দেশের বনভূমিগুলো নানা কারণে দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। এমনকি দেখা যাচ্ছে, সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ও নির্মাণকাজে খুব সহজ ও নামমাত্র মূল্যে বনাঞ্চল দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর মানুষের বসতি বৃদ্ধির বিষয় তো আছেই। এখন বন্য প্রাণী কী করে বাঁচবে? একে তো তাদের নিরাপদ আবাস ধ্বংস হচ্ছে, এরপর তারা সহজে পাচারকারীদের শিকার হয়ে পড়ছে। পাচারকারীদের জন্য বাংলাদেশ যেন নিরাপদ স্বর্গ হয়ে উঠছে, নয়তো ১৩টি জেলায় প্রকাশ্যে কী করে বন্য প্রাণী বেচাকেনা চলে। সেখান থেকে বন্য প্রাণী ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এনে আকাশপথ বা সমুদ্রপথে বাইরে পাচার করা হয়। মাঝেমধ্যে দু–একজন পাচারকারী ধরা পড়লেও অধিকাংশই বা গোটা চক্রই অধরা থেকে যাচ্ছে।
বন্য প্রাণী বিক্রি ও পাচারের এ বিষয়টি উঠে এসেছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত এক গবেষণায়। বন্য প্রাণী বেচাকেনা চলা জেলাগুলো হচ্ছে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রাঙামাটি, কক্সবাজার, বান্দরবান ও গাজীপুর। বনাঞ্চলগুলোর আশপাশের বসতি ও গ্রামগুলোতে প্রকাশ্যে ও গোপনে বন্য প্রাণীর বাজার বেচাকেনা হয়। বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকলে সেটি কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। আরও দুঃখজনক হচ্ছে, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে এতগুলো নিরাপত্তা চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার হয় বন্য প্রাণী। শর্ষেখেতের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে না থাকলে কি সেটি কোনোভাবে সম্ভব? এমনকি ঢাকায় বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও মোংলায় সমুদ্রবন্দরের আশপাশেও বন্য প্রাণীর যে বেচাকেনা চলে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানে না, সেটি কি কোনোভাবে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
গবেষক ও বন বিভাগের কর্মীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বন্য প্রাণী শিকার ও পাচারের হার বেড়ে গেছে। উদ্বেগজনক হচ্ছে, যে প্রাণী যত বেশি বিপন্ন, কালোবাজারে সেটির দাম তত বেশি। এভাবে চলতে থাকলে বিপন্ন বন্য প্রাণীরা এ অঞ্চল থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না। কয়েক দিন আগে বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবসের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে পারছি, বিশ্বে কচ্ছপের অবৈধ বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানিকারক হিসেবে দশম এবং হাঙরের পাখনা রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ১২তম। আমাদের জন্য এটি কি লজ্জাজনক নয়?
বাংলাদেশ বন্য প্রাণী রক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে চুক্তি অনুযায়ী কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। এখন বনাঞ্চল রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে সেদিকে মনোযোগী হতে হবে। শিকারি ও পাচারকারী চক্রকে ধরতে বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করা হোক।