পোশাক খাতের মালিকেরা বদলাবেন কবে

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পোশাক খাতে আবার অস্থিরতা দেখা দেয়। পোশাক খাত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম খাত। এ খাতে অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষ নতুন নয়। পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার, মালিক–শ্রমিকের সম্পর্ক, মালিকদের রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতাচর্চার বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে খাতটিতে সংস্কারের বিষয়ে লিখেছেন শওকত হোসেন

পোশাক খাত ব্যবস্থাপনায় সংস্কার দরকার। এ জন্য মালিকদের মনোভাব ও আচরণের সংস্কার সবচেয়ে জরুরিছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের বয়স ৪৫ বছর। ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয়ের উৎস এই পোশাক খাত। কর্মসংস্থানের দিক থেকেও সবার ওপরে তারা। একক দেশ হিসেবে রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয়।

দীর্ঘ ৪৫ বছরে এত কিছু হলেও কেবল একটি জিনিসই বদলায়নি। আর তা হলো পোশাক মালিকদের আচরণ ও মনোভাব। এখনো পোশাক খাত পরিচালিত হয় সনাতন কায়দায়। ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন দমনই কেবল শিখেছে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিকভাবে পোশাক মালিকেরা এখন এতটাই প্রভাবশালী, যেকোনো সিদ্ধান্ত নিজেদের স্বপক্ষে আনতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না।

অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক সব পথ বন্ধ হওয়ায় পোশাক খাতের শ্রমিকেরাও দাবি আদায়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো পদ্ধতি শেখেনি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ বের হবে ২০২৬ সালে। এই সময়ের উপযোগী হতে হলে পোশাক খাত পরিচালনায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য দরকার সংস্কার। কাজটি শুরু করতে হবে এখন থেকেই। কারণ পোশাক খাত ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখা যাবে না।

সবার আগে মালিকদের সংস্কার

পোশাক খাতের মালিক সংগঠন দুটি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি পদে ছিলেন টানা ১৪ বছর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে প্রথম সভাপতি হন তিনি। এর মধ্যে ২০১২ সালে একবার ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হয়েছিলেন, বাকি পাঁচবার সভাপতি হন সমঝোতার মাধ্যমে, চাপ দিয়ে। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্যও ছিলেন। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতেন তিনি, তাঁর ভাই শামীম ওসমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। সেলিম ওসমানের প্রধান কাজই ছিল সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রাখা। তাঁদের দাপটে বিকেএমইএ ছিল একটি নামসর্বস্ব সংগঠন, শিল্পের স্বার্থে কোনো ভূমিকা ছিল না।

অন্যদিকে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট পদ মানেই হচ্ছে সংসদ সদস্য বা সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় প্রবেশ করা। ফলে তাদেরও মূল কাজ সরকারকে সমর্থন করে যাওয়া। এখানে কাজ করে কেবল সরকার স্বার্থ ও মালিক স্বার্থ।

নিয়মিত বেতন–ভাতা না দিলে কেউ না কেউ রাস্তায় নামবেই। বর্তমান বা ভবিষ্যতের যেকোনো আন্দোলন থামাতে হলে পোশাক খাত ব্যবস্থাপনায়ই সংস্কার দরকার। এ জন্য মালিকদের মনোভাব ও আচরণের সংস্কার সবচেয়ে জরুরি। খালি নেওয়া নয়, দেওয়ার অভ্যাসও গড়তে হবে।

২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৩ জন পোশাক মালিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন বিজিএমইএ সংবর্ধনা দিয়েছিল নির্বাচিতদের। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক তখন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। প্রয়াত আনিসুল হক পরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন। এই ঘটনায় বিজিএমইএর শীর্ষ নেতাদের জন্য একটি নতুন দরজা খুলে যায়। আনিসুল হক প্রয়াত হলে নতুন মেয়র হন বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম।

২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যাঁরাই এ সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন, সবাই মেয়র, সংসদ সদস্য অথবা দলে বড় পদ পেয়েছেন। যেমন ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়ের সভাপতি সালাম মুর্শেদী খুলনা থেকে ও এর পরের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ঢাকার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরের সভাপতি সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, যিনি এখন পলাতক। এরপরের টানা চার বছরের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। ২০০৫-০৬ সময়ের সভাপতি টিপু মুনশিও প্রথমে সংসদ সদস্য এবং পরে বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।

আরও অনেক আগে দুই সভাপতি মোশাররফ হোসেন ও রেদোয়ান আহমেদ বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এর মধ্যে মন্ত্রীও ছিলেন রেদোয়ান আহমেদ। তারা বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত।

বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন এস এম মান্নান। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মান্নান কচি নামে পরিচিত বিজিএমইএর এই নেতা গত প্রায় এক যুগ ধরেই কমিটিতে থাকতেন। সক্রিয় রাজনীতি করা মান্নান কচিকে কমিটিতে রাখাই হতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ রক্ষা ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য।

গত ৪৫ বছরে বিজিএমইএ একটি কাজই ভালোভাবে শিখেছে, আর তা হলো সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আন্দোলন দমন, মজুরির দাবি যতটা কম রাখা যায় তার ব্যবস্থা করা এবং সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা আদায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন কিছু শ্রমিকনেতাও। যারা অর্থের বিনিময়ে মালিকদের সমর্থন করেন। বিশেষ করে মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এমনটা বেশি ঘটেছে।

আসলে বিজিএমইএ বা ব্যবসায়ীদের মূল সংগঠন এফবিসিসিআই মূলত ক্ষমতাসীন দলের ব্যবসায়ী শাখা। চেম্বারগুলোও তা–ই। সুতরাং সংস্কার করতে হবে বাণিজ্য সংগঠনগুলোরই। তাহলেই ব্যবসার স্বার্থে রাজনীতির ব্যবহার কমে আসবে।

আন্দোলন বনাম আলোচনা

মালিকপক্ষের অভিযোগ, যখনই পোশাক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়, তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয় না। অন্যদিকে শ্রমিকনেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, নিয়মতান্ত্রিক দর-কষাকষির ব্যবস্থা পোশাক খাতে নেই। ফলে আন্দোলনও আর নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘটে না।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পরে আন্তর্জাতিক চাপে পোশাক খাতে শ্রমিক ইউনিয়ন ব্যবস্থা চালু রাখতে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শিথিল করা হয়। এখন পর্যন্ত এই শিল্পে নিবন্ধিত আছে ১৩০০ শ্রমিক ইউনিয়ন। বাকি ৭০ শতাংশ কারখানায় আছে অংশগ্রহণ কমিটি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব ইউনিয়ন বা কমিটির নেতৃত্বে আছেন মালিকপক্ষের অনুগতরা। আর যাঁরা অনুগত নন, প্রতিটি আন্দোলনের পরে তাঁরা নানা হয়রানির মুখে পড়েন।

শেখ হাসিনার পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে দাবি আদায়ে আরও অনেকের মতো আন্দোলনে নেমেছেন পোশাকশ্রমিকেরা। তবে অন্য সবাই কাজে ফিরে গেলেও অস্থিরতা রয়ে গেছে পোশাক খাতে। কারণ, এখন আর গোয়েন্দা সংস্থা বা শিল্প পুলিশ দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন থামাতে পারছে না মালিকপক্ষ। এ অবস্থায় দাবি দাওয়া জানানোর জন্য যেমন একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায় বের করতে হবে, তেমনি তৈরি করতে হবে দাবি পূরণের আলোচনার পথ। আর যেকোনো আন্দোলন হলেই বাইরের ষড়যন্ত্র, বিদেশি ইন্ধন-এসব বলাও বন্ধ করা প্রয়োজন।

এবারের যত দাবি দাওয়া

এবারে শ্রমিকদের দাবি অন্তত ২০ ধরনের। একাধিক কারখানার লিখিত দাবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে, বার্ষিক প্রণোদনা ৫ শতাংশ থেকে বাড়ানো, প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু, ১৫ দিন পিতৃত্বকালীন ছুটি, টিফিন বিল ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ৬ মাস করা, মোট বেতনের সমান ঈদ বোনাস দেওয়া, শুক্রবার কাজ করলে দুপুরের খাবারের বিল বৃদ্ধি, উৎসব ছুটি ২০ দিন, অর্জিত ছুটি ৩০ দিন, চিকিৎসাকালীন ছুটি ২০ দিন করা এবং বেতন দিতে হবে মাস শেষে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে।

শ্রমিকদের বাকি দাবি হচ্ছে, একবার বিনা মূল্যে আল্ট্রাসনোগ্রামের ব্যবস্থা করা, মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া, ডে কেয়ার সুবিধা বৃদ্ধি, মাসিককালীন সময়ে দুই দিন ছুটি মঞ্জুর, এটিএম বুথ স্থাপন, গর্ভকালীন সময়ে ভিটামিন সি প্রদান এবং চক্ষু পরীক্ষা ও সানগ্লাস প্রদান ইত্যাদি।

পোশাক খাতে ২০২৩ সালে ঘোষিত সর্বশেষ নিম্নতম মজুরির ক্ষেত্রে শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাব ছিল২০ হাজার ৩৯৩ টাকা, আর মালিকপক্ষের প্রস্তাব ছিল ১০ হাজার ৪০০ টাকা। মালিকদের প্রস্তাবে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামলে চার পোশাকশ্রমিক মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মালিকপক্ষ নতুন করে সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরির প্রস্তাব দিলে পরে সেটিই চূড়ান্ত হয়। তারপরেও আন্দোলন চললে তা দমন করতে ৪৩টি মামলা এবং ১১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই মজুরি নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও এবার সরকার পতনের পরে মজুরি বাড়ানোর দাবি করছে না শ্রমিকপক্ষ। বরং তারা কিছু সুযোগ-সুবিধা চাচ্ছে।

মালিকেরা পেয়েছেন সবই

দেশে পোশাক খাতের জন্য প্রথম মজুরি বোর্ড হয়েছিল ১৯৯৪ সালে, আর নিম্নতম মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ৩০ বছর পরে সেই মজুরি বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। আর ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় ছিল ২২৩ কোটি ডলার। সেই আয় এখন ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই আয় বৃদ্ধির পেছনে সরকার ও আন্তর্জাতিক নীতি সহায়তার একটি বড় ভূমিকা আছে।

যেমন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) প্রতিষ্ঠার আগে গ্যাট আলোচনার সময় থেকেই মাল্টি ফাইবার অ্যাগ্রিমেন্টের (এমএফএন) আওতায় বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে কোটাসুবিধা পেয়েছে ২০০৪ সাল পর্যন্ত। ২০০৫ সালে কোটা ব্যবস্থা উঠে গেলেও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েনি বাংলাদেশ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিশেষ অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) পাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতেও একাধিক দেশ এখনো শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশকে।

অন্যদিকে ১৯৮২ সালের শিল্পনীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তখন রপ্তানিতে ডেডো বা ডিউটি ড্র ব্যাক ব্যবস্থা ছিল। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির সময় শুল্ক দিলেও রপ্তানি করার পর তা ফেরত পেতেন। বিলম্ব, দুর্নীতি ও প্রক্রিয়াগত সমস্যা হওয়ায় এর পরিবর্তে বন্ড-সুবিধা চালু করা হয়। এর মাধ্যমে পোশাকমালিকেরা বিনা শুল্কে পোশাক তৈরির সব ধরনের কাঁচামাল আমদানি করতে পারতেন।

১৯৮৬-৮৭ সময়ে সরকার চালু করে স্থানীয় ঋণপত্র বা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে রপ্তানি আয় আসার পরেই ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে হতো। পোশাক খাতের অগ্রগতির পেছনে এই দুই নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন গবেষকেরা। এরপরেও সরকার বিভিন্ন সময় নগদ সুবিধাসহ নানা ধরনের কর ছাড় দিয়েছে। আবার যেকোনো সংকটে পোশাকমালিকেরা সরকারের কাছে হাত পেতেছেন, সরকারও সব দাবি পূরণ করেছে।

শুধু নেওয়া নয়, দেওয়ার অভ্যাসও করতে হবে

পোশাকমালিকেরা কখনোই মানতে চান না যে ব্যবসা ভালো চলছে। পোশাকমালিকদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করলেই তাঁরা বলেন, ব্যবসার অবস্থা খারাপ, অর্ডার কমে যাচ্ছে, ক্রেতারা কম দামে পোশাক কেনেন, উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে এবং এখানে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কম।

অন্যদিকে পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন এমন নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, পোশাক মালিকদের বিত্ত আর জীবনযাপন দেখলে মনে হয় না যে ব্যবসা খারাপ। ২০২২ সালেও ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা। সেই ডলারের দর এখন ১২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডলার রপ্তানি আয়ে আগের চেয়ে তাঁরা বেশি পেয়েছেন ৩৬ টাকা। তা ছাড়া উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়াও দরকার। সর্বনিম্ন মজুরি দিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা পাওয়া যাবে না। এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে।

পোশাক খাতের জন্য আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ঝুট ব্যবসা। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। পোশাকমালিকেরা অনেক কম দামে ঝুট কাপড় রাজনৈতিক মাস্তানদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন। সরকার বদল হলে কেবল নিয়ন্ত্রক বদল হয়। যেমন এত দিন এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত আওয়ামী লীগের লোকজন, এখন নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে বিএনপির লোকজন।

বর্তমান আন্দোলনে পেছনে তাদেরও ইন্ধন আছে। পোশাক মালিকদের বক্তব্য হচ্ছে ঝুট কাপড়ের ন্যায্য দাম পেলে সেই অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা যেত। তাঁরা তা করতেন কি না, সেটা অন্য প্রশ্ন। তবে অবশ্যই এর সমাধান দরকার। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের শাসন; যা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

নিয়মিত বেতন–ভাতা না দিলে কেউ না কেউ রাস্তায় নামবেই। বর্তমান বা ভবিষ্যতের যেকোনো আন্দোলন থামাতে হলে পোশাক খাত ব্যবস্থাপনায়ই সংস্কার দরকার। এ জন্য মালিকদের মনোভাব ও আচরণের সংস্কার সবচেয়ে জরুরি। খালি নেওয়া নয়, দেওয়ার অভ্যাসও গড়তে হবে।

  • শওকত হোসেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন