সেতু পড়ে আছে সড়ক নেই, বছরের পর বছর ধরে সেই সেতুর ব্যবহার নেই, অতঃপর একদিন ভেঙেও যায়। এমন সেতু প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বটগাছের মতো একটি সেতুর আত্মকাহিনি হয়তো বাংলা রচনা বইয়ে কখনো অন্তর্ভুক্ত হবে না। যদি হতো, তাহলে আমরা জানতে পারতাম কী যাতনা, অবহেলা ও নিঃসঙ্গতা নিয়ে এসব সেতুর আয়ু ফুরিয়ে যায়। অথচ গোটা দেশে এমন অনেক এলাকা আছে, যেখানে একটি সেতু বা কালভার্টের জন্য চাতক পাখি হয়ে আছে মানুষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চরমরিচাকান্দি এলাকায় তেমনই চিত্র দেখতে পাই আমরা। ছোট একটি কালভার্টের অভাবে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাটির বিশ গ্রামের মানুষকে। চারদিকে উন্নয়নের হাওয়া বইলেও সেখানে এসে যেন থমকে আছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, দুই বছর আগে ভেঙে যায় চরমরিচাকান্দিতে সেই কালভার্ট। পুরোনো হয়ে গেলেও সেটি সংস্কারের কোনো বালাই ছিল না। ভেঙে যাওয়ার পরও মেরামতের জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি ভাঙা অংশও অপসারণ করা হয়নি। এখন বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় স্থানীয় লোকজন চাঁদা তুলে সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছে। ফলে কোনো গাড়িও চলাচল করতে পারে না। অথচ এটি দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, মাইক্রোবাস, রিকশা চলাচল করত একসময়। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে ৫০ হাজার মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালে যেতে শিক্ষার্থী ও রোগীদের কষ্টের শেষ নেই।
এতগুলো গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিন ভোগান্তি সইতে হচ্ছে। এ নিয়ে কোনো চিন্তিত নন স্থানীয় প্রতিনিধিরা। একটি উপজেলায় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, স্থানীয় প্রশাসনসহ কত দায়িত্বশীল ব্যক্তি। কারও নজরেই কি পড়ল না বিষয়টি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানালেন, এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা প্রকৌশলীকে তিনি বলেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো সেতু হয় না। অন্যদিকে উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। কার্যক্রম চলছে। করোনার কারণে দীর্ঘসূত্রতা হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, করোনার দোহাই দেওয়া হচ্ছে এখানে। মূলত সদিচ্ছার অভাবে সেখানে সেতুটি হচ্ছে না।
যেখানে সেতুর প্রয়োজন নেই, সেখানে সেতু হবে এবং সেটি ব্যবহারও হবে না আর যেখানে সেতুর প্রয়োজন আছে, সেখানে মানুষ সেটি পাবে না— এটা কেমন পরিস্থিতি! বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চরমরিচাকান্দিতে সেতু নির্মাণের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিন।