় কমে যাওয়া।
আর এর বিপদ আরও বেশি টের পাওয়া যায় বড় কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা ও গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে। যেমনটি এ বছর সিদ্দিকবাজার ও বঙ্গবাজারে আমরা দেখেছি। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার কোনোমতে টিকে থাকা পুকুরগুলো রক্ষার দাবি জোরালো হচ্ছে।
সেখানে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার শত বছরের পুরোনো ডিআইটি প্লট পুকুর দখল করতে উঠেপড়ে লেগেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তাঁর পরিবার। তঁাদের ক্ষমতাচর্চার কাছে এলাকাবাসী কোণঠাসা হয়ে আছেন। বিষয়টিতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
গেন্ডারিয়ার ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি নিয়ে আগেও প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। পুকুরটির মালিকানা নিয়ে আইনি জটিলতা আছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বক্তব্য, পুকুরটি তাদের অধিগ্রহণ করা জায়গায় পড়েছে।
অন্যদিকে পুরোনো দলিলের মাধ্যমে জলাশয়টির মালিকানা দাবি করছেন এক ব্যক্তি। সেই ব্যক্তি থেকে ভাড়া নিয়ে সাবেক কমিশনার (ওয়ার্ড কাউন্সিলর) সাইদুর রহমান ওরফে সহিদ পুকুর ভরাট ও দখল করছেন। সেখানে বর্তমান কাউন্সিলর তাঁর মেয়ে সাহানা আক্তার। কাউন্সিলর কার্যালয়ও করা হয়েছে পুকুরটি ভরাট করে।
পুকুর রক্ষার দাবিতে গত শুক্রবার সকালে পুকুরের চারপাশে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। মানববন্ধনে অংশ নিতে আয়োজক ও পরিবেশকর্মী ও সংগঠকেরা উপস্থিতও হন। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় মানববন্ধনটি হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, পরিবেশ রক্ষায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের জন্য কেন পুলিশ অনুমতি দেবে না।
অথচ ওই সময় কাউন্সিলর কার্যালয়ে কয়েক শ মানুষ জড়ো করে রীতিমতো শোডাউন চালানো হয়, যাঁরা সহিদ ও সাহানার নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাঁদের আপ্যায়নের জন্য পুকুরপাড়ে কাউন্সিলর কার্যালয়ের রাস্তায় তেহারি রান্নার আয়োজনও করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, জড়ো হওয়া এসব লোক বাইরে থেকে ডেকে আনা হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, পুকুর ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রমালিকানাধীন যা-ই হোক, একমাত্র রাষ্ট্রের কাজে ব্যবহার ছাড়া সেই পুকুর ভরাট করা যাবে না। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হয়েও সাহানা ও তাঁর বাবা পুকুরটি ভোগদখল করছেন।
তাঁদের ক্ষমতাচর্চার কাছে এলাকাবাসী অসহায়। দুঃখজনক হচ্ছে, প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতাও তাঁরা পাচ্ছেন না। জলাশয় রক্ষায় যেখানে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, সেখানে একজন জনপ্রতিনিধি ও তাঁর বাবা এমন দখলবাজি চালাচ্ছেন, ক্ষমতা প্রদর্শন করছেন, তঁাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
অতিসত্বর এ পুকুর দখলমুক্ত করে এলাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। এ ব্যাপারে আমরা রাজউক ও জেলা প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চাই।