জনসচেতনতা বাড়াতে হবে

সম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকে দেশে প্রাণিচিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের কারণে এক ধাক্কায় হুমকির মুখে পড়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাখি শকুন। গোটা পৃথিবীতে শকুনের ১৮টি প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশেই সাতটির অস্তিত্ব ছিল। সেই শকুন এখন মহাবিপন্ন। সম্প্রতি মৌলভীবাজারে একসঙ্গে ১৪টি শকুনের মৃত্যুর বিষয়টি আরও বেশি উদ্বেগ তৈরি করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। একটি পরিবারের বিষ মাখানো মৃত ছাগল খেয়ে কয়েকটি শিয়াল ও কুকুর মারা যায়।

সেই শিয়াল ও কুকুরের মরদেহ খেয়ে শকুনগুলোর মৃত্যু হয়। বন বিভাগ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন সূত্রে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই পরিবারের দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বন বিভাগ। যদিও উদ্ধারের পরও শকুনগুলোর মৃতদেহ পরীক্ষা করা নিয়ে যে জটিলতা আমরা দেখছি, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।

গত এক যুগে একসঙ্গে এতগুলো শকুনের মৃত্যুর ঘটনা দেশে ঘটেনি। গত বছরের আগস্টে একসঙ্গে পাঁচটি শকুন মারা যায়। এর আগে বিশ্বে একসঙ্গে এর চেয়ে বেশি শকুনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে নেপালে। গত বছরের জুলাই মাসে দেশটিতে একসঙ্গে ৭০টি শকুন মারা যায়। ২০১৫–১৬ সালের গণনা অনুযায়ী, দেশে শকুনের সংখ্যা ২৬০। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলে ছিল ৮০টি।

এ ঘটনার পরপর এ সংখ্যা আরও কমে গেল। তবে আইইউসিএনের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রধান সারোয়ার আলম বলছেন, ‘বন বিভাগ ও আইইউসিএনের নেওয়া উদ্যোগে বিলুপ্তির পথে থাকা এ প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছিল। আর সিলেট এলাকাতেই তা বাড়তে দেখা যাচ্ছিল।’ কিন্তু সেই এলাকাতেই এতগুলো শকুনের মৃত্যু নিঃসন্দেহে বড় একটি ঘটনা।

শকুন মৃত প্রাণীর দেহ থেকে পরিবেশে জীবাণু ছড়িয়ে যাওয়া ঠেকিয়ে দেয়। শকুনের পাকস্থলী এমন সব জীবাণু সহজেই ধ্বংস করতে সক্ষম, যা অন্য কোনো প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয়। যার কারণে শকুনকে দেখা হয় প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

খাদ্যসংকট, বনাঞ্চল উজাড়, শতবর্ষী বড় গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে নিরাপদ আবাসস্থল ও প্রজননে ব্যাঘাত ঘটার ফলে শকুন কমে যাওয়ার বড় কারণ।

শকুন বৃদ্ধির ব্যাপারে বন বিভাগ, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, আইইউসিএনকে আরও বেশি সচেষ্ট হতে হবে। আর যাতে কোনো শকুন এভাবে মারা না যায়, সে জন্য জরুরি পদক্ষেপ ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।