২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেল

সম্পাদকীয়

যে দেশে আইন না মানাই রেওয়াজ হয়ে পড়েছে, সে দেশে আইন বাস্তবায়ন যে সহজ নয়, বিজ্ঞাপনমুক্ত (ক্লিন ফিড) বিদেশি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রচারে বাধাই তার প্রমাণ। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার কেব্‌ল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন প্রণয়ন করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর তৈরি করে বিধিমালা। কিন্তু এত বছরেও সেটি কার্যকর করা যায়নি কেব্‌ল অপারেটর ও পরিবেশকদের গোঁয়ার্তুমির কারণে। ১ অক্টোবর থেকে সরকার আইনটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়ার পর তাঁরা বিজ্ঞাপন ছাড়া, বিজ্ঞাপনসহ সব ধরনের বিদেশি চ্যানেলেরই সম্প্রচার বন্ধ করে দেন। এটা কার্যত সরকার ও দর্শকদের ওপর একটি চাপ প্রয়োগের কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।

কেব্‌ল অপারেটররা আইন অগ্রাহ্য করে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি টিভি অনুষ্ঠান প্রচার করে যাচ্ছেন। এতে তাঁদের পকেটে টাকা এলেও কর ফাঁকির কারণে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো, বিনোদনশিল্প ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পী, কলাকুশলী ও বিজ্ঞাপনদাতারা। তঁারা দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ ও তা বিজ্ঞাপনমুক্ত করে প্রচারের দাবি জানিয়ে আসছেন। দেরিতে হলেও সরকার আইন কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং সরকারের এ অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই।

ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর সব দেশেই বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেল দেখানো হয়। আমাদের এখানে এত দিন বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি টিভি চ্যানেলে দেখানো হতো কেব্‌ল অপারেটর ও পরিবেশকদের অন্যায় আবদার মেনে নিয়ে। উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকারের বর্তমান উদ্যোগের পর কেব্‌ল অপারেটর ও পরিবেশকেরা আলোচনার পথে না গিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ১ অক্টোবর থেকে সব বিদেশি চ্যানেলে প্রচার বন্ধ করে দেন। পরে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের হুঁশিয়ারিতে বিজ্ঞাপনমুক্ত চ্যানেলগুলো দেখানো শুরু করে, যা মূলত সংবাদভিত্তিক। কিন্তু অনুষ্ঠানভিত্তিক জনপ্রিয় চ্যানেলগুলো এখনো দেখানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না।

কেব্‌ল অপারেটর ও পরিবেশকদের এ অবস্থান কেবল অনৈতিক নয়, বেআইনিও। বিজ্ঞাপনমুক্ত অনুষ্ঠান প্রচার না করার পক্ষে তঁারা যেসব যুক্তি দিয়েছেন, তা-ও ধোপে টেকে না। বিদেশি চ্যানেলগুলো থেকে বিজ্ঞাপনমুক্ত ফিড নিয়ে এবং ডিজিটাল কেব্‌ল নেটওয়ার্ক সিস্টেম গড়ে তোলার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। যেখানে দেশে কেব্‌ল টিভির বাজার ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি, সেখানে কেব্‌ল অপারেটর ও পরিবেশকেরা বিনিয়োগ করে এটি ডিজিটাল করবেন না কেন? এত দিন তাঁরা প্রায় বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা আয় কমে যাওয়ার যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা অমূলক। সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক সিস্টেম গড়ে তুললে কেব্‌ল অপারেটরদের কর ফাঁকির সুযোগ থাকবে না। কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই কি অ্যানালগ পদ্ধতি ধরে রাখার পণ করেছেন কেব্‌ল অপারেটররা?

আমরা আশা করব, অপারেটর ও পরিবেশকেরা অবিলম্বে আইন মেনে তাঁদের সব বিদেশি টিভি চ্যানেল দেখানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং পুরো সিস্টেম ডিজিটালাইজড করার পথ ধরবেন। এ কাজে যে যুক্তিসংগত সময় লাগে, সে পর্যন্ত সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দর্শকেরা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করতে প্রস্তুত আছেন। তাঁদের ন্যায়সংগত কোনো দাবি থাকলে তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু আইনবহির্ভূতভাবে দিনের পর দিন তাঁরা ব্যবসা করে যাবেন ও দর্শক ও সরকারকে জিম্মি করবেন—এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আশা করব বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেলের ব্যাপারে সরকার যে অবস্থান নিয়েছে, সে ব্যাপারে অটল থাকবে এবং কোনো ধরনের অন্যায় ও অন্যায্য দাবির সামনে আর নতিস্বীকার করবে না।