মুঠোফোনের ইন্টারনেটের প্যাকেজের ধরন ও দামে পরিবর্তন আনায় গ্রাহকদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের গ্রাহকেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিটিআরসির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে টেলিফোন কোম্পানিগুলো গত মাসে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে দেয়। এরপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে দাম কিছুটা কমানো হলেও প্যাকেজ আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়নি।
প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, মোবাইলের ডেটা প্যাকেজ নিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর নতুন একটি নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে বিটিআরসি। এতে ডেটার ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদি প্যাকেজ বন্ধ, প্যাকেজের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪০টি নির্ধারণ করে তা ১৫ অক্টোবর থেকে মোবাইল অপারেটরদের কার্যকর করতে বলা হয়। গত বছর ৩, ৭, ১৫, ৩০ ও আনলিমিটেড মেয়াদে মোবাইল অপারেটরদের জন্য সর্বোচ্চ ৯৫টি ডেটা প্যাকেজ নির্ধারণ করে দিয়েছিল সংস্থাটি।
বিটিআরসির নির্দেশে অপারেটরগুলো গত ১৫ অক্টোবর ৩ ও ১৫ দিনের মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ বাদ দেয়। থেকে যায় শুধু ৭ দিন, ৩০ দিন ও অনির্দিষ্ট মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ। এরপর অপারেটররা উল্লিখিত প্যাকেজের দাম বাড়িয়ে দেয়। ১ জিবি ৭ দিন মেয়াদি প্যাকেজের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৯ টাকা। আগে ছিল ৪৬ টাকা।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, ৬৯ শতাংশ গ্রাহকই তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন। যাঁদের একবারে সাত দিনের প্যাকেজ কেনার সামর্থ্য নেই, বিটিআরসির সিদ্ধান্তের ফলে তাঁরাই বেশি বিপদে পড়েছেন। এ ছাড়া বাড়ি বা কর্মস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকার পরও অনেকে বাইরে স্বল্পমেয়াদি ডেটা ব্যবহার করেন। মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেছেন, আর্থিক কারণে যাঁরা কম মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাক ব্যবহার করেন, প্যাকেজের ধরন পাল্টানোয় তাঁদের ওপর প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। অনেক ইন্টারনেট গ্রাহক ঝরে পড়তে পারেন।
গ্রাহকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে বিটিআরসির পক্ষ থেকে অপারেটরদের কাছে পাঠানো চিঠিতে তিন দিন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম ও পরিমাণ (ভলিউম) অপরিবর্তিত রেখে শুধু মেয়াদ বাড়িয়ে সাত দিন করার কথা বলা হয়। অর্থাৎ মেয়াদ বাড়ানো হলেও প্যাকেজের দাম বাড়ানো যাবে না।
২০২৩ সালের ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহার জরিপ ২০২৩’ জরিপ বলছে, দেশের ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ খানায় ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২২ সালে এ হার ছিল ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ খানায়। সে ক্ষেত্রে তিন দিনের স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ না থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহারের এ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ারও আশঙ্কা আছে।
বিটিআরসি বলেছে, স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজে প্রতারণা ও ডেটা ব্যবহার না হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সে ক্ষেত্রে তাদের উচিত ছিল প্রতারণা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। সেই পথে না গিয়ে বিটিআরসি যা করেছে, তা মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার শামিল।
আমাদের প্রশ্ন, মুঠোফোনের ইন্টারনেটের প্যাকেজ নিয়ে এ পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন? গ্রাহকদের সেবা দিয়ে থাকে মুঠোফোন কোম্পানিগুলো। তাদের কেউ প্যাকেজ কমানোর আবদার করেনি। তাহলে কি ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছাতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার নির্বাচনের পর প্যাকেজের দাম বাড়ানোর যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা-ও যৌক্তিক নয়। ইন্টারনেট প্যাকেজের মতো অতি জরুরি সেবাকেও নির্বাচনী রাজনীতির বিষয় করা কোনোভাবে ঠিক নয়।
মুঠোফোনের ইন্টারনেট প্যাকেজ পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক।