ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন জরুরি

সম্পাদকীয়

বড়দিন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীগুলোর কিছু অংশ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। এর মধ্যে আছেন বান্দরবানের লামার সরইয়ের ত্রিপুরাপল্লির বাসিন্দারাও। পাড়াটির মানুষগুলো যখন বড়দিন উদ্‌যাপনের জন্য গির্জায় ছিলেন, তখন তাঁদের ঘরবাড়ি সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বড়দিনে এর চেয়ে নির্মম ঘটনা আর কী হতে পারে। আমরা তাঁদের প্রতি এমন অন্যায় কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই।

এ ঘটনায় সামনে এসেছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের নাম। যাঁর বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘুদের অনেক জায়গাজমি দখল ও জোর করে কিনে নেওয়ার অভিযোগ আছে। পাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) পাইসাপ্রু ত্রিপুরার অভিযোগ, সাবেক আইজিপির নামে জায়গা দখলদার চক্রই পাড়ায় আগুন লাগিয়েছে। দখলকৃত জমি দেখভালকারী মো. ইব্রাহিম প্রায়ই ওই পাড়ায় যেতেন। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় অনেকেই ঘোরাফেরা করতেন। গত নভেম্বরে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে হুমকি দেওয়া হয়েছে পাড়াবাসীকে।

এখন পর্যন্ত ত্রিপুরাপল্লিটি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন স্টিফেন ত্রিপুরা, মশৈনিয়া ত্রিপুরা, যোয়াকিম ত্রিপুরা ও মো. ইব্রাহিম। এর মধ্যে মো. ইব্রাহিম বেনজীর আহমেদের নামে দখল করা জমির দেখভাল করতেন বলে জানা যাচ্ছে। অন্যরা ছিলেন তাঁর স্থানীয় সহযোগী।

মৌজার দায়িত্বপ্রাপ্ত হেডম্যান বলছেন, বান্দরবান সদর উপজেলায় সাবেক আইজিপি বেনজীর ও তাঁর পরিবারের নামে দখল হওয়া ২৫ একর জমি গত ৪ জুলাই জেলা প্রশাসন জিম্মায় নেয়। ওই সময় বেনজীরের নামে জমি দখলদারেরা পূর্ব বেতছড়ার দখল করা জমি ফেলে চলে যায়। জমি দখলমুক্ত হওয়ার পর সেখানে পাড়া স্থাপন করা হয়। তবে আইজিপি বা অন্য কারও নামে ওই এলাকায় কোনো জমি ইজারা নেওয়া হয়নি। কারও মালিকানাও নেই। তবে পুলিশ সুপারের বক্তব্য, চাঁদা দাবি ও জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে সাবেক আইজিপির জমি দখল নিয়ে জনশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি।

বেনজীরের নাম ও প্রভাবের বিষয়টি যেহেতু সেখানে একপ্রকার প্রতিষ্ঠিত, ফলে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের উচিত হবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা।

পাড়াটিতে ১৯টি পরিবার থাকত। ১৭টি পরিবারের ঘরবাড়ি সবকিছু পুড়ে গেছে। কোনো জিনিসপত্রই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আরেক পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, তেল, অন্যান্য সামগ্রী ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আমরা আশা করব, প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণেও সহায়তা করবে। ত্রিপুরাপল্লিটি কোনোভাবেই উচ্ছেদ হোক, আমরা চাই
না। যেভাবেই হোক, পাড়াটিকে যেকোনো ভূমিদস্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।