গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে গোটা দেশে অস্ত্রধারীরা মাঠে নেমেছিল। পতিত শক্তির রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে ভারী অস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করে। তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হলেও অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। চট্টগ্রামে বেশির ভাগ অস্ত্রধারীই গ্রেপ্তার হয়নি। উদ্ধার হয়নি কোনো অস্ত্রও। বিষয়টি চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলার জন্য উদ্বেগের।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বছরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুলি চালানো অস্ত্রধারীদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-পুলিশ। তবে তাদের ব্যবহৃত কোনো অস্ত্রই উদ্ধার করা যায়নি। পুলিশ বলছে, অস্ত্রধারীদের সবাই যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মী। প্রদর্শিত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে পিস্তল, শটগান ও কাটা বন্দুক।
মোট কতজন অবৈধ অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামেন, তা শনাক্ত করার কাজ চলছে। আন্দোলনে গুলি ও হামলায় নগরে ১০ জন নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক মানুষ। এসব ঘটনায় ৮২টি মামলা হয়েছে। প্রায় আট মাস হয়ে গেলেও এখনো অস্ত্রধারীদের শনাক্তই করা যায়নি, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শনাক্তই যদি করা না যায়, তাহলে অস্ত্রধারীদের কীভাবে গ্রেপ্তার করা যাবে এবং ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা যাবে?
প্রকাশ্য অস্ত্রধারী গ্রেপ্তার না হওয়া এবং অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়। স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তেমনটিই অভিযোগ করেছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারও বলছে একই কথা। যেমন নগরের মুরাদপুরে গত বছরের ১৮ জুলাই গুলিতে নিহত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। তাঁর ভগ্নিপতি দীপক মিস্ত্রি বলেন, ‘কাদের হাতে অস্ত্র ছিল, পুরো দেশবাসী বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছে। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
নগরের মুরাদপুর, ষোলশহর, বহদ্দারহাট, নিউমার্কেট মোড়, সিটি কলেজ রোড, জামালখান, আসকার দিঘির পাড় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনে কারা গুলি চালিয়েছে, কারা অস্ত্রধারীদের নেতৃত্ব দিয়েছে, এসবের ভিডিও ফুটেজ এখন সর্বত্র পাওয়া যায়। এসব অস্ত্রধারী তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, জামাল খান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. এসরালসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের অনুসারী বলে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নাজুক, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার ভয় কাটাতে অবশ্যই এসব অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। উদ্ধার করতে হবে অস্ত্রও। এটিও অনস্বীকার্য যে জুলাই গণহত্যার বিচারের জন্য অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আশা করি, চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে আরও বেশি সক্রিয় হবে এবং নিজেদের তৎপরতা বাড়াবে।