রাষ্ট্র সংস্কারের ভাবনায় নারী কেন উপেক্ষিত

ছাত্র-জনতার এবারের অভ্যুত্থানে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ নারীর রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা যায়। গণ–অভ্যুত্থানের পর নারীর প্রতি বিরাজমান সব বৈষম্য দূর করার বিষয়টি রাষ্ট্র সংস্কারের এজেন্ডায় কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, তা নিয়ে লিখেছেন ফারহানা হাফিজ, শাম্মিন সুলতানা, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও সাবিনা পারভীন

কোটাবিরোধী আন্দোলন ও অভূ্যত্থানে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সৃষ্ট ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ অল্প সময়ের মধ্যে বৈষম্য আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিকৃতি হয়ে উঠেছিল। পরিণত হয়েছিল সরকার পতনের এক দফা দাবিতে। দেশের সরকারি–বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ, অন্যান্য লিঙ্গপরিচয়ের মানুষ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিভিন্ন জাতি-ধর্ম পরিচয়ের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে নারীদের ব্যাপক সাহসী উপস্থিতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই আন্দোলনে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, তা হলো ‘সংস্কার’। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় খুব আলোচনা হচ্ছে, তা হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা। কিন্তু ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে আমরা দেখছি, বেশির ভাগ উদ্যোগ ও আলোচনা থেকে নারী এবং আন্দোলনের নারী সমন্বয়কেরা যেন ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে প্রশ্ন জাগে, রাষ্ট্র সংস্কারের আলাপ পারবে কি রাষ্ট্রীয় বন্দোবস্ত ও সুযোগ-সুবিধা বণ্টনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫১ শতাংশ নারীর হিস্যা ও অংশীদারত্বের বিষয়টি সমস্বরে উচ্চারণ করতে? পারবে কি নারীর অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে অমীমাংসিত বিষয়গুলোকে সংস্কারের দাবির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে?

রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সংবিধান সংস্কার নিয়ে। ইতিমধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে—যেমন ১৯ (১), ১৯ (৩), ২৮ (১) ও ২৮ (২)–এ সর্বজনীন নীতির অধীনে নারীর সমতা এবং সব ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণের বিষয়টি বিস্তৃত এবং সুরক্ষিত। কিন্তু জটিলতা হলো সংবিধান রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর সমান অবস্থানের কথা বললেও পারিবারিক আইনের সঙ্গে শরিয়াহ বা ধর্মীয় আইনকেও স্বীকৃতি দেয়। এটা নারীদের জন্য অসম এবং ধর্মভেদে ভিন্নও।

যেমন মুসলিম নারীর জীবনের চারটি বিশেষ দিক—বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত এবং উত্তরাধিকার পারিবারিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানে নারীরা পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করতে পারে না। আবার এক ধর্মের সঙ্গে আরেক ধর্মের ভিন্নতা রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, পারিবারিক আইনের এই বৈষম্যমূলক বিধান সংবিধানের ২৮ (১)–এ উল্লিখিত ‘রাষ্ট্র শুধুমাত্র ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, লিঙ্গভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করবে না’-এর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক নয় কি?

বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে বৈশ্বিক সনদ ‘নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ (সিডও)’ অনুমোদন করলেও এখন পর্যন্ত এর ২ এবং ১৬.১ (গ) ধারার ওপর সংরক্ষণ রেখেছে। সিডওর ধারা ২ রাষ্ট্রকে লিঙ্গভিত্তিক অসমতা তৈরি করে এমন যেকোনো আইন, নীতি, বিধান, প্রথা, অভ্যাস পরিবর্তন এবং বাতিল করতে সংবিধানসহ প্রয়োজনীয় আইনগত সংস্কারভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের এবং ধারা ১৬.১ (গ) বিয়ে এবং বিবাহবিচ্ছেদে সমান অধিকারের কথা বলে। শরিয়াহ আইনের সঙ্গে বিরোধ স্থাপন করে এমন কোনো বিধান করা যাবে না এই যুক্তিতে সিডও সনদের সংরক্ষণ এখনো তুলে নেওয়া হয়নি। তুরস্ক, ইয়েমেন, জর্ডান, লেবানন, তিউনিসিয়া, কুয়েতসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যদিও কোনো সংরক্ষণ ছাড়াই সিডও অনুমোদন করেছে।

