গত এক দশকে রেল যোগাযোগে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে। অনেক মহা প্রকল্পও বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু মানুষ একসময় যেভাবে রেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং এর ওপর আস্থা রাখত, তা কতটা অক্ষুণ্ন আছে? সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নের কারণেও সেদিকে মানুষ অনেকখানি হয়তো ঝুঁকেছে, কিন্তু ট্রেনের ওপর আস্থার বিষয়টা তো ঘাটতি থেকেই গেল। ঘন ঘন লাইনচ্যুতি ও শিডিউল বিপর্যয় এখানে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রশ্ন হলো, নীতিনির্ধারকেরা এ বিষয়ে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন।
যোগাযোগ ও পরিবহনব্যবস্থার সুযোগ–সুবিধায় রংপুর অঞ্চল এখনো অনেক পিছিয়ে। বাড়তি পথ ঘুরে অধিক সময় ব্যয় হলেও ঢাকায় আসতে সেখানকার মানুষ মোটাদাগে এখনো রেলের ওপর নির্ভরশীল কিন্তু লাইনচ্যুতি ও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। ঢাকা–সান্তাহার–লালমনিরহাট রেলপথের কথা আলাদাভাবে বলতে হয়। গত এক মাসে এ রেলপথে চারটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছেন যাত্রীরা। এমন পরিস্থিতিতে রেলপথটিতে চলাচলকারী সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে।
এ রেললাইনের বড় একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠী সেটির সুবিধাভোগী। সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলপথে আটটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। সেখানকার জেলাগুলোতে সাধারণ মানুষ ছাড়াও সরকারি–বেসরকারি চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ভরসার জায়গা এসব ট্রেন। একবার কোনো লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটলে গোটা রেলপথে স্থবিরতা নেমে আসে। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। বিশেষ করে কর্মস্থলগামী ও কর্মস্থল ফেরার সময় ভোগান্তির শেষ থাকে না তখন।
সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তারা বলছেন, রেললাইনের ত্রুটি, পুরোনো স্লিপার, ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগিতে ত্রুটি, নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে ট্রেন চালানো, ভারী বৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে রেলপথ দেবে যাওয়ার কারণে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। ব্রিটিশ আমলে করা রেলপথগুলোর সংস্কার দরকার। কোনো কোনো ট্রেনের কোচগুলো ব্রিটিশ আমলের। সেগুলো পাল্টানো দরকার। তাঁরা আশা প্রকাশ করছেন, দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুসারে এ রেললাইনে উন্নয়ন করা হবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বাতিল করায় রেলের ভাড়া আরেক দফা বেড়েছে। অর্থাৎ এখন যাত্রীদের বাড়তি ভাড়াও দিতে হবে। কিন্তু যাত্রীসেবা কি সে অনুপাতে বেড়েছে? নতুন নতুন রেলপথ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেখানেও চাহিদানুসারে পর্যাপ্ত ট্রেন দিতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আবার যে রেলপথে এতগুলো ট্রেন চলাচল করে, সেখানেও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলপথের দ্রুত সংস্কার করা হবে। আধুনিক কোচ ও ইঞ্জিন যুক্ত করে সেখানে রেলসেবায় আরও গতি আনা হোক।