দেশে পাবলিক লাইব্রেরি বা গণপাঠাগারের ঐতিহ্য আগের মতো নেই বললেই চলে। একসময় শহর এলাকা বা মফস্সলে গণপাঠাগার মানেই ছিল জ্ঞানচর্চা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। গণপাঠাগারের সেই ‘সুদিন’ এখন না থাকলেও কিছু এলাকায় এখনো এর রেশ থেকে গেছে। যেমন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা। কিন্তু সেখানকার গণপাঠাগারটিও প্রশাসনের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এখন হুমকির মুখে।
রায়পুর শহরের উপজেলা পরিষদ সড়কে সরকারি জমিতে ২০২২ সালে গণপাঠাগারের জন্য একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা দিয়ে পাঠাগার ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাস।
প্রায় ৯০০ বর্গফুট জমিতে গড়ে তোলা ভবনে পাঁচ হাজার বই দিয়ে ২০২৩ সালে পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হয়। উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন শতাধিক পাঠক পাঠাগারে বই পড়তে আসতেন। পাঠাগার পরিচালনার দায়িত্বে একজন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু এক মাস ধরে পাঠাগারটি বন্ধ। সব বইও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পাঠাগারটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান বলেন, লাইব্রেরিটি নিচতলায় ছিল। তা এখন দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর হবে। নিচতলা ভাড়ার টাকা দিয়ে লাইব্রেরি পরিচালনার খরচ বহন করা হবে। কিন্তু আমরা জানতে পারছি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রায়পুর শহরে নির্মাণ করা হয় চারটি দোকান, যেসব দোকানের ভাড়া থেকে পাওয়া টাকায় পাঠাগারের পরিচালনা ব্যয় মেটানোর কথা। এমনকি আগের ইউএনও বদলি হওয়ার সময় পাঠাগারটির জন্য ছয় লাখ টাকা তহবিলেও রেখে গেছেন। এরপরও পাঠাগারটিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ প্রয়োজন পড়ল কেন? বর্তমান ইউএনও বলছেন, আগে নির্মাণ করা দোকানগুলো ভাড়া হয়নি।
পাঠাগারটিতে এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা গাজী মাহমুদ কামালের বক্তব্য, ‘লাইব্রেরিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা খুবই হঠকারী এবং দুঃখজনক সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর ৪০টি দেশের লাইব্রেরিতে আমি গিয়েছি। কোথাও লাইব্রেরির ভেতরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখিনি।’ উপজেলার কয়েকজন শিক্ষকসহ স্থানীয় সুধীমহলও গণপাঠাগারকে তছনছ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। তাদের মতে, গণপাঠাগারের জায়গায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হলে পাঠের পরিবেশ নষ্ট হবে।
এখন প্রশ্ন আগের নির্মাণ করা দোকানগুলো কেন ভাড়া দেওয়া গেল না?
আর পাঠাগার দ্বিতল ভবন করতে সমস্যা নেই; কিন্তু সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে বরং একটি ছোট মিলনায়তন হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আয়োজন, দিবস পালন বা আলোচনা অনুষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম অর্থমূল্যে সেটি ভাড়া দেওয়া যেতে পারে। সেই টাকা পাঠাগারের তহবিলেই যুক্ত হবে। আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি সুবিবেচনা করবে।