পৃথিবীর যাবতীয় সুখের ব্যবস্থা করা হলো, কিন্তু সেখানে কোনো পানির বন্দোবস্ত নেই—ভাবুন তো কেমন হতে পারে জীবনটা। আধুনিক নগরজীবনে পানির তীব্র সংকটে পড়লেই বোঝা যায় জীবন কতটা বেদনাদায়ক হতে পারে। সেটি আরও বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে যখন পানি থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করতে না পারলে। যশোরের কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকূল এলাকার দফাদারপাড়ার বাসিন্দারা সেই দুর্ভোগের জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন। কারণ, এলাকার সব নলকূপের পানিতে আর্সেনিক। তাই রান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে আনেন তাঁরা। বছরের পর বছর ধরে এমনটিই চলছে। এ জগতে তাঁদের যন্ত্রণা বোঝার কেউ নেই যেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দুই যুগ আগে পৌরসভায় উন্নীত হয় কেশবপুর। কিন্তু পৌরসভার বাসিন্দা হলেও নাগরিক সুবিধা থেকে আজীবন বঞ্চিত মধ্যকূলের মানুষ। ওই এলাকার দুই শতাধিক পরিবার বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে। আর্সেনিকের কারণে গভীর নলকূপ স্থাপন জরুরি হলেও দীর্ঘদিনেও সেটি করা হয়নি। প্রায় দুই দশক ধরে দুই কিলোমিটার দূর থেকে গভীর নলকূপ ও পুকুরের পানি আনতে হচ্ছে। এতে বেশি ভোগান্তিতে আছেন নারীরা। সাংসারিক কাজের বাইরে দিনের বড় একটি অংশই চলে যায় পানি আনতে যেতে। তঁাদের একজন বলছেন, ‘সব থেকে বড় কষ্টের কাজ পানি আনতে যাওয়া। প্রতিদিনই কাজটি করতে হয়।’
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রায়হান আহম্মেদ জানান, যথাযথ পানির স্তর না পাওয়ায় সেখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা যাচ্ছে না। পৌর এলাকায় লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা ছাড়া বিকল্প পথ নেই। অন্যদিকে কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, মধ্যকূল এলাকায় পানি সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। দ্রুত লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারবার এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না।
গোটা দেশে যেখানে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, সেখানে একটি এলাকা কয়েক দশক ধরে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগবে, এটি কেমন কথা। জনগণকে নাগরিক সেবা না দিয়ে কীভাবে সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা এত বছর ধরে নির্বাচিত হচ্ছেন, সেই প্রশ্নও থেকে যায়। স্থানীয় প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ সমস্যার সুরাহা করুক।