সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের কাছ থেকে সেখানকার কর্মীদের ‘বকশিশ’ নেওয়ার চল এতটাই সর্বজনগ্রাহ্য প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে যে এটি কার্যত সেবাগ্রহীতাদের অবশ্যপ্রদেয় বিষয়ের মর্যাদা লাভ করেছে। এটি সর্বজনবিদিত যে কোনো কোনো হাসপাতালের কিছু কর্মী সেবা দেওয়ার পর রোগী বা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে বকশিশ চেয়ে নেন। আবার কোথাও কোথাও সেবা দেওয়ার আগেই জবরদস্তিমূলকভাবে অগ্রিম বকশিশ আদায় করা হয়। কোনো রোগী বা রোগীর স্বজন যদি তা দিতে অস্বীকার বা অপারগতা প্রকাশ করেন, তাহলে তাঁকে অশেষ হয়রানির শিকার হতে হয়। টাকা দিতে না পারলে বকশিশ শিকারি কর্মীর হাতে যে রোগীর জীবনও চলে যেতে পারে। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তেমনটিই দেখা গেল। সেখানে গত মঙ্গলবার রাতে দাবি অনুযায়ী বকশিশ না দেওয়ায় আসাদুজ্জামান নামের একজন কর্মী এক রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেন এবং তাতে রোগীর মৃত্যু ঘটে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাইবান্ধার হতদরিদ্র একটি পরিবারের একটি কিশোর সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে তাকে জরুরি ভিত্তিতে এই হাসপাতালে আনা হয়। দ্রুত অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে ট্রলিতে তুলে ট্রলি ঠেলে তাকে তৃতীয় তলায় নেওয়া হয়। ঠেলে নেওয়ার কাজে সহায়তা দিয়েছিলেন হাসপাতালের খণ্ডকালীন কর্মী আসাদুজ্জামান। তিনি ট্রলি ঠেলে ২০০ টাকা বকশিশ দাবি করলে আহত কিশোরের হতদরিদ্র
বাবা তাঁকে ১৫০ টাকা দেন। দাবির পুরো টাকা না পেয়ে আসাদুজ্জামান অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলেন। এতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই কিশোর মারা যায়। ঘটনার পর আসাদুজ্জামান পলাতক ছিলেন। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
একজন গুরুতর আহত মানুষের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেললে যে তার মৃত্যু হতে পারে, তা একজন হাসপাতালকর্মীর না বোঝার কোনো কারণ নেই। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এটি হত্যাকাণ্ডের শামিল। প্রশ্ন হলো, দাবি করা টাকা থেকে ৫০ টাকা কম পাওয়ায় আসাদুজ্জামান কেন এমন ক্ষিপ্ত হলেন? এর সম্ভাব্য জবাব হলো, দীর্ঘদিন ধরে বকশিশ এভাবে আদায় করতে করতে আসাদুজ্জামান এবং তঁার মতো হাসপাতাল কর্মীদের মধ্য এই বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে যে এটি তঁার অবশ্যপ্রাপ্য টাকা। এই টাকা দিতে রোগীর স্বজনেরা বাধ্য।
গ্রেপ্তার আসাদুজ্জামানের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করে এবং দেশের সব সরকারি হাসপাতালে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে ‘বকশিশখোর’ কর্মীদের অবশ্যপ্রাপ্যতার চিন্তা থেকে বের করে আনতে হবে। নইলে এমন কাণ্ড আরও ঘটার সুযোগ থেকে যাবে।