বিশ্লেষণ
আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশ কেন ব্যর্থ হচ্ছে
নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি মালয়েশিয়া, মালদ্বীপসহ কিছু দেশ বাংলাদেশ থেকে লোক না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সিকদার, সেলিম রেজা ও কে এম নূর-ই-জান্নাত
মালয়েশিয়া, মালদ্বীপসহ অন্যান্য দেশ বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়োগ ঠেকাতে সম্প্রতি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। গত মার্চে আসা ঘোষণা অনুযায়ী, মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে আর নতুন কোনো শ্রমিক নিচ্ছে না এবং বহু অনুমোদন পাওয়া শ্রমিকেরা ৩১ মের পর আর মালয়েশিয়ায় ঢুকতে পারেননি।
অন্যদিকে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভুয়া কাগজপত্র দাখিল, লোক নিয়োগে অনিয়মসহ অন্যান্য কারণে মালদ্বীপের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিত করেছে। এই পদক্ষেপ মালদ্বীপের অবৈধ অভিবাসন রোধ এবং পরিবর্তিত শ্রমনীতির একটি অংশ। আর মালয়েশিয়ার এই পদক্ষেপ কর্মী নিয়োগে অনিয়ম রোধ ও সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি মূলত তাদের শ্রমনীতির পুনর্মূল্যায়ন এবং ১২তম মালয়েশিয়া প্ল্যানে নির্ধারিত বিদেশি কর্মীদের জন্য সংরক্ষিত কোটা পূরণের একটি অংশমাত্র (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২০২৪)।
এ ছাড়া প্রায়ই মালয়েশিয়ার কিছু পাম তেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে বিরত থাকছে। অন্যদিকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা সরকার–নির্ধারিত খরচের থেকেও মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় ও নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। বলতে গেলে, মালদ্বীপের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য একটি নতুন শঙ্কার সৃষ্টি করেছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। তারপরও বিদেশে আমরা আমাদের শ্রমবাজার ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছি। ফলস্বরূপ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই অভিবাসী কর্মীরা নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ‘রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি’র ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই নিজেদের আত্মসমালোচনার মাধ্যমে এই ব্যর্থতার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আমাদের এখনই চিন্তাভাবনা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ব্যর্থতার কারণ
প্রথমত, বাংলাদেশের কাজের পরিবেশ বিপজ্জনক, কষ্টসাধ্য ও অস্বাস্থ্যকর—এ রকম ভ্রান্ত ধারণার কারণে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের বর্তমান ভাবমূর্তি উন্নত নয়। আমরা এখনো প্রমাণ করতে পারিনি যে আমাদের দক্ষ কর্মীদের আমরা অন্য খাতে কাজে লাগাতে পারি। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্থানীয় শ্রমবাজারের, বিশেষত তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য আমরা ভালো কর্মপরিবেশ প্রস্তুত করতে পেরেছি কি না এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের শ্রমবাজার নিয়ে কোনো ইতিবাচক প্রচার–প্রচারণা করতে পেরেছি কি না, যা আমাদের বৈশ্বিক শ্রমবাজার ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় অনেক বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। সে দেশের সমাজে তাঁরা দারুণ প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণে আমরা কি কখনো এই প্রবাসীদের কাজে লাগানোর চিন্তা করেছি? আমাদের সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থা এই অভিবাসন খাতে স্বচ্ছতা আনতে এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে সরকারের সঙ্গে একযোগে নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তাই আমাদের সুশীল সমাজেরও উচিত আত্মসমালোচনা করা।
দ্বিতীয়ত, আমাদের আইনপ্রণেতারা যেখানে প্রতিনিয়ত দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আলোচনা করছেন, সেখানে আমরা সত্যিই কি উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী তৈরিতে কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে পেরেছি? বাংলাদেশের প্রায় সবারই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার আগ্রহ থাকলেও তাঁদের জন্য চাকরির সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। অথচ বিশ্বব্যাপী দক্ষ শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছি। এই দেশগুলো বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর কারিগর হিসেবে খ্যাত।
অন্যদিকে আমরা প্রযুক্তিগত বা কারিগরি শিক্ষা খাতকে উপেক্ষা করে চলছি। অনেক সময় আমরা পরিবারের যে সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সক্ষমতা নেই বলে বিশ্বাস করি, তাঁদের এই কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিই। অপর দিকে দেশের স্বল্প-আয়ের পরিবারেও আজকাল অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁরা সম্মানজনক নয়—এই বিবেচনায় কোনো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর কথা ভাবেন না। কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং ভবিষ্যতে এ শিক্ষার বিনিময়ে সম্মানজনক ও উচ্চ বেতনের সম্ভাবনা আছে, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য এখনো অনেকের কাছে অজানা।
প্রশ্ন হলো, অভিভাবকদের কাছে কারিগরি শিক্ষা জনপ্রিয় করার জন্য যা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা কি পর্যাপ্ত? আবার এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাজসজ্জা এবং শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রায়ই ভুল চিত্র উপস্থাপন করা হয়, যা কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা তৈরি করে না। এতে বিদেশি নিয়োগকর্তা বা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দক্ষতা নিয়ে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়।
তৃতীয়ত, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে একজন কর্মীর কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি ভাষার দক্ষতাও প্রয়োজন। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং ইউরোপের স্কুলে শিশুদের অন্তত দুটি বিদেশি ভাষা শেখানো হয়, সেখানে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার স্বার্থে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনীয় ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছি? আমাদের এত সীমাবদ্ধতার পরও প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এসব কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বের হন। তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা কি তেমন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছি?
চতুর্থত, আমাদের নীতিনির্ধারক ও অন্য অংশীদারদের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সংখ্যা এবং তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও এসব আলোচনায় গুণগত বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, নীতিনির্ধারকেরা সব সময় গন্তব্য দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে বিদেশে যেন বাংলাদেশ থেকে সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা যায়, তা আলোচনায় বেশি গুরুত্ব দেন। ফলে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা উল্লেখ করতে ব্যর্থ হই। এতে শেষ পর্যন্ত বিদেশে এই অভিবাসীরা মানসিকভাবে দুর্বলতা বোধ করেন এবং নানাবিধ শোষণের শিকার হন। এসবের ফলে গন্তব্য দেশগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের পাশাপাশি বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক অভিবাসী অধিকার উপেক্ষার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
পঞ্চমত, আমরা লক্ষ করেছি যে সেই ২০০০ সাল থেকে অভিবাসনপ্রক্রিয়ার রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দেশের সরকার বিভিন্ন মানদণ্ড স্থাপন করে নির্দিষ্ট মেয়াদে একটি বড়সংখ্যক অভিবাসীকে বিদেশে পাঠাতে এবং রেমিট্যান্স পেতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে। অতীতের সব সরকার অভিবাসন খাতে নিজেদের বিজয় দাবি করলেও অভিবাসীদের কল্যাণের প্রশ্নে আমরা আজও পিছিয়ে আছি।
ষষ্ঠত, বিভিন্ন সরকারের সময়ে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট গঠন করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়াকে ২০০৭ সাল থেকে একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই অভিবাসী শ্রমিকদের সম্পদ ভোগ করার স্বার্থে বাংলাদেশি শ্রমবাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। কিন্তু তারা কখনো বাংলাদেশের লাভ–লোকসানের কোনো মূল্যায়ন করেনি।
সপ্তমত, বিদেশে কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই অভিবাসনপ্রক্রিয়া সহজীকরণে এবং বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের শ্রমবাজারের সম্প্রসারণে কাজ করে। তবে একই সময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে বাংলাদেশি অভিবাসীরা গন্তব্য দেশে অনৈতিক ও অমানবিক আচরণের সম্মুখীন হন। আমরা কি এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো দায়বদ্ধতায় আনতে পেরেছি?
আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মসংস্থান সম্পর্কে শিক্ষিত বা দ্বিতীয় প্রজন্মের তরুণদের একধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এ কারণে এই কর্মী প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাঁরা কাজ করতে অস্বীকার করছেন। তবে আমরা যদি তৈরি পোশাকশিল্প খাতে নজর দিই, তাহলে আমরা দেখব, এসব প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষিত দ্বিতীয় প্রজন্মের তরুণেরা অনেকেই তাঁদের পরিবারের ব্যবসার দায়িত্ব নিয়েছেন। এতে এ খাতের উন্নতি হচ্ছে।
আমরা কি এই শিক্ষিত দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মকে বিদেশে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর ব্যবসায় আগ্রহী করতে যথেষ্ট কাজ করেছি বা এ খাতের উন্নয়নে তাঁদের সম্মানজনক অংশীদারত্বের জন্য কাজ করেছি? তাঁদের জন্য বায়রার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমাদের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে এই নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে, যা আসলে এসব প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।
অষ্টমত, আমাদের সংস্কৃতিতে দালালদের যে প্রচলন ও জনপ্রিয়তা রয়েছে, তা আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। দালালেরা আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এক দিনের মধ্যে তাঁদের সমাজ থেকে উৎখাত করা সম্ভব নয়। যদিও তাঁরা বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসনপ্রক্রিয়া সহজীকরণে অংশ নেন, তবে অভিবাসীদের অনেকেই তাঁদের দ্বারা নানাভাবে প্রতারিত হন এবং বিদেশে যেতে যাবতীয় অর্থসম্পদ হারিয়ে নানাবিধ বিড়ম্বনার শিকার হন।
এ ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হলো, দালালদের একটি মনিটরিং সিস্টেমে রাখা, তাঁদের লাইসেন্স প্রদানের জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রচলিত আইনে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া। তবে একটি গোষ্ঠী এই দালালদের আইনি কাঠামোর মধ্যে রাখতে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং দালালদের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে। তাদের এই অনাগ্রহের কারণ আমাদের কাছে এখনো অজানা।
সম্প্রতি কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ভারতীয় শিক্ষার্থীরা স্থানীয় লোকদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে কিরগিজস্তানে পাকিস্তান ও ভারত দূতাবাসের কর্মীরা খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং তাঁদের শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে প্রচেষ্টা চালান। অথচ আমাদের দূতাবাসের কর্মীরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার যথেষ্ট চেষ্টা করলেও তাঁদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। আমাদের বিশ্বাস, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মীরা বিদেশে কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশি অভিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ করতে এবং অভিবাসী কর্মীদের জন্য নতুন কাজের সুযোগ খুঁজে দিতে পারদর্শী।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দূতাবাসে কর্মরত এই কর্মীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। তুমুল প্রতিযোগিতার পর তাঁরা এই সম্মানজনক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন। নিঃসন্দেহে তাঁরা প্রত্যেকেই অসম্ভব মেধাবী। সে ক্ষেত্রে তাঁরা এ ধরনের কাজের প্রতি অনাগ্রহী হলে তা তাঁদের মেধার একপ্রকার অপচয় হবে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশের আইনপ্রণেতারা বিদেশে নতুন চাকরির বাজার সন্ধানের লক্ষ্যে সরাসরি দূতাবাসের কর্মীদের নিয়ে কাজ করছেন কি না। বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান বের করতে হবে।
উপরিউক্ত আলোচনার মূল উদ্দেশ্য সমস্যার সমাধান বের করা নয়, আমাদের উদ্দেশ্য সমস্যাগুলোর বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যার অন্তর্নিহিত সমাধান খুঁজে বের করা। যদিও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের চাহিদা নিয়ে যেসব রিপোর্ট প্রকাশ করে, সেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ঠিক কোন খাতে কেমন চাহিদা আছে, কেন এই চাহিদা আছে বা এই চাহিদার কোনো ভবিষ্যৎ আছে কি না—এসব সম্পর্কে তেমন কোনো আলোচনা থাকে না। এ ছাড়া আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ তাদের অভিবাসীদের সুরক্ষায় সে দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের সফলভাবে কাজে লাগাচ্ছেন।
মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় অনেক বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। সে দেশের সমাজে তাঁরা দারুণ প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণে আমরা কি কখনো এই প্রবাসীদের কাজে লাগানোর চিন্তা করেছি? আমাদের সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থা এই অভিবাসন খাতে স্বচ্ছতা আনতে এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে সরকারের সঙ্গে একযোগে নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তাই আমাদের সুশীল সমাজেরও উচিত আত্মসমালোচনা করা।
সত্যি বলতে, কাজের বেলায় সীমাবদ্ধতা অবশ্যই অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে আমাদের অভিবাসন খাতের উন্নয়নে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়, তার সদ্ব্যবহার হচ্ছে কি না বা এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাজের পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়ে গবেষণার এখনই সময়।
মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার ও সেলিম রেজা, শিক্ষক ও সদস্য, সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। কে এম নূর-ই-জান্নাত, গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।