প্রমাণিত হলো আমাদের কৃষকেরা পারেন

সম্পাদকীয়

অনেক হতাশার মধ্যেও পেঁয়াজের ভালো ফলন আশাব্যঞ্জক ঘটনা। বছর দুই ধরে বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় এখন আর ভারত কিংবা অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ নতুন করে আমদানি করতে হচ্ছে না। এতে প্রমাণিত হয়েছে, প্রয়োজনীয় সহায়তা-সমর্থন থাকলে আমাদের কৃষকেরাও পারেন। পেঁয়াজচাষিদের অভিনন্দন জানাই।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত কয়েক বছরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি মাঝেমধ্যেই অনিশ্চয়তায় পড়ায় বাংলাদেশ পেঁয়াজ চাষে বেশি গুরুত্ব দেয়। কৃষিবিশ্লেষকেরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরাও পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টন। এর আগের বছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ৩৪ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ টন।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকের আগ্রহের কারণেই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টনের বেশি। যেভাবে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, তাতে এবারও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই সময়ে কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য সরকার আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমদানি বন্ধের পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলোও কাটাতে হবে। ন্যায্য দাম পেলে উৎপাদকেরা আরও বেশি উৎপাদন করতে আগ্রহী হবেন।

স্থানীয় উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের বাজারে একধরনের স্থিতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। গত বছরের এ সময়ে দেশীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বাড়লেও সার্বিক বিবেচনায় এটাকে যৌক্তিকই বলতে হবে। দাম কিছুটা না বাড়লে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠে আসবে না।

যেকোনো ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। পেঁয়াজের আমদানি নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। যখন বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম ছিল, তখন ভারত, মিয়ানমার, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হতো। ২০১৯ সালে উৎপাদন কম হয়েছে—এই অজুহাত দেখিয়ে ভারত আকস্মিকভাবে রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে দারুণ অস্থিরতা দেখা যায়।

বাজারে প্রতি কেজির দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। এই প্রেক্ষাপটে এবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলেই বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায় আমাদের কৃষকদের লোকসান গুনতে হতো।

আমরা যদি দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারি, কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন। পেঁয়াজ চাষের এই সাফল্য ধরে রাখতে হলে সরকারের সহায়তা-সমর্থন বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে কৃষকদের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণে আমাদের কৃষিজমি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। ফলে কোনো বিশেষ কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ালে অন্যান্য পণ্যের জন্য নির্ধারিত জমি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় এক ইঞ্চি কৃষিজমিও যাতে বেহাত না হয়, সে জন্য সরকারকে সজাগ থাকতে হবে।