ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চল বর্তমান বিশ্বের সার্বিক নিরাপত্তা পটভূমিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল ও জটিল। কৌশলগত দিক থেকে এই অঞ্চল ক্রমেই ভূ-রাজনীতির অন্যতম নির্ধারক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এই অঞ্চলের বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে গত কয়েক দশকে কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নতি সাধিত হয়েছে। এর পাশাপাশি এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিযোগিতাও দৃশ্যমান হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চলমান উন্নয়নের স্বার্থে এই অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে কৌশলগত আস্থা স্থাপন ও বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের সামরিক বাহিনী, বিশেষ করে স্থলবাহিনীসমূহের মধ্যে আস্থা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে প্রতীয়মান হয়।
স্থলবাহিনী, বিশেষভাবে সীমান্তসংলগ্ন দেশগুলোর বাহিনীর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা বলা সহজ; কিন্তু সীমান্তবিরোধ, রাষ্ট্রবহির্ভূত সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড, আন্তদেশীয় অপতৎপরতা, ফৌজদারি অপরাধসহ নানা বাস্তব কারণে তা অত্যন্ত কঠিন। সহযোগিতা বা তথ্য বিনিময়ের ঘাটতির কারণে সৃষ্ট সামাজিক নৈরাজ্য, সহিংসতা ও সন্ত্রাসের প্রভাব এক দেশের সীমানা পেরিয়ে সন্নিহিত পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রায় চার বছর বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুবাদে আমার এ অভিজ্ঞতা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেওয়ার পর জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ মিয়ানমার নাগরিকের মানবিক কর্মতৎপরতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত হই। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও সামাজিক জীবনে প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গা নামে পরিচিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকেরা এখন বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তাঝুঁকি সৃষ্টি করছে এবং দ্রুত বাংলাদেশ ও সন্নিহিত অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিক্ষুব্ধ ও বেকার রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। জীবিকার জন্য আন্তদেশীয় মানব পাচার, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, সীমান্তবর্তী অপরাধ ইত্যাদির মতো অপরাধেও তারা যুক্ত হয়ে যেতে পারে।
বর্তমান যুগে নিরাপত্তার বিষয়টি সংকীর্ণ সংজ্ঞায় সীমিত নয়। বিশ্বায়নের এ যুগে কোনো জাতিই নিরাপত্তাহীনতার বহুমুখী হুমকি এড়াতে পারে না। বর্তমানে বিশ্ব নিরাপত্তা চিত্রের নানা বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়, যেমন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, আন্তদেশীয় অপরাধ, সাইবার হুমকি, শক্তি ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী, বেআইনি অভিবাসন ইত্যাদি। নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হলে তা দ্রুত বেড়ে জনগণের সমগ্র জীবনে ছড়িয়ে তা পুরো সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে এবং জাতীয় সীমান্তরেখা পেরিয়ে যায়। তাই বলা যায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতিরাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টি পরস্পর সম্পর্কিত ও অবিচ্ছিন্ন।
রাজনৈতিক, সামরিক, পরিবেশগত ও মানবিক—নিরাপত্তার সবকিছুই সম্পর্কিত ও পরস্পর নির্ভরশীল। প্রথাগত বা অপ্রথাগত যা-ই হোক না কেন, একবিংশ শতাব্দীর প্রধান নিরাপত্তা হুমকিকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। এর রাষ্ট্রীয় সীমানা নেই। এ সমস্যার সমাধান কেউ একা করতেও পারবে না। আগে কখনো এ-জাতীয় সংকট নিরসনে বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজন পড়েনি। সামরিক বাহিনী জাতীয় ক্ষমতার অন্যতম মৌলিক উপাদান বলে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সামরিক বাহিনীর ভূমিকাই প্রধান। একে অন্যের বিরুদ্ধে সমরশক্তি প্রয়োগ করে তা অর্জন করা যাবে না; বরং প্রয়োজন হবে পারস্পরিক সহায়তা, জ্ঞানের ও দক্ষতা বিনিময় এবং সমঝোতা।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র: বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কিছু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে উৎসারিত। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার নীতি মান্য করবে, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না, সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করবে, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি এবং জাতিসংঘ সনদে উল্লিখিত নীতিমালার প্রতি সম্মান দেখাবে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। এটিই বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি। আমরা তা আক্ষরিক ও চেতনাগত অর্থে মেনে চলছি। শ্রদ্ধাশীল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ব্যাপারে এটিই অন্যদের আশ্বস্ত করে।
ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা: ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার স্থল ও সমুদ্রসীমা। মোট সীমান্তের ৯৪ শতাংশই ভারতের সঙ্গে। বাকি ২৭১ কিলোমিটার মিয়ানমারের সঙ্গে। এর মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার নাফ নদী বরাবর এবং ২০৮ কিলোমিটার পার্বত্য অঞ্চলে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের কোনো সীমান্তবিরোধ নেই।
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার সমাধান: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তসংশ্লিষ্ট বিষয় তিনটি—ছিটমহল, বেদখল ও ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটারের ছোট এলাকায় অমীমাংসিত সীমান্ত। বৃহৎ সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারত ১৯৭৪ সালে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিটি ২০১১ সালে সংশোধিত এবং ২০১৫ সালের ৬ জুন বাস্তবায়িত হয়।
ছিটমহল বিনিময়: বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি এবং ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ছিল। স্থলসীমান্ত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উভয় দেশ ছিটমহলগুলো বিনিময় করে। যে দেশে যে ছিটমহল, সেখানকার অধিবাসীদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে থেকে যাওয়ার অধিকার দেওয়া হয়।
ভূমিবিরোধের অবসান: কোনো একটি দেশের ভূমি অন্য দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকলে তা অবৈধ ভূমি দখলের পর্যায়ে পড়ে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ রকম ভূমির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার একর। উভয় দেশ তার আপস-মীমাংসা করেছে।
অচিহ্নিত স্থলসীমান্ত: ভারত-বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত অচিহ্নিত ছিল। এর মধ্যে ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে, বাকি ২ কিলোমিটার শিগগিরই করা হবে।
স্থলসীমান্ত বাস্তবায়ন: স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে প্রায় ৬০ বছর ধরে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিটমহলবাসীর নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবাগুলো পাওয়ার সুযোগ মিলেছে। রাষ্ট্রগুলো কী করে আত্মমর্যাদা অটুট রেখে এবং নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করে অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান করতে পারে, ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন তার নজির।
সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিবিধ চ্যালেঞ্জ: সীমান্ত এলাকা সছিদ্র হওয়ায় আমাদের সীমান্তরক্ষীদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তা ছাড়া, সীমান্ত এলাকা আর্থসামাজিকভাবে অনুন্নত। এসব এলাকার মানুষ সাধারণত শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে তারা বেআইনি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষের প্রকৃতি, ভাষা ও সংস্কৃতির অভিন্নতা তাদের আন্তদেশীয় অপরাধের দিকে পরিচালিত করে, যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তোলে।
সীমান্তবর্তী বহির্দেশীয় বিদ্রোহী দল: আমাদের সীমান্তের খুব কাছাকাছি প্রতিবেশী দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে। সে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাড়া করলে তারা সীমান্তরক্ষীদের অলক্ষ্যে দুর্গম ও অগম্য সীমান্ত দিয়ে আমাদের দেশে ঢুকে যাওয়ার সুযোগ নিতে পারে। তারা নিজ দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কেরও টানাপোড়েন সৃষ্টি করে।
মাদক চোরাচালান: বাংলাদেশের অবস্থান তিনটি প্রধান মাদক উৎপাদনকারী অঞ্চলের মাঝখানে। পূর্ব দিকে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, উত্তরে গোল্ডেন ওয়েজ এবং পশ্চিমে ভারতের ওপারে গোল্ডেন ক্রিসেন্ট। এই তিন অঞ্চলের নৈকট্য মাদক চোরাচালানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সম্প্রতি জীবিকার জন্য মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।
অস্ত্র-গোলাবারুদের অবৈধ ব্যবসা: গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, গোল্ডেন ওয়েজ ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের মাঝখানে থাকায় বাংলাদেশ আন্তদেশীয় জঙ্গি ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালানের রুট হিসেবে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
মানব পাচার: মানব পাচার এক বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশও তা থেকে মুক্ত নয়। সীমান্ত দিয়ে বেআইনি মানব পাচার, বিশেষত নারী ও শিশু পাচার সামাজিক সমস্যা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নারী ও শিশুরা এখন মানব পাচারকারীদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
বেআইনি সীমান্ত বাণিজ্য: সীমান্তরক্ষীদের কাছে সীমান্ত চোরাচালান সবচেয়ে নৈমিত্তিক ইস্যু। বিভিন্ন সীমান্তপথে ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রধানত গবাদিপশু ও কাপড়চোপড়ের মতো পণ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাদেশে চোরাচালান হয়ে আসে। আরেক মূল্যবান চোরাচালানকারী পণ্য হলো স্বর্ণ। এটি ব্যবহৃত হয় অবৈধ ব্যবসার মূল্য পরিশোধ বাবদ। সীমান্তবর্তী এলাকার মাধ্যমে জাল মুদ্রার বিস্তার আরেক উদ্বেগের বিষয়। এটি দেশের মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
দ্বন্দ্ব-সংঘাত হ্রাসে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা
সার্বভৌমত্ব ও দেশের অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা: সীমান্তবর্তী দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা আস্থা তৈরি ও সংঘাত এড়ানোর পূর্বশর্ত। আমাদের কথা ও কাজে তা প্রতিফলিত। বাংলাদেশ এমন কিছু করে না, যা অন্য দেশের জন্য উসকানিমূলক বলে মনে হতে পারে। ভারত, মিয়ানমারসহ কোনো দেশের জঙ্গি, চরমপন্থী, সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের এ ভূখণ্ড ব্যবহার করে তাদের দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির সুযোগ বাংলাদেশ দেয় না। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের (বিএসএফ) অনুরোধে আমরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে, বিশেষ করে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসী নির্মূলে কাজ করি। মিয়ানমারে আছে আরাকান আর্মির মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠী। মিয়ানমারের বিজিপির অনুরোধ পেলে আমাদের বাহিনী বিশেষ যৌথ অপারেশন পরিচালনা করে থাকে এবং এর ফলাফল ও অগ্রগতি আমরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধানকে জানিয়ে দিই। এতে আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় টেকসই নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি: বর্তমান বিশ্বে জাতীয় ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের চরম হুমকি মোকাবিলা করছে। বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় নেতৃত্বে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি মেনে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নানাভাবে যুদ্ধ করে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার আন্তযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে ভারতের শীর্ষ বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) নেতা অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশ ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। অনুপ্রবেশের দায়ে ঢাকায় তিনি ১৮ বছর
বন্দী ছিলেন।
সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান: আমাদের কথায় ও কর্মেই প্রতিফলিত যে বাংলাদেশ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় জাতিসংঘের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নও সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমাদের অবস্থানকে তুলে ধরে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি আমাদের দৃঢ়বিশ্বাসের আরেক দৃষ্টান্ত। সমুদ্র আইনের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ২০১২ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সমুদ্রসীমা সমস্যার রায় দিয়েছেন এবং ২০১৪ সালের ৭ জুলাই স্থায়ী সালিসি আদালত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা সমস্যার রায় দিয়েছেন। বর্তমান রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও আমাদের অবস্থান শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ।
বহু স্তরে যোগাযোগ স্থাপন: ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে আমাদের চমৎকার যোগাযোগের সম্পর্ক রয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে তা ছিল না। বিজিবির দায়িত্ব নেওয়ার পর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমি অবিলম্বে মিয়ানমার সফর করি এবং একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের পর প্রথমবারের মতো মিয়ানমার বিজিপির প্রধানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাই। আমার মিয়ানমার সফর দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী প্রধানদ্বয়ের সভার পর উভয় দেশের বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বিবার্ষিক বৈঠক এখনো অব্যাহত আছে। সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে ত্রৈমাসিক বৈঠক ছাড়াও প্রয়োজন পড়লেই বৈঠক হচ্ছে।
তথ্য বিনিময়: বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সুফল বয়ে এনেছে। সীমান্তরক্ষীদের বিভিন্ন কমান্ড পর্যায়ে তথ্য বিনিময়, চোরাচালান রোধ, মানব পাচার, বিদ্রোহী, জঙ্গি ও অপরাধী দমনে সাফল্য নিশ্চিত করেছে; সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস, ভুল-বোঝাবুঝির অবসান এবং আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা ভারতের অভ্যন্তরে চোরাচালান ও মানব পাচারের কোনো তথ্য পেলে তা বিএসএফকে জানাই। এতে তারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। আমরা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের বিএসএফের সহায়তায় ভারতের অভ্যন্তর থেকে উদ্ধারও করে থাকি। এটা দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের পারস্পরিক আস্থা বাড়িয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গেও আমরা এ ধরনের তথ্য বিনিময় করার চেষ্টা করে চলেছি।
সীমান্তে সমন্বিত পাহারার ব্যবস্থা
২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা স্বাক্ষরিত হয়। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সীমান্তের অবৈধ কার্যকলাপ ও অপরাধ দমন এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এর লক্ষ্য। এই পরিকল্পনার নির্দেশিকা অনুযায়ী বিশেষ নজরদারির জন্য একটি যৌথ টিম সীমান্তজুড়ে ৩৬৬টি ঝুঁকিবহুল জায়গার তালিকা চূড়ান্ত করেছে। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সমন্বিত প্রহরার কাজ করছে এবং চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজরদারির দিকে মনোযোগ দিয়েছে। মিয়ানমারে সীমান্তরক্ষী পুলিশের সঙ্গেও সম্প্রতি এ ধরনের নজরদারি শুরু হয়েছে। এই পদক্ষেপে আন্তদেশীয় অপরাধ দমন এবং ভুল-বোঝাবুঝির অবসানের মতো ফল পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে পুনঃপুন বৈঠক অনুষ্ঠান: প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়মিত বা প্রয়োজনীয় সীমান্ত সম্মেলন অথবা পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ ধরনের বৈঠক সীমান্ত সমস্যা নিরসনের জন্য সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কার্যকর পর্যায়ে সমঝোতা ও আস্থা তৈরি করছে।
আস্থা সৃষ্টির বিভিন্ন পদক্ষেপ: আস্থা সৃষ্টির পদক্ষেপ হিসেবে শুভেচ্ছা বিনিময়, এমনকি কোনো ইস্যু ছাড়াই ব্যাটালিয়ন ও কোম্পানি পর্যায়ে পুনঃপুন সৌজন্য সভা ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার আস্থা সৃষ্টি করছে। পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রশিক্ষণ বিনিময়, শুটিং প্রতিযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা-সম্পর্কিত সেমিনার এবং পরিবারকল্যাণ সমিতি, স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন প্রতিনিধিদলের সফরের আয়োজন করা হচ্ছে। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বিজিবির জটিল রোগী ভারতে বিএসএফের হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। বিজিবির মহাপরিচালক থাকাকালে প্রধান অতিথি হিসেবে আমি বিএসএফের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট ভারতের মধ্যপ্রদেশের টেকানপুর বিএসএফ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করি। ভারত-বাংলাদেশ মডেল অনুসরণ করে আস্থা সৃষ্টির পদক্ষেপ হিসেবে আমরা মিয়ানমারের বিজিপির সঙ্গেও সফর বিনিময় ও খেলাধুলার আয়োজন করছি।
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান: প্রায় ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গারা ৬ হাজার ৫০০ একর ভূমির ওপর গড়ে তোলা ৩১টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের আশ্রয়, জীবন রক্ষাকারী জরুরি চিকিৎসা, খাদ্য, পানীয় সরবরাহ ও মানসিক আঘাত ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। তাদের ক্যাম্পের নিরাপত্তা বিধান এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় করছে। ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা উপদ্রুত সমুদ্র উপকূলবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুর্যোগের ঝুঁকি লাঘবে কাজ করছে। ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও অন্যান্য জাতিসংঘ সংস্থা এবং দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তা দিচ্ছে। এসব মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনেও সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে তথ্য বিনিময়: মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে আমরা সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছি। কৌশলগত পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াও বিভিন্ন পথে আমাদের উদ্বেগের কথা মিয়ানমারকে জানিয়ে দিয়েছি। এ ধরনের যোগাযোগ স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা এবং ভুল-বোঝাবুঝির অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে স্টাফ টক আয়োজন: পারস্পরিক বিশ্বাস, সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালের জুন মাসে প্রথম স্টাফ টক অনুষ্ঠিত হয়। আমরা এখন মিয়ানমারে দ্বিতীয় স্টাফ টকের জন্য আলোচনা করছি।
উচ্চপর্যায়ের সফর: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান আমাকে আগামী ডিসেম্বরে মিয়ানমার সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমিও মিয়ানমার কমান্ডার ইন চিফ ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
উত্তেজনা হ্রাসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে যুক্ত করা: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের জন্য অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে বিশ্বসম্প্রদায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের দুঃখ-দুর্দশার সত্যিকার চিত্র এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারে।
কিছু প্রস্তাব
পারস্পরিক সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা: পারস্পরিক সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি কথায় ও কাজে শ্রদ্ধাবোধ থাকলে আমাদের অঞ্চল নিরাপদ ও স্থিতিশীল থাকবে।
কৌশলগত আস্থা নির্মাণ: প্রভেদ কমানোর লক্ষ্যে আঞ্চলিক স্থলবাহিনীর মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতা গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা কৌশলগত আস্থা নির্মাণে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দুই দেশের মধ্যে তথ্যবিনিময়: বিভিন্ন পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা সংস্থার মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস, ভুল-বোঝাবুঝির অবসান এবং বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টির জন্য তথ্যবিনিময় আবশ্যক। জাতীয় নিরাপত্তাপ্রধান, সেনাপ্রধান এবং সীমান্তরক্ষীপ্রধানদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক আয়োজন করা দরকার। এতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও আন্তদেশীয় অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার হবে।
সমন্বিত সীমান্ত প্রহরা: সমন্বিত সীমান্ত প্রহরা মাঠপর্যায়ে কর্মরত রক্ষীদের মধ্যে বিশ্বাস ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করবে।
বিশ্বাস ও আস্থার উন্নয়ন: বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন ও যৌথ অনুশীলন দুই দেশের রক্ষীদের মধ্যে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে। পর্যাপ্ত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের স্থলবাহিনীর নিয়মিত প্রশিক্ষণ বিনিময়ের পরিকল্পনা নেওয়া যায়।
সক্ষমতা বৃদ্ধি: প্রযুক্তি ও ডিফেন্স আর্টিকেল বিনিময়, জ্ঞান বিনিময়, বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন, ‘যুদ্ধ ছাড়া অন্যান্য কর্মকাণ্ডে’ বর্ধিত সহযোগিতা এ অঞ্চলের সেনাবাহিনীগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে অবদান রাখবে।
উপসংহার
আমরা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এক পৃথিবীতে বসবাস করছি। আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা অন্যের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত। স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখার স্বার্থে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা যথাসম্ভব টেকসই হওয়া দরকার। আন্তর্জাতিক রীতিনীতির ভিত্তিতে আমাদের এই ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চল সময়ের বিবর্তনে বিকশিত হয়ে সমুদ্র ও আকাশপথে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্ভবপর করেছে। ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের স্থলবাহিনীগুলোর মধ্যে আস্থার প্রতিষ্ঠা এ অঞ্চলকে নিরাপদ রাখবে এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
[ থাইল্যান্ডে ইন্দো–প্রশান্ত সেনাপ্রধান সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধ ]
জেনারেল আজিজ আহমেদ: বিএসপি, বিজিবিএম, পিজিবিএম, বিজিবিএমএস, পিএসসিজি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান