জলাবায়ু পরিবর্তনের বড় শিকার বাংলাদেশ, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল তহবিলও আমরা পেয়ে চলেছি। কিন্তু সেই তহবিল কোথায় কী কাজে লাগছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কী ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে আলোচনা হওয়া জরুরি।
এ তহবিলের প্রায় চার কোটি টাকায় ১০ বছর আগে দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেন (উদ্ভিদ উদ্যান) গড়ে তোলা হয়েছিল। সেই উদ্যান কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত থাকতে থাকতে এখন ধ্বংসের পথে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
কক্সবাজার শহর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলার রাজারকুল বনাঞ্চলে ৬৫ একর জায়গা নিয়ে ২০১৩ সালে এই উদ্যান গড়ে তোলা হয়। তৎকালীন পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের জন্য উন্মুক্তও করে দেওয়া হয়।
শুরুর কয়েক বছর দর্শনার্থীদের পদচারণ থাকলেও এ উদ্যান নিয়ে হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফুলের বাগান, শৌচাগার, বসার ঘর, পানি সরবরাহের লাইন, হ্রদ, কাঠের সেতুসহ নানা অবকাঠামো অযত্ন–অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর ভেতরে থাকা বৈলাম, বাটনা, গর্জন, সোনালুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও উদ্ভিদ উজাড় হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এই উদ্যানের গুরুত্ব কোথায় থাকল।
এত টাকা খরচ করে ও ঘটা করে এ উদ্যান চালু করা হলো কিন্তু প্রতিষ্ঠার এত বছরেও এটি সরকারি গেজেটভুক্ত হয়নি। বন বিভাগের নথিতেও বোটানিক্যাল গার্ডেনের অস্তিত্ব নেই। ফলে কোনো জনবল নিয়োগ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় এ উদ্যানের এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
উদ্যান করা হয়েছে, অথচ একজন মালিও নেই। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক টাকাও পাওয়া যায়নি। তবে একটি বিষয় সেখানে ঘটেছে, আশপাশের বন্য হাতির নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র ও খাবার সংস্থানের জায়গা হয়েছে এ উদ্যান।
উদ্যানের বর্তমান চেহারা বলছে, কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া এটি গড়ে তোলা হয়েছে। কিছু একটা করতে হবে বা জলবায়ু তহবিলের অর্থ খরচ করতে হবে, তাই যেন এ উদ্যান করা। স্থানীয় সুধী সমাজের আক্ষেপ, জলবায়ু তহবিলের বিপুল অঙ্কের টাকা জনগণের কোনো কাজে আসেনি।
এখন উদ্যান–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য, ২৫০ একর বনভূমি নিয়ে মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের আদলে রামুর এ উদ্যান গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে। এখন সেই পরিকল্পনা যেন আলোর মুখ দেখে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। নয়তো অহেতুক আরও বিপুল অর্থ নষ্ট না করে বন্য হাতিদের নিরাপদ বিচরণের জন্যই এ উদ্যান ছেড়ে দেওয়াটা শ্রেয় হবে।