দেশে স্বাস্থ্য অবকাঠামো অপ্রয়োজনে পড়ে থাকার নজির কম নয়। চালু করতে দেরি হওয়ায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অবহেলার কারণে নতুন ভবন পড়ে থাকতে থাকতে সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে, এমন ঘটনাও আছে। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্ষেত্রেও আমরা দেখছি, নতুন ভবন তৈরি হয়ে গেলেও সেটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানকার বাস্তবতা যদিও ভিন্ন। স্থানীয় মানুষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না। এতে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, ২০১৮ সালে পদ্মার ভাঙনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনতলা একটি ভবন নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বাকি সব কটি ভবনও ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন এক বছর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এরপর ওই স্থান থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। উপজেলা সদরে ছয় একর জমির ওপর নতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। চারতলাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন, চিকিৎসক ডরমিটরি, নার্স ডরমিটরি, স্টাফ কোয়ার্টার, বিদ্যুতের সাবস্টেশন, গ্যারেজসহ আটটি ভবন নির্মাণ করতে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া ছয় একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছে আরও ২৩ কোটি টাকা। গত জুনে নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
১ সেপ্টেম্বর ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালু করার কথা ছিল। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থানান্তরে বাধার সৃষ্টি করেন। তাঁরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এরপর ১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে রিট করেন একজন বাসিন্দা। এখন উচ্চ আদালত ছয় মাসের জন্য ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থানান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করার আদেশ দিয়েছেন। এর পর থেকে নতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালুর উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। পুরোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মালামালও স্থানান্তর করা যাচ্ছে না।
এখন পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সীমিত পরিসরে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম চলছে। রিট আবেদনকারী ব্যক্তির বক্তব্য, ৬২ বছরের পুরোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এটি। ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঘিরে এলাকার মানুষের অনেক অবদান ও আবেগময় স্মৃতি রয়েছে। তাঁরা চান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সংস্কার করে আগের জায়গায় রাখা হোক। এ কারণে তিনি আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জনের বক্তব্য, আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্ পরান বলেন, ‘আমরা পুরো ঘটনাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরের আইন শাখাকে অবহিত করেছি। তারা বিষয়টি আইনগতভাবে দেখছে। উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থার কার্যকারিতা শেষ হলে নতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালু করা হবে।’
এখন নতুন একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা নিয়ে পড়ে থাকতে পারে না। আমরা আশা করব, আইনিভাবে দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনোযোগী হবে।