প্রায় এক মাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে কাল রোববার। এর আগে ৭ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিলেও নানা কারণে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করা যায়নি। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর ক্ষেত্রে সমস্যা হলো সরকার পরিবর্তনের পর এর পদাধিকারীদের পদত্যাগ। বিশেষ করে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য, সহ–উপাচার্যসহ শীর্ষ পর্যায়ে পদত্যাগের ঘটনা নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত ১৯ জন উপাচার্য, ১১ জন সহ-উপাচার্য এবং ৫ জন কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে ১৬ জনের পদত্যাগপত্র ইতিমধ্যে গৃহীত হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে। দেশে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে ৫৫টি।
এসব শূন্য পদ এত স্বল্প সময়ে পূরণ করা কঠিন। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেশির ভাগই রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। এত দিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। তাঁদের শূন্যস্থানে বিএনপির সমর্থকেরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগে যে দলীয়করণ ও পক্ষপাতের অভিযোগ ছিল, তার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
সমস্যা আছে শিক্ষার্থীদের হলে আসন নিয়েও। এত দিন সরকার–সমর্থক ছাত্রসংগঠনটির একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল; যার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, প্রশাসনিক এসব পদে নতুনদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, কলেজ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও যথাক্রমে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক পদে রদবদলের ঘটনা ঘটছে। স্বেচ্ছায় কেউ পদত্যাগ করলে সমস্যা নেই। কিন্তু যদি গায়ের জোরে কাউকে পদে বসানো কিংবা পদ থেকে সরানো হয়, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
বিগত সরকারের আমলে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনটি সর্বত্র দখলবাজি করেছে। সরকার পরিবর্তনের পর তাদের নেতা–কর্মীরা পলাতক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর দল–মতনির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনকে শতভাগ নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্য আমাদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করে। তিনি বলেছেন, ‘গত ১৬ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন, কথা বলার অধিকার হরণ, দুর্নীতি-নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে—এগুলোর বিরুদ্ধেই ছিল আমাদের অভ্যুত্থান। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চেয়েছি, যেখানে সবাই সবার কথা বলতে পারবে, মতপ্রকাশ করতে পারবে, যে যে ধারায় বিশ্বাসী, সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে—এই স্বাধীনতাগুলো থাকবে।’
ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে যদি অপরাধ করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে কারও আপত্তি থাকবে না। কিন্তু ছাত্রলীগ করছেন, এই ধারণা থেকে কাউকে নাজেহাল বা হয়রানি করা হবে না, সেই নিশ্চয়তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই দিতে হবে। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদেরও দায়িত্ব আছে। তঁাদের নাম ভাঙিয়ে কেউ যাতে ক্যাম্পাসে অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে। তাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন, সেই জয় ধরে রাখতেও শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করি।
আশা করি, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একযোগে কাজ করবেন।