দাবি আদায়ে সচিবালয় ঘেরাও নয়

সম্পাদকীয়

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের দাবিদাওয়া আদায়ের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আছে। কোনো সরকারের আমলে যেমন সেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি রহিত হওয়া উচিত নয়, তেমনি আন্দোলনের নামে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত হয়, এমন পরিস্থিতিও তৈরি করা যাবে না।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। সচিবালয়কে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা হিসেবেই গণ্য করা হয়। সড়কের ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য নয়। দাবিদাওয়া আদায় করতে গিয়ে আনসার সদস্যরা সচিবালয় ঘেরাও করলে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে পৌনে চার শ আনসার সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরপর সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের (যমুনা) আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

এই প্রেক্ষাপটে প্রথম আলো পাঠকদের কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘বর্তমান সময়ে দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি সমর্থন করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে ৯৩ শতাংশ মানুষ ‘না’ বলেছেন। অর্থাৎ বর্তমানে দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি তাঁরা সমর্থন করেন না। জরিপে ‘না’ ভোট পড়েছে ৪৩ হাজার ৯৭৬টি। জরিপে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ২ হাজার ৫৯৮টি। ফেসবুকে পরিচালিত এ জরিপে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। গত ২৬ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে জনমত জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এতে অংশ নিয়েছেন ৪৭ হাজার ৪৪৪ জন।

সাধারণত জরিপে যে সংখ্যক লোকের মতামত নেওয়া হয়, প্রথম আলোর জরিপে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মতামত দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে এতে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেছে ধরে নেওয়া যায়। উল্লেখ্য, গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রতিদিন বিভিন্ন পক্ষ দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পাশাপাশি রাজধানীর শাহবাগ, প্রেসক্লাব ও সচিবালয় এলাকায়ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলতে থাকে।

গত ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ–কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন।’

তাঁর ভাষণে আন্দোলনকারীদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ১৬ বছর ধরে জমে থাকা দুঃখ–কষ্ট লাঘবে সরকারকে কিছুটা সময় দেওয়ার কথা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, নিয়মতান্ত্রিক পথেই দাবিদাওয়ার কথা জানাতে হবে। এটা হতে পারে স্মারকলিপি পেশ কিংবা নির্দিষ্ট স্থানে সভা–সমাবেশের মাধ্যমে। কোনোভাবেই জনপরিসর বন্ধ করে নয়। কোনো জনগোষ্ঠীর দাবি যত ন্যায্য হোক না কেন, তা আদায়ের জন্য অন্যদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করা কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।