ঢাকা শহরের জনসংখ্যা দুই কোটির অধিক। সে তুলনায় এ শহরে গণশৌচাগারের সংখ্যা প্রায় ২০০। জনসংখ্যার অনুপাতে গণশৌচাগারের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য বললে ভুল হবে না। যেসব গণশৌচাগার আছে, সেগুলোও নাগরিকবান্ধব নয়। ফলে নাগরিক চাহিদার গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় একটি অনুষঙ্গ চরমভাবে অবহেলিত। একই কারণে উপেক্ষিত হচ্ছে জনস্বাস্থ্যও। এটি শুধু ঢাকা শহরের সমস্যা নয়, দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় এই নাগরিক অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট।
সম্প্রতি প্রথম আলোর কার্যালয়ে এ–সংক্রান্ত একটি গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে নাগরিকবান্ধব করতে হলে শৌচাগারকে সেবা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এখানে সমস্যাগুলো সহজ কিন্তু তা সমাধান জটিল হয়ে রয়েছে। এখন সুযোগ এসেছে সমস্যাগুলো ধরে ধরে তা সমাধানে দ্রুত কাজ করা। শৌচাগার পরিচালনায় দুর্বৃত্তায়ন উৎখাত করতে হবে জানিয়ে তাঁরা আরও বলেন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার কোন বিভাগ কীভাবে কাজ করবে, সেটা ঠিক করতে হবে। সব কাজের জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সেবামূলক এ কাজে স্থানীয় কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, উন্নয়ন সংস্থা ভূমিজ ও প্রথম আলোর উদ্যোগে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান। এতে উঠে আসে নারীদের শৌচাগার ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি। অথচ শহরগুলোতে বিপুলসংখ্যক নারী নানা কাজে ঘরের বাইরে থাকেন। কিন্তু শৌচাগার ব্যবহারে তাঁদের যে জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়, তা খুবই অমানবিক।
আলোচনায় উঠে আসে, নাগরিকবান্ধব গণশৌচাগার গড়ে না ওঠার পেছনে বড় একটি কারণ নগরজুড়ে স্যানিটেশন-বিষয়ক কোনো সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) না থাকা। ইজারা দিয়ে এটিকে শুধু রাজস্ব আদায়ের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর চেয়ে এটাকে সেবা হিসেবে দেখা যেতে পারে এবং কোন বিভাগ দেখবে, তা নির্ধারণ করা জরুরি। ইজারার কারণে অনেক সময় পার্কের ফটক বা শৌচাগারের ফটক বন্ধ রাখা হয়। এগুলো উন্মুক্ত থাকা উচিত। ইজারা নেওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বা ক্ষমতাচর্চার কারণে এ গুরুত্বপূর্ণ সেবা চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়। ফলে শৌচাগার ব্যবস্থাপনায় আরও তদারকি প্রয়োজন। এখানে স্থানীয় জনসমাজ বা কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এ ছাড়া শৌচাগার নির্মাণের ক্ষেত্রে চাহিদা বিবেচনা করে স্থান নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। অনেক গণশৌচাগার গড়ে তোলা হয়েছে এমন স্থানে, যা মানুষ খুঁজে পায় না বা ওই এলাকায় যে এমন একটি সুবিধা আছে, তা মানুষ জানতেই পারে না।
এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো তৈরি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, শৌচাগার উপকরণ, যথা সাবান-টিস্যু—এগুলো রাখা এবং গণশৌচাগার ব্যবহার করতে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে।