প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ—এমন মোহনীয় বর্ণনার সঙ্গে কে না পরিচিত। দেশের খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও দেশের আরও জায়গায় বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল দেশের সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম আধার। কিন্তু সেসব প্রাকৃতিক বন দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
দখল, বৃক্ষনিধন, পাহাড় কাটা তো আছেই; সামাজিক বনায়নের নামে বিদেশি গাছ লাগিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি করা হচ্ছে বনগুলোর। যেমনটি আমরা দেখছি টাঙ্গাইলের মধুপুর ও সখীপুর উপজেলায়। সেখানকার প্রাকৃতিক বন হারিয়ে যেতে যেতে এমন অবস্থা হয়েছে যে বোঝার উপায় নেই, কয়েক দশক আগেও সেখানে শাল–গজারির নৈসর্গিক এক পরিবেশ ছিল।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মধুপুরে বর্তমানে মোট বনাঞ্চলের ১৫ ভাগেরও কম এলাকায় প্রাকৃতিক বন টিকে রয়েছে। বনভূমির অনেক এলাকা দখল হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে বসতি। অনেক এলাকাজুড়ে চাষ হচ্ছে কলা–আনারসসহ বিভিন্ন ফলের। বন বিভাগ দখল হওয়া বনভূমি প্রতিবছর উদ্ধার করলেও সামাজিক বনায়নের নামে সেখানে লাগানো হচ্ছে বিদেশি প্রজাতির গাছ।
অথচ গত কয়েক বছরে সরকারের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ঔষধি, বনজ, ফলদ বা দেশি গাছ লাগানোর জন্য অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কিন্তু সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। দ্রুতবর্ধনশীল ও অল্প সময়ে কাঠ সংগ্রহের মাধ্যমে অংশীদারদের অর্থ উপার্জনে বিদেশি গাছ সহায়তা করে ঠিকই, কিন্তু সেখানে আর বন টেকে না। ফলে প্রাকৃতিক বন দিন দিন সংকুচিত হতে হতে এখন শেষ পর্যায়ে।
মধুপুরের অনেক জায়গায় এখন প্রাকৃতিক বনের অস্তিত্বই পাওয়া যায় না। কিছুদূর পরপর গ্রামীণ ছোট ছোট বাজার। মানুষের বাড়িঘরে ভরা পুরো এলাকা। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটা কোনো বনভূমি। দেশের অন্যান্য এলাকার গ্রামের মতোই একেকটি গ্রাম। যেখানে পাকা রাস্তা, বিদ্যুতের লাইন—সব রয়েছে। বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান—সব চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘আগে পুরো এলাকা ছিল গজারি বন। দেখতে দেখতে বন উজাড় হয়ে গেল। এখন বনও নাই, বন্য প্রাণী নাই। আস্তে আস্তে বন শহর হইয়া যাইতাছে।’
একইভাবে সখীপুর উপজেলায় দেখা যাচ্ছে, বনের জমি দখল করে পাকা বাড়ি বা বসতি নির্মাণ করছেন স্থানীয় অনেক বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে এ বাড়িগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। আর এতে সহযোগিতা করছে স্থানীয় একটি দালাল চক্র।
এভাবে মধুপুর অঞ্চল প্রাকৃতিক বনশূন্য হয়ে যাচ্ছে, সেটি নিয়ে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। আদৌ কি সেটা হবে?