ঠিকাদারেরা এই দুঃসাহস পান কীভাবে?

সম্পাদকীয়

কয়েক দিন আগে সরকারদলীয় একজন সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের চেয়ার-টেবিল, এমনকি বাতাসও ঘুষ খায় বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি কথাটি বলেছিলেন, ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন নিয়ে।

কিন্তু এবারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভিন্ন কারণে শিরোনাম হয়েছে। আড়াই হাজার কোটি টাকার কাজ না পেয়ে প্রকল্পের পরিচালকের ওপর চড়াও হয়েছেন একদল ঠিকাদার, যাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির সমর্থকও আছেন।

মিলেমিশে তাঁরা ঠিকাদারি করেন। প্রকল্প পরিচালক ঠিকাদারদের আবদার রক্ষা না করায় তাঁরা এবার মিলেমিশে তাঁকে মারধর করেছেন, টেবিলের কাচ ভেঙে ফেলেছেন।

প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী দায়িত্ব নেওয়ার পর অসৎ ব্যক্তিরা অন্যায় সুবিধা নিতে না পেরে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এজাহারে আরও বলা হয়, গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিটি করপোরেশনের লাইসেন্সধারী ১৫ থেকে ২০ জন ঠিকাদার প্রধান কার্যালয়ের চারতলায় অবস্থিত প্রকল্প পরিচালকের কক্ষের সামনে জড়ো হন।

তাঁরা কক্ষে প্রবেশ করে প্রকল্প পরিচালককে কটাক্ষ করেন। হঠাৎ কংকন, ফেরদৌস ও সুভাষ মিলে প্রকল্প পরিচালকের শার্টের কলার ধরে ঘুষি দেন। তাঁরা তাঁর শার্ট টেনে ছিঁড়ে ফেলেন, প্যান্টের বেল্ট খুলে ফেলেন। সাহাবুদ্দিন তাঁর শার্টের ভেতর থেকে রড বের করে টেবিলের কাচ ভাঙচুর করেন। তিনি প্রকল্প পরিচালকের মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অফিস সহায়ক তিলক সিংহ তা ঠেকিয়ে দেন।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, কাজ না পেয়ে প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানীকে গত রোববার বিকেলে নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে তাঁর কক্ষে ঢুকে মারধর করেন একদল ঠিকাদার। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল দপ্তর থেকে জানা যায়, হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বিএনপির সমর্থক ঠিকাদার।

হামলায় অংশ নিয়েছেন অন্তত ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ আওয়ামী লীগের সমর্থক ঠিকাদারও আছেন। হামলায় অংশ নেওয়া সঞ্জয় ভৌমিক ওরফে কংকন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক। আর ফেরদৌস, সুভাষ ও হাবিব আওয়ামী লীগের সমর্থক।

সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’। আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় গত বছরের ৪ জানুয়ারি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীকে গত বছরের ১৪ আগস্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৩৭টি ভাগে (লটে) ২২০ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল গত নভেম্বরে।

প্রকল্পের আওতায় ওভারপাস, রাস্তা, পদচারী-সেতু, কালভার্ট নির্মাণ, গোলচত্বরসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হবে। আগে দুই প্রকল্প পরিচালকের কাছ থেকে নয়ছয় করে ঠিকাদারেরা কাজ বাগিয়ে নিয়েছিলেনন বলে অভিযোগ আছে।

প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারদের সখ্যের কথাই আমরা এত দিন জেনে এসেছি। আর এই সখ্য গড়ে ওঠে অসাধু পথে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী যদি সেই অসাধু চক্র ভেঙে দিয়ে নিয়মরীতি অনুযায়ী ঠিকাদারদের কাজ দেন, তাঁকে আমরা ধন্যবাদ জানাব।

সরকার ও সিটি করপোরেশনের উচিত, তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে যেই ঠিকাদারেরা মিলেমিশে মারধর করেছেন, তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। তিন ঠিকাদারকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদেরও পাকড়াও করা হোক। ঠিকাদারদের মিলেমিশে মারধর করার এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করতেই হবে।