পাশাপাশি দেশের সব ধর্মের সব নাগরিকের জন্য এক ও অভিন্ন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইন নিশ্চিত করে একটি অভিন্ন পারিবারিক বিধান/আইন (ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড) প্রণয়ন নারী আন্দোলনের একটি দীর্ঘদিনের দাবি। বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নের দাবির মুখে বিগত সরকার একটি খসড়া প্রকাশ করেছিল। তাতে নানা অসংগতি থাকায় বেশ সমালোচনার মধ্যে পড়ে এবং উদ্যোগটি থেমে যায়।

সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্র সব নাগরিকের সমান গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। সংবিধান সংস্কারের এজেন্ডাতে নারীর সমানাধিকার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পারিবারিক আইনে বৈষম্য সৃষ্টি করে এমন সব বিধান বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। এ ছাড়া সিডও সনদ থেকে সব সংরক্ষণ তুলে নেওয়ার বিষয়টিও কাম্য।

নারী নির্যাতনের ভয় থেকে প্রতিরোধে উত্তরণ

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদন-২০২৪ অনুযায়ী, জেন্ডার সমতা অর্জনের পথে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। বিভিন্ন জেন্ডার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আশা জাগালেও বাংলাদেশের নারী নির্যাতনের চিত্রটি অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত নারী নির্যাতন জরিপ ২০১৫ প্রতিবেদন অনুযায়ী ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী বৈবাহিক জীবনে অন্তত একবার স্বামীর দ্বারা এক বা একাধিক ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার ৫১ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছরে ২৭ হাজারের বেশি ধর্ষণ এবং ৬০ হাজারের বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা থানায় রিপোর্ট করা হয়েছে। যদিও ধর্ষণ মামলার সংখ্যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পেলেও এর মধ্যে পাঁচ বছরে সাজা হয়েছে কেবল ২৪ জনের (কালের কণ্ঠ, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)।

 ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ নারী, মেয়ে ও শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে একটি নির্দেশিকা জারি করে, যা প্রতিটি সরকারি–বেসরকারি কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নারীর প্রতি যৌন নির্যাতনের বিষয়ে রিপোর্ট করতে নির্দেশনা দেয়। কিন্তু গত ১৫ বছরের বাস্তবতা হচ্ছে, এই নির্দেশনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলন–পরবর্তী রাষ্ট্রে যখন সংস্কারের আলাপ এবং অন্তর্ভুক্তির দাবি জোরালোভাবে ধ্বনিত হচ্ছে, সেখানে কি আমরা কোথাও শুনতে পেয়েছি নারীর প্রতি নির্যাতনের মানসিকতা পরিবর্তনের কথা? আমরা বরং কিছু ক্ষেত্রে উল্টোটা দেখেছি। গত ১২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে তিনজন নারী পর্যটকের ওপর মব দ্বারা নির্যাতন (ঢাকা ট্রিবিউন, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একজন নারী পর্বতারোহীর ওপর দিনের আলোতে প্রকাশ্যে হামলা ও নির্যাতন (দ্য ডেইলি স্টার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪)।

৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যে রাজনৈতিক প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে, সেখানে অবশ্যই সংস্কারের ক্ষেত্রে নারী নির্যাতনের ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রয়োজনীয় আইনি, প্রশাসনিক ও সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএফএম) অর্থনীতিবিদদের মতে, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য দূর করে এবং অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতকরা ৪০ শতাংশ বাড়াতে পারে (দ্য ডেইলি স্টার, ১৬ জুন ২০২৪)। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিবিএসের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ২০০৩-২০১৬ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যায়, যা প্রতিবেশী অঞ্চলগুলোর তুলনায় বেশি।

এ সময় কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৩৬ শতাংশ। ২০২২ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে অনানুষ্ঠানিক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ৯২ ভাগ, যেখানে শোভন কর্মপরিবেশের কোনো মানদণ্ড এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আর বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এ দেশে উদ্যোক্তা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৭ শতাংশ।

পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে নারী উন্নয়নের এক উদাহরণ হয়ে উঠেছিল। করোনা–পরবর্তী সময়ে নারীর অংশগ্রহণ সেখানে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কিন্তু কেন এমনটা হলো, তার কারণ এখনো অস্পষ্ট। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের মাত্রা আসলে বর্তমানে ঠিক কত ভাগ, তা জানার জন্য একটি শ্রম জরিপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

সমান কাজে সমান মজুরি নিশ্চিত করা, নারীর জন্য প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও চাকরিতে সমান সুযোগ করে দেওয়া, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রাখা, শ্রম আইন সংস্কার এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী সব অধিকার সুরক্ষা করে নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করা এখন অত্যন্ত জরুরি। সংবিধান যেখানে নারীকে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার দিয়েছে, তার পূর্ণ বাস্তবায়ন কেবল আইন প্রণয়ন নয়, সামাজিক পরিবর্তনের এজেন্ডায় আনার চ্যালেঞ্জটি বর্তমান সরকার নেবে কি?

সাম্প্রতিক সময়ে রাস্তাঘাটে স্বাধীনভাবে চলাচলের ক্ষেত্রে নারীকে প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ সহিংসতা, হয়রানি এবং অপদস্থতার শিকার হতে হচ্ছে, তার একটি বিরাট প্রভাব নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ওপর পড়বে। এর প্রতিকারের উপায় বের করে শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা কি রয়েছে বর্তমান সরকারের সংস্কারের এজেন্ডায়? এ প্রসঙ্গে ২০০৯ সালে গৃহীত কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশিকাটি মাথায় রেখে দ্রুত যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষায় একটি আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ

গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স ২০২৩-এর পলিটিক্যাল এমপাওয়ারমেন্ট সাব-ইনডেক্সে ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের ৩৫০টি আসনের মধ্যে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। কিন্তু ৩০০ আসনে যেমন সরাসরি নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা গেছে কম, তেমনি ৫০টি আসনের জন্য সরাসরি ভোট গ্রহণের ব্যবস্থাও এখন পর্যন্ত করে ওঠা হয়নি। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সারা দেশে ৪ হাজার ৪৮০টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটিতে তিনটি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে। এই স্তরে মাত্র শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ নারী; ৫ হাজার ৫৪১ জন পুরুষের বিপরীতে মাত্র ৪৪ জন নারী নেতৃত্বের পদে মনোনীত হয়েছিলেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশকে বিভিন্ন সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে সমুন্নত এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। সংস্কার আলোচনাগুলোতে গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আদেশ আইন (২০০৯) বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের পরিকল্পনা কী, এটা জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াটা খুব জরুরি। এই আদেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিটির কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কতসংখ্যক নারী কোন দলে আছেন, তার হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণকে আমরা স্বাধীনতা–পূর্ববর্তী নারীর রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখি। কিন্তু যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে জনজীবনের সব ক্ষেত্রে আমরা নারীদের অংশগ্রহণ দেখেছি, একইভাবে কি আমরা নারী ‘প্রতিনিধিত্ব’ নিশ্চিত করতে পেরেছি? আমাদের রাজনৈতিক জীবনে আমরা কি কেবল নারীদের আপৎকালীন ‘অংশগ্রহণকারী’ হিসেবেই দেখব, নাকি তাঁকে দেশ গঠনের কাজে ‘সমান অংশীদার’ ও ‘প্রতিনিধি’ হিসেবে দেখব—এটা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে নারীর আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের পূর্ণ বাস্তবায়ন করে তাঁর সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা কি পূর্ণভাবে প্রস্তুত? আমরা আশাবাদী হতে চাই আর তাই আমরা মনে করি, সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ এবং কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে চলমান সংস্কারব্যবস্থায় শিগগিরই একটি ‘নারী অধিকার কমিশন’ গঠন করা উচিত। এর মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের নারীদের কাছ থেকে দেশ গঠনে তাঁদের মতামত নেবে এবং একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করবে।

  • ফারহানা হাফিজ, শাম্মিন সুলতানাসাবিনা পারভীন: জেন্ডার বিশ্লেষক

  • জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী