বিশ্লেষণ
সাত রাজ্যের চারটিতেই বিজেপি কেন শূন্য
এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্ব ভারতের ভোটাররা প্রায় জোটবদ্ধ হয়ে ভোট দিয়েছেন বিজেপি ও তার শরিকদের বিরুদ্ধে। এর ফলে ৭ রাজ্যের মধ্যে ৪টিতে বিজেপি কোন আসন পায়নি। এই ৭ রাজ্যে আসনসংখ্যা কম। তাই অনেক সময় বিশ্লেষকেরা উত্তর-পূর্ব ভারতকে কম গুরুত্ব দেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের এবারের নির্বাচনের ফলাফলের রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে লিখেছেন শুভজিৎ বাগচী
উত্তর-পূর্ব ভারতে আসন কম। তাই অনেক সময় ভারতের রাজনীতি-বিশ্লেষকেরা উত্তর-পূর্বকে অনেক কম গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। ২০২৪ সালে সেই উত্তর-পূর্বেই ভোটাররা প্রায় জোটবদ্ধ হয়ে ভোট দিলেন বিজেপি ও তার শরিকদের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া কিছুটা হলেও কংগ্রেসের যেন প্রত্যাবর্তন শুরু হলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সহিংসতায় জর্জরিত মণিপুর থেকে। মণিপুরে দুটি আসনের দুটিই জিতেছে কংগ্রেস, যা আগে ছিল বিজেপি ও তার শরিকের দখলে।
সব মিলিয়ে উত্তর-পূর্বের ২৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি ও তার শরিকদের আসন হয়তো কমেছে মাত্র ৩টি, কিন্তু উত্তর-পূর্বের ৪টি রাজ্য মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সাফ হয়ে গিয়েছে। চার রাজ্যের ছয় আসনের একটিও পায়নি এনডিএ।
অথচ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ছয় আসনের মধ্যে পাঁচটি পেয়েছিল বিজেপি বা তার উত্তর-পূর্বের শরিকেরা। একটিমাত্র পেয়েছিল কংগ্রেস। মণিপুরে বিজেপি পেয়েছিল একটি এবং তার শরিক নাগা পিপলস ফ্রন্ট একটি। মেঘালয় রাজ্যে দুটি আসনের মধ্যে একটি পেয়েছিল এনডিএর শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
২০২৩ সালে মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর বিজেপির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে এনপিপি। ফলে এই দল এখন বিজেপির শরিক। মেঘালয়ে অপর আসনটি পেয়েছিল কংগ্রেস। নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে একটি করে আসন পেয়েছিল যথাক্রমে এনডিএর দুই শরিক ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি ও মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট।
২০২৪ সালের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার মণিপুরের দুটি আসনই পেয়েছে কংগ্রেস, মেঘালয়ে একটি পেয়েছে কংগ্রেস এবং অপরটি একটি সম্পূর্ণ নতুন দল ভয়েস অব দ্য পিপল পার্টি (ভিওটিপিপি)।
২০২১ সালে গঠিত ভিওটিপিপি এখনো এনডিএ বা ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে কোনোটিরই শরিক নয়। জয়ের পরে দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আর্ডেন্ট মিলার বাসাইয়াওমোইট বলেছেন, তাঁদের জয় এসেছে যাবতীয় ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। জাতীয় ও অন্য সব আঞ্চলিক দল উত্তর-পূর্ব ভারতের নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করে বাসাইয়াওমোইট বলেছেন, তাঁরা চেষ্টা করবেন উত্তর-পূর্বের অন্য ব্যর্থ হওয়া দল ও জাতীয় দলগুলোর পরিবর্তিত দল হিসেবে আগামী দিনে নিজেদের সামনে আনতে।
২০২৩ সালে মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনে ১৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভিওটিপিপি ৪টিতে জেতে। উত্তর-পূর্ব ভারতের অধিকাংশ দলই নিজেদের স্বাধীন দল হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েও অতীতে শেষ পর্যন্ত মিশে গিয়েছে বিজেপি বা কংগ্রেসের সঙ্গে। তাদের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটবে না বলেও জানিয়েছেন দলের সভাপতি।
নাগাল্যান্ডের একটিমাত্র আসন পেয়েছে কংগ্রেস এবং মিজোরামেরও একটি আসন পেয়েছে জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেডপিএম)। ভিওটিপিপির মতোই জেডপিএমও এখনো প্রবলভাবে বিজেপিবিরোধী দল; তবে জেডপিএম কংগ্রেসেরও শরিক নয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান হলেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা লালদুহোমা।
তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ছয়টি আঞ্চলিক দলের একটি জোট জেডপিএম। দলের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা। ২০২৩ সালের মিজোরাম বিধানসভা নির্বাচনে জেডপিএম ৪০ আসনের মধ্যে ২৭টি জিতে বর্তমানে ক্ষমতায়। মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার প্রবল বিরোধী জেডপিএম জানিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা এনডিএ বা অন্য কোনো বড় দলের সঙ্গী হবে না।
বিজেপির আসন খুব একটা কমল না কেন
মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে ব্যর্থতা সত্ত্বেও উত্তর-পূর্বে এনডিএর আসন খুব একটা কমেনি। ২০১৯ সালে বিজেপি এককভাবে পেয়েছিল ১৪ এবং শরিকেরা ৪টি আসন। এবার বিজেপি এককভাবে পেয়েছে ১৩ এবং শরিকেরা ২টি আসন, অর্থাৎ গতবার উত্তর-পূর্ব ভারতে ইন্ডিয়া জোট পেয়েছিল মোট ১৮ আসন, এবার ১৫টি। মাত্র ৩টি আসন কমার কারণ, এই ১৫ আসনের ১১টি এসেছে আসাম থেকে। সেখানে বিজেপি তাদের ৯টি আসন ধরে রাখতে পেরেছে এবং দুই শরিক (আসাম গণপরিষদ এবং বোড়ো-অধ্যুষিত অঞ্চলে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি-লিবারেল) পেয়েছে একটি করে আসন।
বাঙালি-অধ্যুষিত ত্রিপুরার দুটি আসন এবং আদিবাসীপ্রধান অরুণাচল প্রদেশের দুটি, অর্থাৎ মোট চারটি আসন গতবারও পেয়েছিল এনডিএ, এবারও পেয়েছে। বস্তুত, চারটি আসনই পেয়েছে বিজেপি।
খারাপ ফলের জন্য একটি ধর্ম দায়ী: হিমন্ত বিশ্বশর্মা
এর বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকায়—অর্থাৎ চার রাজ্যে—বিজেপি ও শরিকদের আসন শূন্য। এই ফলাফলের প্রাথমিক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর ওপর গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি, সেই হিমন্ত বিশ্বশর্মা নাম না করে দোষারোপ করেছেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে একটি বিশেষ ধর্মের মানুষ এনডিএর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। এ কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে, যেহেতু এই নির্দিষ্ট ধর্মের প্রচুর মানুষ ওই রাজ্যগুলোয় রয়েছে। এটা রাজনৈতিক পরাজয় নয়। ধর্মের বিরুদ্ধে কেউই লড়াই করতে পারে না। এই ধর্মের মানুষ সাধারণত রাজনীতিতে নাক গলায় না, কিন্তু এবার তারা তা করেছে। এমনকি আসামেও করেছে। তারা প্রকাশ্যেই ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করেছে।’
হিমন্ত বিশ্বশর্মার এ মন্তব্যের ব্যাখ্যায় গিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতসহ গোটা ভারতের প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, তিনি এবার সরাসরি আক্রমণ করেছেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে; যদিও নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন চলাকালে একাধিকবার বিশ্বশর্মা আক্রমণ করেছেন মুসলমান সম্প্রদায়কে। গ্রেপ্তারের পাশাপাশি নানান আইন এনেছেন আসামে এবং বুলডোজার চালিয়ে ভেঙেছেন ‘অবৈধ মাদ্রাসা’।
কিন্তু নির্বাচনের পরই তিনি নাম না করে হারের জন্য দোষারোপ করেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে। বিষয়টি উত্তর-পূর্বে আলোড়ন ফেলেছে। নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ নিয়মিত প্রশ্ন করছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রীকে। জানতে চাইছেন, কেন তিনি এভাবে আক্রমণ করলেন একটি সম্প্রদায়কে?
মেঘালয়ের সংবাদপত্র শিলং টাইমস-এর সম্পাদক প্যাট্রিসিয়া মুখিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘হিমন্ত বিশ্বশর্মা মণিপুর, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে বিজেপির পরাজয়ের জন্য খ্রিষ্টান মিশনারিদের দায়ী করেছেন। আপনি মনে রাখবেন যে আদিবাসীদের সহজে বোকা বানানো যায় না।’
‘কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় জয় মণিপুরে’
মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর সংখ্যা যথাক্রমে প্রায় ৭৫ ও ৮৮ শতাংশ। মণিপুরে খ্রিষ্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও ৪০ শতাংশের বেশি। আবার মিজোরামে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর হার ৮৭। এদের বড় অংশই আদিবাসী সমাজের মানুষ, প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাস না করা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। অনেকেই মনে করছেন, মণিপুরে সহিংসতার কারণে খ্রিষ্টানপ্রধান তিন রাজ্য ও মণিপুরে জয় এসেছে বিজেপিবিরোধীদের। যে কারণে ওই মন্তব্য আসামের মুখ্যমন্ত্রীর।
গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক উদ্দীপন দত্ত অবশ্য নিশ্চিত নন মণিপুরের সহিংসতাই উত্তর-পূর্বের চার রাজ্যে বিজেপিবিরোধীদের জয় নিশ্চিত করেছে কি না। তবে অধ্যাপক দত্ত এ-ও জানান, প্রতীকী হলেও ভারতে কংগ্রেসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জয় মণিপুরে এবং এর কৃতিত্ব অনেকাংশেই রাহুল গান্ধীর।
উদ্দীপন দত্ত বলেন, ‘আমি মনে করি, মণিপুরের দুই আসন ইনার ও আউটার মণিপুরের জয় প্রতীকীভাবে হলেও কংগ্রেসের জন্য সবচেয়ে বড় জয়। কারণ, দলটি বিজেপির হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য, সহনশীলতা ও সহাবস্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচার করেছিল। রাহুল গান্ধীর দ্বিতীয় পর্যায়ের ভারত জোড়ো যাত্রার প্রধান বক্তব্য ছিল, সমাজে ভালোবাসা ও সহাবস্থানের প্রয়োজন। তবে মণিপুরের সহিংসতার পর উত্তর-পূর্বের রাজ্যে কংগ্রেসের জয়কে আদিবাসীদের সার্বিক সংহতি বলাটা একটু বেশিই বলা হবে। যে রাজ্যগুলোয় কংগ্রেস তার হারানো জায়গা ফিরে পেয়েছে, তাদের প্রত্যেকটির রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন।’
একই সঙ্গে উত্তর-পূর্বে বিজেপিবিরোধী মনোভাব এবং কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে রাহুল গান্ধীর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক দত্ত। তিনি বলেন, ‘তবে এটাও সত্য, রাহুল গান্ধীর মণিপুর থেকে শুরু দ্বিতীয় পদযাত্রা এই রাজ্যগুলোয় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য দলের কর্মীদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছিল। একদল তরুণ ও নতুন কংগ্রেস নেতাও উঠে এসেছেন (মুকুল সাংমার মতো অনেক পুরোনো নেতার প্রস্থানের পর)। এই নেতারা আঞ্চলিক দলগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন, যে আঞ্চলিক নেতারা ব্যক্তিগত লাভের জন্য বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।’
বিজেপি হারার পর নতুন করে সংঘাত মণিপুরে
মিজোরামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এক তরুণ নেতা রবার্ট রালটেক কংগ্রেসের জয়ের প্রসঙ্গে অবশ্য অন্য মত দিলেন। রালটেক বলেন, ‘মণিপুরে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের চিহ্নিত করে আক্রমণ করা হয়েছে। না হলে শত শত গির্জা কীভাবে ধ্বংস হলো? এই আক্রমণ নিশ্চিতভাবেই খ্রিষ্টানদের নিরাপত্তাহীনতা উত্তর-পূর্ব ভারতে বাড়িয়েছে, যার জেরে তারা একজোট হয়ে মণিপুরে ভোট দিয়েছে কংগ্রেসকে।’
রালটেক বলেন, একদিক দিয়ে দেখতে গেলে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ভুল বলেননি যে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, যা তারা অতীতে দেয়নি। রালটেক আরও বলেন, ‘তাদের দোষারোপ করার আগে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর ভেবে দেখা উচিত যে অতীতে তারা জোটবদ্ধভাবে বিজেপিকে ভোট না দিলেও এবার চার রাজ্যে কেন দিল? তারা দিল, কারণ কয়েক বছর যাবৎ এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা খ্রিষ্টানদের ভাবতে বাধ্য করেছিল যে এবার মুসলমান সম্প্রদায়কে ছেড়ে তাদের ওপর আক্রমণ হবে। ভয়ে তারা এভাবে একত্র হয়ে ভোট দিয়েছে।’
তবে মণিপুরের পরিপ্রেক্ষিতে এ ফল দুই পক্ষের—মেইতেই ও কুকি-চিন-জো-হামার প্রভৃতির—বিরোধ আরও বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভোটের পর্ব মিটতেই মণিপুরে নতুন করে সংঘাত হয়েছে। গত সোমবারই আক্রমণ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের নিরাপত্তারক্ষীর কনভয়ে, আহত হয়েছেন অন্তত একজন নিরাপত্তাকর্মী।
জিরিবাম যাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, কারণ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর কয়েক দিন ধরে সেখানে প্রবল সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। মেইতেই সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সেখানে দুই জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর পোড়ানো হয়েছে বলে দুই পক্ষই অভিযোগ করেছে।
মেইতেই সম্প্রদায়ের যে ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে, তিনি ৫৯ বছরের এক কৃষক। তাঁর নাম সোইবাম শরৎকুমার সিং। তিনি তাঁর খামার থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের ক্ষত রয়েছে।
অন্যদিকে কুকিসহ অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের বক্তব্য, গত এক মাসে তাদের অন্তত দুই সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে একজনের লাশ পাওয়া গিয়েছে। এই দুই ব্যক্তির অপহরণ এবং এক ব্যক্তির মৃত্যুর পেছনে মেইতেই সম্প্রদায়ের সশস্ত্র চরমপন্থী সংগঠন আরামবাই টেঙ্গলের হাত রয়েছে বলে কুকি সমাজের বিবৃতিতে ১০ জুন জানানো হয়। এ ঘটনার জেরে জিরিবামে আরও সহিংসতার আশঙ্কা করে প্রশাসন ইতিমধ্যেই ২০০ জনকে ত্রাণশিবিরের স্থানান্তরিত করেছে।
এক বছর ধরে মেইতেই সম্প্রদায়ের হাতে মার খেয়ে এখন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি হারার পর পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করছে কুকিরা। কারণ, আসামের মুখ্যমন্ত্রী মেইতেই সম্প্রদায়ের পক্ষ নিয়ে কয়েক বছর ধরে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের নির্দিষ্ট প্রমাণও রয়েছে, যা এর আগেই প্রচারমাধ্যমে এসেছে। এ কারণেই এখন শুরু হয়েছে পাল্টা আক্রমণ। প্রধানত, খ্রিষ্টানপ্রধান রাজ্যগুলোয় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ হেরে যাওয়ায় এ সংঘাত এখন উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক দিকে চলে যায় কি না, সেটাই দেখার। সে ইঙ্গিতই কিন্তু আপাতত দিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
শুভজিৎ বাগচী প্রথম আলোর কলকাতা সংবাদদাতা