অধ্যাপক ডগলাস নর্থ মানবসভ্যতার ইতিহাস গবেষণা করে দেখিয়েছেন, যেকোনো সমাজ বা রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে হলে সবার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাকে সমাধান করতে হয় এবং সেটা হচ্ছে সন্ত্রাসের সমস্যা। প্রতিটি রাষ্ট্রে ক্ষমতা ও সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য সব সময়েই বিভিন্ন শক্তির মধ্যে ক্রমাগত সংঘাত হতে থাকে, যা সমাজের সব স্তরে বিস্তৃত। ফলে সমাজকে সবার আগে এই সন্ত্রাসের সমস্যা সমাধান করতে হয়। সমস্যাটিকে একটি সমাজ বা রাষ্ট্র দুইভাবে সমাধান করতে পারে। এক. লিমিটেড অ্যাক্সেস অর্ডার বা সীমিত সুযোগের রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করে। দুই. ওপেন অ্যাক্সেস অর্ডার বা উন্মুক্ত সুযোগের রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করে। অর্থাৎ, মৌলিকভাবে ভিন্ন যুক্তি ও পদ্ধতিতে অর্ডার দুটি সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখে।
লিমিটেড অ্যাক্সেস অর্ডার (সীমিত সুযোগের রাষ্ট্রব্যবস্থা) দেশে রাষ্ট্রের সহিংসতার ওপর একচেটিয়া সুরক্ষা নেই। বরং অভিজাত দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সমাজ নিজেকে সংগঠিত করে। রাজনৈতিক উচ্চবিত্তরা অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়, প্রত্যেককেই এ থেকে বাড়তি রেন্ট সুবিধা (দুর্নীতি–লুটপাট) পায়। যেহেতু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সন্ত্রাস ও সহিংসতার প্রাদুর্ভাব বাড়তি সুবিধা (ভাড়া বা রেন্ট) প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়, তাই অভিজাতরা শান্তি বজায় রাখার জন্য ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষগুলোর কাছ থেকে উৎকোচ পায়। এই দেশগুলোতে রেন্ট সুবিধাপ্রাপ্তিকে ধারাবাহিক রাখতে, সংঘাত দমিয়ে পর্যাপ্ত স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য সামাজিক প্রতিযোগিতাকে সীমাবদ্ধ করা প্রয়োজন হয়।
অভিজাতরা নিজেদের মধ্যেই সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ এবং সুযোগ ভাগাভাগি করে নেয় বলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, সেবা ও সুবিধাগুলোতে জনগণের সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। ডমিন্যান্ট কোয়ালিশন বা প্রভাবশালী চক্র নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাস করে রাষ্ট্রের ভূমি, শ্রম, পুঁজি, ব্যাংকঋণ, ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষা, রাজনীতি, ক্ষমতা, নির্বাচন ইত্যাদি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। কিন্তু তার বিনিময়ে ডমিন্যান্ট কোয়ালিশন বা প্রভাবশালী চক্র নাগরিককে একটা শর্তযুক্ত স্তরে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করে। ক্ষমতাসম্পন্ন অভিজাতরা সাধারণের সুযোগ সীমিতকরণের মাধ্যমে সব ধরনের সম্পদের ওপর দখল নেয়, তারা বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব ও নিজেদের মধ্যকার সংঘাতকেও দমন করে। লিমিটেড অ্যাক্সেস অর্ডার ভেঙে পড়লে বা আনুগত্য কমে গেলে, তার নিজের সুযোগই সীমিত হয়ে যাবে বলে এ ব্যবস্থাকে কোনোমতেই অস্থিতিশীল হতে দেয় না অভিজাতরা।
লিমিটেড অ্যাক্সেস অর্ডারের (সীমিত সুযোগের রাষ্ট্রব্যবস্থা) অন্য পিঠে আছে ওপেন অ্যাক্সেস অর্ডার (উন্মুক্ত সুযোগের রাষ্ট্রব্যবস্থা), যেখানে রাষ্ট্রের সব সুযোগ সমভাবে বণ্টনের জন্য নাগরিক ও রাজনৈতিক–অরাজনৈতিক এলিটরা একটা চুক্তিতে পৌঁছায়। ওপেন অ্যাক্সেস অর্ডারে রাষ্ট্রের সব সুযোগ যে কারও জন্য উন্মুক্ত। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগকে বণ্টন করে। সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের জন্য রাজনীতির অধিকার, ক্ষমতার অধিকার, সম্পদ আহরণের অধিকার, শিক্ষার অধিকার—সবকিছুই নিশ্চিত করে সাম্যের ভিত্তিতে।
লিমিটেড এক্সেস অর্ডারের তিনটি ধাপ আছে। ১. ফ্রেজাইল বা ভঙ্গুর, ২. সিক বা সাধারণ এবং ৩. অ্যাডভান্সড বা উন্নত। সম্পদে নাগরিকের সুযোগ উন্মুক্ত বলে ওপেন অ্যাক্সেস অর্ডারে ধাপ একটিই। এই অর্ডার যেকোনো রাষ্ট্র বা সমাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। উন্নয়ন ও উত্তরণের ক্ষেত্রে সব রাষ্ট্রকেই এই ধাপগুলো ক্রমানুসারে পার হতে হয়।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, নির্বাচন কমিশন, সংসদ কিংবা শিক্ষালয়ের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান দেখি না, যা পুরোপুরি স্বাধীন!
ভঙ্গুর রাষ্ট্রে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম কোনো শক্ত প্রতিষ্ঠান থাকে না। উদাহরণ—সোমালিয়া, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান। বেসিক লেভেলে প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু স্বাধীনতা থাকে, কিন্তু তারা পুরোপুরি স্বাধীন নয়; ডমিন্যান্ট কোয়ালিশন প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। ভারত একটি বেসিক পর্যায়ের রাষ্ট্র। বাংলাদেশও মোটামুটি বেসিক স্তরের। অ্যাডভান্স পর্যায়ে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক শক্তিশালী হয়। ডমিন্যান্ট কোয়ালিশন বা প্রভাবশালী চক্র যদিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, তবে পুরোপুরি পারে না। বরং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ করে। এখানে বিচারব্যবস্থা খুব শক্তিশালী। দক্ষিণ কোরিয়ায় কিছু দুর্নীতি আছে, কিন্তু ধরা পড়লে সঠিক বিচার হয়, কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। নরওয়ে বা সুইডেনের মতো ওপেন অ্যাক্সেস অর্ডারে নাগরিকের সক্ষমতা অনুসারে সুযোগ বণ্টন হয়। ধনবৈষম্য এখানে সর্বনিম্ন। কেউ চাইলেই সম্পদ কুক্ষিগত করতে পারে না। প্রতিষ্ঠানগুলো যেকোনো দুর্বৃত্তায়ন চেষ্টাকে প্রতিরোধ করে। বর্তমানে বিশ্বের ১৪টা রাষ্ট্রকে নর্থ ওপেন অ্যাক্সেস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ডগলাস নর্থ দেখিয়েছেন, লিমিটেড অ্যাক্সেস অর্ডারের (সীমিত সুযোগের রাষ্ট্রব্যবস্থা) নিচের স্তরের রাষ্ট্রগুলোতে স্বাধীন গণতন্ত্র ও সংসদ বিচারব্যবস্থার মতো ধারণা ব্যর্থ। তাঁর মতে, ওপেন অ্যাক্সেস অর্ডারের (উন্মুক্ত সুযোগের রাষ্ট্রব্যবস্থা) ধারণা যেমন গণতন্ত্র, নির্বাচন, স্টক মার্কেট, বিচারব্যবস্থা লিমিটেড এক্সেস অর্ডারে চাপিয়ে দিলে তা সফল হয় না। কারণ, এলিটরা সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্নভাবে ধ্বংস করে। তারা কখনোই রেন্ট সিকিংয়ের (দুর্নীতি ও লুটপাট) সুযোগে ছাড় দিতে চায় না। অধ্যাপক নর্থের তত্ত্বমতে, রাস্তা, ব্রিজ, টানেল, বড় বড় দালান কিংবা মেগা প্রকল্প তৈরি উন্নয়ন নয়। বরং এলিটদের হাতে সব সম্পদ নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা থাকে, তাকে ভেঙে ফ্রেজাইল থেকে বেসিক, বেসিক থেকে অ্যাডভান্সড হয়ে ওপেন অ্যাক্সেস অর্ডারে (উন্মুক্ত সুযোগের রাষ্ট্রব্যবস্থা) ) পৌঁছানোর ক্রমধারা হচ্ছে উন্নয়ন। যেখানে রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের জন্য সব সুযোগ সমভাবে বণ্টনের পথ নিশ্চিত করবে। একটি রাষ্ট্রে যদি জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো হয়, কিন্তু অন্যদিকে সেখানে যদি কর্তৃত্ববাদী শাসন চেপে বসে এবং কিছু নির্দিষ্ট এলিটের হাতে সব সুযোগ সীমিত হতে থাকে, যারা ডমিন্যান্ট কোয়ালিশন তৈরি করে, সম্পদ ভাগাভাগি করে নেয়, তবে সেই প্রবৃদ্ধিকে উন্নয়ন বলা যাবে না, বরং সেটা অবনমন।
বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা দেখি, আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র সূচকের প্রতিটিই নিম্নমুখী। জবাবদিহি সূচক, নির্বাচনী সূচক, রাজনৈতিক অধিকার সূচক, উদার গণতান্ত্রিক সূচক, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার, সুশীল সমাজের স্বাধীনতা, প্রশাসনিক দক্ষতা ইত্যাদি মিলিয়ে সামগ্রিক স্কোর বা ‘পলিটি কম্বাইন্ড স্কোর’ ইতিহাসের অন্যতম সর্ব নিম্ন স্তরে (সোর্স: হাইচার্টস ডটকম)।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, নির্বাচন কমিশন, সংসদ কিংবা শিক্ষালয়ের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান দেখি না, যা পুরোপুরি স্বাধীন! বেপরোয়া পাচার, বল্গাহীন খেলাপি ঋণ, সরকারের বেশুমার বৈদেশিক ঋণ, লাগামহীন অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র ঋণ, মাদক মাফিয়াদের বিস্তৃতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধর্ষণসহ সব ধরনের সন্ত্রাস ও অপরাধের বিস্তৃতি, শিক্ষাঙ্গনে অচলাবস্থা, আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতা ও দলীয়করণ, কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শাসন, বিরোধীমত দমন ও দলনের ডিজিটাল কালো আইন, রাষ্ট্রের খরচের লাগামহীনতা এবং সবশেষে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচন জবাবদিহির চূড়ান্ত অনুপস্থিতি এক একটি মাঝারি কিংবা বড় সংকট।
একটি ভোটারবিহীন ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন যা অনেকের কাছে রাতের ভোট হিসেবে বিবেচিত তেমন একটি জাতীয় নির্বাচনের পর রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অনেক স্তম্ভই শক্তিহীন হয়ে পড়ার কথা। তার লক্ষণ কি এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি? নির্বাচনহীন সরকারের সমর্থনে আমলাতান্ত্রের অতি আগ্রহ ও এলিট সেটেলমেন্ট এবং রেন্ট সিকিং কাঠামো তৈরি হয়েছে, এসব কিন্তু ভঙ্গুর রাষ্ট্রেরই আলামত বটে।
বেপরোয়া রেন্ট সিকিংয়ের উদাহরণ হিসেবে আমরা কোটিপতির সংখ্যা বাড়াকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি। ‘এ ডিকেড অব ওয়েলথ, এ রিভিউ অব দ্য পাস্ট টেন ইয়ার্স ইন ওয়েলথ অ্যান্ড আ লুক ফরোয়ার্ডস টু দ্য ডিকেড টু কাম’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০-১৯ (১৪.৩ শতাংশ) সালেও অতি দ্রুত ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করেছে।
বাংলাদেশ ওপর দিকে এখন একটা নিম্নমধ্যবিত্ত রাষ্ট্রের খোলস নিয়ে রেখেছে বটে, কিন্তু আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে, সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিহীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতা ও বিরোধী নির্যাতনে বেপরোয়া সংস্কৃতি।
এর আগের রিপোর্টেও (২০১২-১৭) বৈশ্বিক দ্রুত ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবদান ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল। করোনাকালে প্রবাসী আয় ভিন্ন অর্থনীতির সমুদয় সূচকই নিম্নগামী হলেও বছরের ব্যবধানে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে সাড়ে ১১ হাজার কোটিপতি বাড়ার ওপর রেন্ট সিকিং ভিন্ন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আমাদের হাতে নেই!
ব্যাংকিং সিস্টেম অ্যাবিউজ করে রেন্ট সিকিংয়ের (দুর্নীতি ও লুটপাট) ধাপ ও ধারাগুলো বন্ধ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিম্ন স্থিতির অ্যাকাউন্টগুলোতে (এক বা আধা লাখ) আমানতের মোট পরিমাণ কমেছে, করোনাজনিত মন্দা ও অর্থনৈতিক মন্দায় আয় সংকোচন হয়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে, প্রতি তিনজনে অন্তত একজন মানুষ দরিদ্র।
ভঙ্গুর স্তরে রাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা হচ্ছে সন্ত্রাস। ক্ষমতাসীনরা যেভাবে চাইবে, সেভাবেই নির্বাচন করে প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এই অনুষঙ্গগুলোর উপস্থিতি বাংলাদেশে এ মুহূর্তে রয়েছে। বাংলাদেশ ওপর দিকে এখন একটা নিম্নমধ্যবিত্ত রাষ্ট্রের খোলস নিয়ে রেখেছে বটে, কিন্তু আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে, সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিহীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতা ও বিরোধী নির্যাতনে বেপরোয়া সংস্কৃতি। জবাবদিহিহীন ক্ষমতার চর্চার প্রভাবে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রায়। এই ক্ষমতা কাঠামোর হাত দিয়ে সাধারণ নাগরিকের সব সক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে ডমিন্যান্ট কোয়ালিশনের নিয়ন্ত্রকদের হাতে রেন্ট তুলে দেওয়ার কাঠামো এখানে আছে। এটা ব্যাংকের ঋণ, প্রকল্পের অর্থ, সরকার পরিচালনা খরচ লোপাট থেকে শুরু করে পরিবহন ও রাস্তায় রাজনৈতিক ও পুলিশি চাঁদাবাজি পর্যন্ত বিস্তৃত।
বাংলাদেশের ‘রেন্ট সিকিং’ উপমাটি প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা। ইউএনডিপি পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানাজরিপ ২০১৬–এর ফলাফল পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিস্থিতি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০১৮ সালের মার্চে। (সূত্র-১২ মার্চ ২০১৮, দৈনিক আমাদের সময়)। ইউএনডিপি জানায়, দেশের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী পরিবারের হাতে মোট আয়ের ৩৮ শতাংশ। আয় বণ্টনব্যবস্থার এমন কেন্দ্রীভবনের জন্য রেন্ট সিকিং (লুটপাট ও দুর্নীতি) প্রবণতাকে দায়ী করে ইউএনডিপি বলেছে, আয়ের এত বড় অংশ কীভাবে মাত্র ১০ শতাংশের হাতে কুক্ষিগত হলো, তা বুঝতে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে অবাধে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেওয়া, পুঁজিবাজার কারসাজি, কর ফাঁকি, সরকারি কেনাকাটা ও ব্যয়ে দুর্নীতি, সর্বোপরি ভূমি দখলের ঘটনাগুলোই যথেষ্ট।
বাংলাদেশে এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো খর্বিত ও আংশিক স্বাধীনতা নিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান টিকে আছে, তথাপি বাদবাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেরই লিমিটেড এক্সেস অর্ডারের ফ্রেজাইল স্তরে নেমে পড়ারও কিছু আশঙ্কা বিদ্যমান। এর মানে আমরা বলছি না যে বাংলাদেশ বেসিক রাষ্ট্র থেকে ফ্রেজাইল রাষ্ট্র হয়ে পড়েছে। বরং কর্তৃত্ববাদী শাসনের জাঁতাকল, আইনের শাসনের অতিক্ষীণকায় উপস্থিতি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতায় ভঙ্গুরতার কিছু লক্ষণ প্রবল। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ৫০ বছর পর এসে বাংলাদেশে আজ আমাদের বেসিক রাষ্ট্র থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির চরম বিকাশ ঘটানো অ্যাডভান্স স্টেজের রাষ্ট্রচিন্তার কথা ছিল, কিন্তু আমাদের কিনা আলোচনা করতে হচ্ছে দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু শক্তির প্রতিষ্ঠান নিয়ে। এটা নিশ্চয়ই হতাশার!
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ: অর্থনীতির ৫০ বছর’ বইয়ের লেখক। [email protected]