ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ইসলাম মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ বিধান দিয়েছে। শক্তি-সামর্থ্য, অর্থসম্পদ ও সময়-সুযোগ, যা আমরা ব্যয় করি, বিনিয়োগ করি বা কাজে লাগাই।
এর সব কটিতেই মিতব্যয় ও মধ্যপন্থা অবলম্বন দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তির জন্য অপরিহার্য। কোনো কিছুতেই বাড়াবাড়ি ও সীমা লঙ্ঘন অনুমোদিত নয়।
মধ্যপন্থা ও মিতব্যয় মুমিনের গুণ। মুসলমানরা কৃপণতা ও অপব্যয় থেকে মুক্ত থাকবেন। কোরআন করিমে বলা হয়েছে, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার হক দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় কোরো না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। তুমি একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ২৬-২৯)। ‘এমনিভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠা করেছি, যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাহায্যকারী ও সাক্ষী হতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪৩)
অপচয় করা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আহার করো এবং পান করো; কিন্তু অপচয় কোরো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৩১)
‘দয়াময় আল্লাহর তো তারাই, যারা অপব্যয় করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এই উভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৬৭)
হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত এবং হালাল উপার্জন ফরজ ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালাল উপার্জনের সন্ধান অন্যান্য ফরজের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।’ (বায়হাকি: ৬১২৮)
জীবনের সব ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। রিয়া প্রদর্শন ও অহংকার করা যাবে না। এমনকি প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অহংকারে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না, পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কোরো না; নিশ্চয় আল্লাহ উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না। সংযতভাবে পদচারণ করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করো; নিশ্চয় গর্দভের স্বরই সবচেয়ে অপ্রীতিকর।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৮-১৯)। ‘আর তুমি দম্ভভরে ভূপৃষ্ঠে বিচরণ কোরো না, নিশ্চয় তুমি পাদবিক্ষেপে মৃত্তিকা বিদীর্ণ করতে পারবে না; আর পর্বতপ্রমাণ উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে না।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৩৭)
একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত সাআদ (রা.)–কে অজুর মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করতে দেখে বললেন, ‘হে সাআদ! অপচয় করছ কেন?’ সাআদ (রা.) বললেন, “অজুতেও কি অপচয় হয়?” নবীজি (সা.) বলেন, হ্যাঁ। প্রবহমান নদীতে বসেও যদি তুমি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করো, তা অপচয়।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২৫)
মিতব্যয়ীদের মহান আল্লাহ দারিদ্র্যমুক্ত জীবন দান করবেন। নবী কারিম (সা.)–এর ভবিষ্যদ্বাণী, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে, সে নিঃস্ব হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৭/৩০৩)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অর্থ ব্যয়ে পরিমিতবোধের চর্চা করবে, অনটন তার নাগাল পাবে না।
ইসলামের এই মহান শিক্ষা যথাযথ অনুসরণ না করার কারণেই আজ আমাদের অনেকে উপার্জনের কাঙ্ক্ষিত সুফল থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।
তাই আমাদের আচার–আচরণে, আয়-উপার্জনে, ব্যয়ে ও দানে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। পিতা–মাতা, ভাইবোন ও স্ত্রী-সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় করতে হবে। আত্মপ্রচার ও রিয়া প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করা অন্যায়।
রোজ হাশরে বিচারের দিনে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও নড়তে পারবে না। জীবন কী কাজে ব্যয় করেছে, যৌবনে কী ইবাদত করেছে, কোন পথে আয় করেছে, কোন পথে ব্যয় করেছে এবং বিবেক বা জ্ঞান অনুসারে আমল করেছেন কি না। (তিরমিজি: ৪/৬১২, মিশকাত: ৫১৯৭, সহিহ আলবানি)
হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি তোমার কিতাব (আমলনামা) পাঠ করো, আজ তোমার হিসাব–নিকাশের জন্য তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ১৪)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম