সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

এবার বন্যা ছিল না, বড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে গেছে বোরো ফসল। প্রচণ্ড দাবদাহেও এবারের বোরো ধানের ফলন বেশ ভালো। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এতে কৃষকেরা খুশি। কিন্তু সেই খুশি আবার মিলিয়ে যেতেও দেরি হয় না, যখন ধানের ভালো দাম পান না তাঁরা। বিশেষ করে সরকারের চাল সংগ্রহে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে ভুগতে হয় কৃষকদের।

চাল সংগ্রহ নিয়ে সিন্ডিকেট করা দেশে নতুন কিছু নয়। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি কুষ্টিয়ায়। দেশের চালের অন্যতম বাজার এ জেলা। সেখান থেকে সরকার হাজার হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করে। সেখানে চাল সংগ্রহে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও ভাইয়ের প্রভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন চাল সরবরাহকারী অন্য মিলমালিকেরা। বিষয়টি নিয়ে সেখানে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কুষ্টিয়া জেলা থেকে এবার বোরো মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তর মিলমালিকদের কাছ থেকে ৩৮ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনার চুক্তি করেছে। ১৮৫ মিলমালিক চুক্তি করেছেন চাল সরবরাহের।

৭ জুন চাল কেনা কার্যক্রম শুরু হয়। তবে চুক্তি অনুযায়ী যথাসময়ে চাল সরবরাহকারীরা শর্ত পূরণ করে নিয়ম অনুসারে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। তবে আবেদনকারী ১৯ মিলমালিককে বঞ্চিত করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওমর ফারুক, তাঁর তিন ভাই ও ঘনিষ্ঠদের প্রতিষ্ঠানকে সেই চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বঞ্চিত মিলারদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক প্রভাব খাটিয়ে খাদ্য কর্মকর্তাদের ‘কমিশন দিয়ে ম্যানেজ করে’ তাঁদের নয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ করিয়েছেন। অন্য মিলমালিকেরা সব ধরনের শর্ত পূরণ করেও কোনো বরাদ্দ পাননি। অন্যদিকে ওমর ফারুকের বক্তব্য, এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন বলছেন, প্রত্যেকের আবেদন তিনি আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু সেখান থেকে মাত্র নয়জনকে বরাদ্দ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এখানে অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট। নয়তো শুধু আওয়ামী লীগ নেতা, তাঁর ভাইয়েরা ও ঘনিষ্ঠরাই কেবল এ বরাদ্দ পেলেন কীভাবে? বিষয়টি নিয়ে মিলমালিকদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১৫ জন নেতা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে যান। সেখানে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডাও হয়।

তাঁরা বিষয়টি সমাধানের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অতীতের মতো জেলা প্রশাসক বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। আমরা আশা করব, চাল সরবরাহে আওয়ামী লীগ নেতার এ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে। এই অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসের কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে তঁাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।