করোনা মহামারি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর। একটি টেকসই স্বাস্থ্যকাঠামো গড়ে তুলতে না পারার ব্যর্থতাও প্রকাশ হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অনিয়ম তো আছেই।
করোনা মহামারির সময় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) চরম সংকটের বিষয়টি মানুষ নিশ্চয়ই এখনো ভুলে যায়নি। এখনো জরুরি মুহূর্তে মানুষ আইসিইউর জন্য বিভাগীয় শহর ও রাজধানী শহরের জন্য নির্ভরশীল। জেলায় জেলায় হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি। করোনা মহামারি আমরা পার হয়ে এসেছি।
কিন্তু জামালপুরে জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আমাদের অবাক হতে হয়। সেখানে আট বছর আগে আইসিইউ উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত তা চালু হয়নি। অথচ সব ধরনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও সেখানে আছে। অথচ অসংখ্য মুমূর্ষু রোগী আইসিইউ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি আইসিইউ উদ্বোধন করেন। কিন্তু জনবল না থাকায় ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৭৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন।
আইসিইউ চালু না করার কারণে সংকটাপন্ন রোগীদের ঢাকা ও ময়মনসিংহের হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। সেখানে পৌঁছানোর আগেই অনেক রোগী পথে মারা যান। জামালপুরে আইসিইউটি চালু থাকলে তাদের অনেককে হয়তো বাঁচানো যেত। এসব রোগীর মৃত্যুর দায় কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায় না?
হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন সদস্য জানাচ্ছেন, জনবলসংকট, সিদ্ধান্তহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে আইসিইউ চালু হচ্ছে না। আইসিইউতে থাকা কোটি কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যাচ্ছে। উদ্বোধনের পর থেকে আইসিইউ কক্ষটি তালাবদ্ধ রয়েছে।
আইসিইউ চালুর জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানসহ ১০ জন লোক প্রয়োজন ছিল, দুঃখজনক হচ্ছে, এত বছরেও তা নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকসহ অন্যদের কক্ষের সংকটও আছে। কথা হচ্ছে, এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে কি আট বছর লাগার কথা?
জামালপুর জেলায় ২৬ লাখ মানুষের বসবাস। কিন্তু উদ্বোধনের পর এক দিনের জন্যও কোনো মানুষ সেখানকার আইসিইউ সেবা পায়নি। এর চেয়ে হতাশাজনক আর কী আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু চিঠি দিয়ে গেল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। এর বাইরে তাদের কিছুই করার ছিল না?
আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও এতবার চিঠি পেয়ে কোনো গুরুত্বই দিল না! এটি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। যন্ত্রপাতি কেনাকাটা শেষ বলে কি আইসিইউ ইউনিটটি চালুর ব্যাপারে কারও কোনো আগ্রহ থাকবে না? আমরা চাই, জনবল নিয়োগসহ অন্যান্য সমস্যা মিটিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউটি চালু করা হোক।