চিকিৎসকের ‘জবাব দিয়ে দেওয়া’ রোগী দেখেছেন কখনো? জবাব দেওয়া মানে রোগীর বাঁচার আর কোনো সম্ভাবনাই প্রচলিত চিকিৎসায় নেই। সেই রোগীর অসহায় আত্মীয়স্বজন তখন এমন সব ‘চিকিৎসা’–এর দ্বারস্থ হন, যা স্বাভাবিক অবস্থায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ওঝা, ঝাড়-ফুঁক, কবিরাজি ও হোমিওপ্যাথিসহ নানা সম্ভব–অসম্ভব উপায়ে চলে চেষ্টা। আর এসব অসহায় মানুষকে ঘিরে গড়ে ওঠে কিছু মানুষের ব্যবসা। সাইনবোর্ড, পোস্টার, লিফলেটসহ নানা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে, যেখানে লেখা থাকে ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, জটিল কিডনি রোগসহ নানা রোগের ‘গ্যারান্টি সহকারে’ চিকিৎসা দেওয়া হয়। মানুষের অসহায়ত্বই তাদের মূল পুঁজি।
‘ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ১৭ বাংলাদেশির মৃত্যু’ আজ থেকে ঠিক ৫ মাস আগে প্রথম আলোর একটি সংবাদের শিরোনাম। লিবিয়া থেকে নৌকায় করে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে এটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশিদের সর্বশেষ মৃত্যুর সংবাদ। এর ২ মাস আগেই এসেছিল ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ৩৩ বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর। এমন সংবাদ একেবারে নিয়মিত বিরতিতে আসে আমাদের সামনে।
প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ দেশ থেকে নানা পথে লিবিয়া গিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআর জানায়, ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২১ লাখ মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন। এভাবে সাগরপথ পাড়ি দিতে গিয়ে এ সময়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান, যাঁদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন। সংস্থাটি জানায়, চলতি বছর যে সংখ্যক মানুষ অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশি তরুণেরা।
এভাবে যাঁরা ‘স্বপ্নের’ ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের কাউকে কাউকে নানা রকম মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা জানেন না এটা কত বড় ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগ জানেন এই যাত্রা কতটা ভয়ংকর, জানেন এতে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। এভাবে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাত–আট লাখ টাকাও বেশির ভাগ পরিবার সহজে জোগাড় করতে পারে না। পরিবারের শেষ সঞ্চয় ভেঙে, ঋণ করে, এমনকি জমিজমা বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে প্রায় সব পরিবার। তাহলে জেনেশুনে সাত–আট লাখ টাকা খরচ করে ‘প্রাণ হাতে করে’ কেন মানুষ পা বাড়ান এই পথে? কয়েক বছর আগে ভূমধ্যসাগরে এক নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য একটি জবাব পাওয়া গিয়েছিল—দেশে এত উন্নতির পরও এমন ঝুঁকি নাকি নিচ্ছে লোভী মানুষেরা।
এই দেশে শিক্ষার সঙ্গে কর্মের যোগ নেই বললেই চলে। ‘এই দেশে যিনি যত বেশি শিক্ষিত, তাঁর বেকার থাকার আশঙ্কা তত বেশি’ এমন বাস্তবতা উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায়। ‘বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের মধ্যে কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব’ শীর্ষক এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এতে জানা যায় প্রায় ৩৭ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার, যা শিক্ষিতদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ৩৪ শতাংশের বেশি বেকার। অথচ এসএসসি ও এইচএসসি পাস করা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ শতাংশ।
‘লোভী’ তকমাটা সরকারের খুব প্রিয়, মাঝেমধে৵ ব্যবহার করে তারা। ইভ্যালি, ই–অরেঞ্জ, আলেশা মার্ট, ধামাকার মতো কিছু তথাকথিত ই–কমার্সের (যেগুলো আসলে ‘পঞ্জি স্কিম’ প্রতারণা) কাছে প্রতারিত হওয়ার পর সম্প্রতি এর ক্রেতাদেরও দেওয়া হয়েছিল ‘লোভী’ তকমা। এভাবে মানুষের ওপর অন্যায় তকমা চাপিয়ে দেওয়ার একটা ভালো উপযোগ আছে সরকারের দিক থেকে— দায় এড়ানো যায়।
আলোচিত এসব পঞ্জি স্কিম সারা দেশে যত বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসায় নেমেছে, মাসের পর মাস চালিয়ে গেছে, তাতে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই—এই রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক ও পরিচালকেরা তাদের সম্পর্কে জানতেন না। তারা কেউ গোপনে যোগাযোগ করে সরকারের অগোচরে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়নি। সরকারের মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের ‘সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন, বড় বড় তারকা তাদের বিজ্ঞাপন করেছেন, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন; তারা বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে স্পনসর করেছে। তাহলে মানুষ এসব ব্যবসাকে বৈধ ব্যবসা মনে করবে না কেন? কেন পণ্য কিনবে না তাদের কাছ থেকে? বিশেষ করে যখন সেই পণ্য পাওয়া যাচ্ছে দুই–তৃতীয়াংশ থেকে শুরু করে অর্ধেকেরও কম দামে।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করা মানুষ আর হালে আলোচিত পঞ্জি স্কিমগুলোর ক্রেতাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল হচ্ছে, তাঁরা সবাই তরুণ। ইভ্যালি, ই–অরেঞ্জ, আলেশা মার্ট, ধামাকার প্রধান পণ্য ছিল মোটরসাইকেল। কর্মহীন নিম্নমধ্যবিত্ত তরুণ রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, কিন্তু রাইড শেয়ারিং করতে শুরু করেছেন কয়েক বছর আগে থেকে। এর জন্য অত্যাবশ্যক একটি মোটরবাইক বাজারের দামে কিনতে পেরে ওঠেননি তাঁরা অনেকেই। তাই দুই-তৃতীয়াংশ, এমনকি অর্ধেক দামে মোটরবাইক বিক্রির অফার তাঁদের কাছে এক অসাধারণ আশা নিয়ে এসেছিল। ঋণ করে হলেও একটি বাইক পেতে ছুটেছেন তাঁরা।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরও অসংখ্য তরুণ গিয়েছিলেন ব্যবসা করতে। অনেকে পরিবারের শেষ সম্বল নিয়ে মোটরসাইকেল, মুঠোফোন, গৃহস্থালিসহ নানা পণ্য বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে কিনে সেগুলো বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম মূল্যে বিক্রি করে কিছু আয়ের পথ পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারপরের গল্প আমরা জানি। হাজার হাজার তরুণ পরিবারের সঞ্চয় হারিয়ে, ঋণের জালে জড়িয়ে এভাবে ‘ডুবেছেন’ ইভ্যালি, ই–অরেঞ্জ, আলেশা মার্ট, ধামাকায়।
একই পরিস্থিতি হয়েছিল ১৯৯৬ ও ২০১০-১১ সালে শেয়ারবাজারেও। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর চোখের সামনে, নানা রকম রাষ্ট্রীয় নীতি–সহায়তা দিয়ে অনেকের সঙ্গে লাখ লাখ বেকার তরুণকে ডেকে আনা হয়েছিল শেয়ারবাজারে। পরিবারের শেষ সম্বল নিয়ে, ঋণ করে তাঁরা সেই বাজারে গিয়েছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন সেখান থেকে লাভ তুলে অর্থনৈতিক ভিত্তিটুকু পাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পরিণত হয়েছিল তাঁদের জীবনের ভয়ংকরতম দুঃস্বপ্নে।
এই দেশে শিক্ষার সঙ্গে কর্মের যোগ নেই বললেই চলে। ‘এই দেশে যিনি যত বেশি শিক্ষিত, তাঁর বেকার থাকার আশঙ্কা তত বেশি’ এমন বাস্তবতা উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায়। ‘বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের মধ্যে কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব’ শীর্ষক এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এতে জানা যায় প্রায় ৩৭ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার, যা শিক্ষিতদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ৩৪ শতাংশের বেশি বেকার। অথচ এসএসসি ও এইচএসসি পাস করা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ শতাংশ।
একই সংস্থার আরেক সাম্প্রতিক জরিপে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছেন। মাত্র ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান। ৩ শতাংশ নিজ উদ্যোগে কিছু করছেন। আরেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, দেশে শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই বেকারের হার বেশি। ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার থাকছেন।
বেকারত্ব এই দেশে এতটাই প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সরকারও এখন এটা অস্বীকার করতে পারছে না। ২০১৮ সালে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘দেশে একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি।’ তরুণদের চরম বেকারত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেওয়া সরকারটির ওপর মহল এখন তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার নসিহতে ব্যস্ত।
এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এমন সব বিষয় পড়ানো হয়, যেগুলোর ব্যবহারিক কোনো মূল্য এই চাকরির বাজারে নেই। অন্যদিকে আমাদের শিক্ষার মান কমতে কমতে পৌঁছেছে একেবারে তলানিতে। ফলে চাকরির বাজারের জন্য যোগ্য কর্মী তৈরি হচ্ছেন না। আমাদের দেশের ব্যবসা বা শিল্পমালিকেরা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা ভালো সুযোগ-সুবিধার চাকরি দেওয়ার মতো যোগ্য প্রার্থী পান না। এর অনিবার্য ফল হিসেবে এই দেশে কর্মরত পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর কর্মীরা এই দেশ থেকে বৈধ–অবৈধ পথে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করে তাঁদের দেশে নিয়ে যান। বাংলাদেশের এক কোটির বেশি প্রবাসী এই দেশে যে রেমিট্যান্স পাঠান, এই অঙ্ক তার অর্ধেকের বেশি।
ওদিকে সরকার দেশের যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবি করে, সেটারও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। লুটপাটের উদ্দেশ্যে নেওয়া কিছু বড় অবকাঠামো প্রকল্প দেশের জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে বটে, কিন্তু সেটা কোনোভাবেই সত্যিকারের উন্নয়ন নয়। দেশে সত্যিকারের উন্নয়ন না হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হচ্ছে, দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হওয়া এবং বিপুলসংখ্যক তরুণের কর্মহীন হয়ে থাকা।
বেকারত্ব এই দেশে এতটাই প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সরকারও এখন এটা অস্বীকার করতে পারছে না। ২০১৮ সালে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘দেশে একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি।’ তরুণদের চরম বেকারত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেওয়া সরকারটির ওপর মহল এখন তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার নসিহতে ব্যস্ত।
অপরিকল্পিত ও মানহীন শিক্ষার কারণে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে না পেরে যে তরুণ বেকার থাকেন, তার পেছনের শত ভাগ দায় সরকারের। অন্যদিকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধু কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে যে তরুণ বেকার থাকেন, তার জন্যও দায়ী সরকার। আবার এসব তরুণকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত করতে না পারার ব্যর্থতা সরকারের। এমনকি ‘প্রাণ হাতে নিয়ে’ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার জন্য যে সাত–আট লাখ টাকা লাগে, সেই টাকা এই দেশে বিনিয়োগ করে একটি ব্যবসা যে ঠিকঠাক মতো গড়ে তোলা যায় না, তার জন্যও সরকারই দায়ী। ব্যবসার পরিবেশ তৈরির ব্যর্থতা আর সেই সঙ্গে ব্যবসা করার পদে পদে সরকারের নানা সংস্থার ঘুষ ও সরকারি দলের লোকজনের চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টিতে এক বড় বাধা।
দেশের উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠীর সুবর্ণ সময়, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কালে এই ভয়ংকর সংকটের একমাত্র দায় সরকারের। এই ব্যর্থতার দায় পুরো মাথায় নেওয়ার ন্যূনতম মানসিকতা থাকলে সবার আগে সরকারের উচিত ছিল এই নাজুক তরুণদের রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেওয়া।
বাংলাদেশের তরুণ, বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণদের আমার কাছে সেই চিকিৎসকের ‘জবাব দিয়ে দেওয়া’ রোগীটির মতো মনে হয়। একটি সুন্দর জীবনের সম্ভাবনাহীন, ক্লান্ত, হতাশ তরুণ সেই মরণাপন্ন রোগীটির মতোই পরিণত হয় নানা ধান্দাবাজের টার্গেটে। মরিয়া তরুণ চাইবেই যেকোনোভাবে উপার্জনের পথে যেতে। জীবনের অতিগুরুত্বপূর্ণ সময়ে কর্মহীন থাকা তরুণদের নানারকম প্রতারণার ফাঁদে পড়ারই কথা। অমানবিকতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে না থাকলে একটি সরকারের অন্তত উচিত এই নাজুক তরুণদের এ ধরনের বিপদের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা। অথচ এই দেশে ঘটে ঠিক উল্টোটা—সরকারই নানা ক্ষেত্রের প্রতারকের অংশ হয়ে ফায়দা লুটে নেয় তরুণদের কাছ থেকে।
এমন একটি সরকারের শাসনাধীন বাংলাদেশে তাই তরুণদের ডোবারই কথা। ভূমধ্যসাগরে তাঁরা ডুবেছেন, ডুবেছেন শেয়ারবাজারে, ডুবেছেন ইভ্যালিতে। জানি, এখানেই শেষ নয়, তাঁদের ডোবানোর জন্য নতুন ধান্দাবাজরা আসবে নতুন সব ধান্দা নিয়ে। তখনো তারা ডুববেনই। কারণ, সরকার তাঁদের রক্ষা তো করবেই না; বরং সাহায্য করবে তাদের সেই সব স্বজনকে যারা ডোবাবে তরুণদের। এটা সেই দেশ যেখানে ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’।
রুমিন ফারহানা বিএনপিদলীয় সাংসদ ও হুইপ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী