দেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ও উন্নতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বিশেষ করে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের ভুক্তভোগী হচ্ছেন নারীরা।
উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত—সবখানেই বেড়েছে বিচ্ছেদের হার। ভুক্তভোগীরা আদালতে শরণাপন্ন হওয়ার কারণে বাড়ছে মামলার জট। পারিবারিক বিভক্তি তৈরি হওয়া থেকে শুরু করে সামাজিকভাবে এর নানা নেতিবাচক প্রভাবও লক্ষণীয়। এমন পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জের এক বিচারক অসাধারণ ভূমিকা রাখলেন। আপসের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করে সংসার জোড়া লাগিয়ে দিয়ে ৪৫ দম্পতির মুখে হাসি ফোটালেন তিনি।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, যৌতুক, নির্যাতনসহ ছোটখাটো পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে স্বামীদের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক মামলা করেছিলেন ভুক্তভোগী ৪৫ নারী। ফলে তাঁদের অনেকেই স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবাসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সংসারে বিভেদ তৈরি হওয়া, সন্তানের দেখভাল নিয়ে নানা জটিলতায় পড়েছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে অনেক স্বামী নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেও মামলার কারণে বিষয়টি সুরাহা হচ্ছিল না। সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে তাঁদের ‘ভাঙা’ সংসার জোড়া লাগানোর উদ্যোগ নেন। আপসে নিষ্পত্তি হওয়ায় মামলার দায় থেকে আসামিদেরও অব্যাহতি দেন তিনি।
মামলার নিষ্পত্তিতে বিচারক সেসব দম্পতিকে কিছু শর্ত দেন। যার মধ্যে আছে স্বামী-স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা, স্বামী-স্ত্রী এক অপরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া; মনোমালিন্য, বিরোধ দেখা দিলে নিজেরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা, স্ত্রীকে নির্যাতন না করা, যৌতুক না চাওয়া। এসব শর্ত মানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দম্পতিরা হাসিমুখে আদালত থেকে ঘরে ফিরে যান। এর আগে তাঁদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়, দেওয়া হয় মিষ্টি উপহারও। এতে আদালত প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য আইনজীবী কানিজ সুলতানা বলেন, আদালতের এমন উদ্যোগে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিচারক মো. জাকির হোসেন এর আগে আরও দুবার এভাবে উদ্যোগ নিয়ে শতাধিক দম্পতির সংসার জোড়া লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
আদালতের এ রায়ের ফলে আইন ও বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে বলে আমরা মনে করি। সুনামগঞ্জের বিচারক মো. জাকির হোসেনকে অভিবাদন। এমন রায় অন্যান্য জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জন্য অনুসরণীয় হোক।