দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়

২০২৩ সালে স্বাস্থ্যসেবা সূচকে বাংলাদেশ ৯৪টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে শেষে অবস্থান করলেও স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখ করার মতো কিছু অগ্রগতিও আছে। নিশ্চিত করেই এর মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি সবার আগে উল্লেখ করা যাবে। কিন্তু কুকুর, বিড়াল কিংবা বাঁদর, শিয়ালের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হয়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার দিক বাংলাদেশ এখনো বিশ্বে তৃতীয়।

এর বড় একটা কারণ অবশ্যই মানুষের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি। সেই সঙ্গে এটাও অনস্বীকার্য যে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধী টিকা সহজে না মেলার কারণেও অনেকে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণ টিকা না পাওয়া গেলে সেটা নিম্নবিত্ত ও সাধারণ মানুষের জন্য বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে গত ১৫ জুলাই থেকে জলাতঙ্কের টিকা সরবরাহ বন্ধ। এতে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাঁদের বাজারের ওষুধের দোকান থেকে টিকা কিনে আনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জলাতঙ্ক প্রতিরোধে দুই ধরনের টিকা দেওয়া হয়। কুকুর, বিড়াল, শিয়ালের কামড়ে ক্ষত গভীর ও রক্ত গড়িয়ে পড়লে এআরভি (অ্যান্টির‌্যাবিস ভ্যাকসিন) ও আরআইজি (র‌্যাবিস ইমিউনো গ্লুবুটিন) টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া লেহন, আঁচড় বা ঘর্ষণের জন্য এআরভি টিকা দিলেই হয়। এর মধ্যে এআরভি টিকা সরবরাহ এক মাস ধরে বন্ধ।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানাচ্ছে, প্রতি মাসে জলাতঙ্ক রোগের টিকার চাহিদা গড়ে ৪৫০ ভায়েল, যা ১ হাজার ৮০০ রোগীকে বিনা মূল্যে প্রদান করা যায়। কিন্তু রোগীদের এখন বাজার থেকে টিকা কিনে নিতে হচ্ছে। বাজারে প্রতি ভায়েল টিকার দাম ৫০০ টাকা। এক ভায়েলের ওষুধ চারজনের শরীরে দেওয়া যায়। এ কারণে চারজন জোগাড় না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের হাসপাতালে গিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এটিকে হাসপাতালে দালাল চক্র সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। তাদের খপ্পরে পড়ে টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের ভোগান্তি আরও বাড়ছে।

হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানিয়েছেন। কবে টিকা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকার এমন সংকট মোটেই কাম্য নয়। আমরা আশা করি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গড়িমসি না করে দ্রুত টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে এবং বিনা মূল্যে টিকার সরবরাহ পর্যাপ্ত করা গেলে জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।