এত শিশু–কিশোরকে কেন গুলিতে মরতে হলো

ছাত্র-জনতার এবারের আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল অনেক শিশু–কিশোর। তাদের ও তাদের পরিবারের স্বপ্নটা আর কোনো দিন পূরণ হবে না। নিহত বেশ কয়েকজন শিশুকে নিয়ে লিখেছেন মানসুরা হোসাইন

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ৬০ জনের বেশি শিশু–কিশোর

শাফিক উদ্দিন আহমেদের খালা নাজিয়া আহমেদ বলছিলেন, মাত্র ১৭ বছর বয়সী ছেলেটা চোখের সামনে গুলিতে মরে গেলে। এ অবস্থায় তো আর ভালো থাকা যায় না। শুধু সন্তান মারা যাওয়া পরিবার নয়, চোখের সামনে শিশুদের মরে যেতে দেখে কারও পক্ষেই ভালো থাকা সম্ভব নয়।

চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের এক পর্যায়ে সরকারের চরম বলপ্রয়োগ এবং সংঘর্ষ–সহিংসতায় ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৫৮০ জন মারা গেছেন। তবে এর মধ্যে কতজন শিশু, তার সঠিক হিসাব নেই। ২৫ জুলাই পর্যন্ত হিসাবে ২১ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়, সেখানেও একটি শিশু ছিল।

১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে হেলিকপ্টার থেকে গুলিতে শিশুদের নিহত হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং নিহত শিশুদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

একই দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদ্রাসাছাত্র জোবাইদ হোসেন ইমনকে (১২) হত্যার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলাটি করেন জোবাইদের বাবা আবদুল্লাহ আবু সাইদ ভূঁইয়া।

প্রথম আলোর হিসাবে ৬০টির বেশি শিশু নিহত হয়েছে।

■ পোস্টমার্টেম ছাড়াই ‘মামলা করব না, অভিযোগ নেই’ এমন চিঠিতে সই করে সামিরের পরিবার লাশ দাফন করে।

■ এই শিশুদের অনেকেই হয়তো মনে রাখবে। শুধু এই শিশুদের ও পরিবারের স্বপ্নটা আর কোনো দিন পূরণ হবে না। 

নিহত শিশুর সংখ্যা কত

আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা যখন ২১০ ছিল, তখন প্রথম আলো ১৫০ জনের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে। বিশ্লেষণ বলছে, নিহতের মধ্যে ছিল ১৯টি শিশু ও কিশোর। আন্দোলনের প্রথম দিকে সরকারের ভয়ে পরিবারের কেউ গুলিতে মারা গেছে, অনেকেই সে তথ্য প্রকাশ করতে চাইতেন না। তবে এখন অনেকেই তা প্রকাশ করছেন। এ আন্দোলনে প্রথম আলোর হিসাবেই ৬০টির বেশি শিশু মারা গেছে। অনেক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যায় এই শিশুদের বাঁচাতে চিকিৎসক আর অভিভাবকেরা মরণপণ লড়াই করছেন। লড়াই করে হেরে গেলে নিহত শিশুর সংখ্যাটা আরেকটু বাড়বে।

 গত ৩১ জুলাই আন্দোলনে শিশুসহ মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে ‘এসব মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। এক রিটের শুনানির শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে বাসার ছাদে সাড়ে ছয় বছরের শিশু রিয়ার মৃত্যু নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী অনীক আর হক।

আরও পড়ুন

সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সাফওয়ান। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বিজয়ের জনস্রোত দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এতে তার হাতের হাড় থেঁতলে যায়। আরেক গুলি বুকের পাঁজর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সাফওয়ানকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

রিয়া গোপ মা-বাবার সঙ্গে থাকত নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায়। দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান রিয়া ছাদে খেলতে গিয়েছিল। বাসার সামনে সংঘর্ষ হচ্ছে দেখে বাবা মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে ছাদে গিয়ে মেয়েকে কোলে নিয়েছিলেন। একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রিয়ার মাথায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যুর কারণ লেখা ছিল ‘গানশট ইনজুরি’। এ বছরই রিয়া ভর্তি হয়েছিল স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় বাসার নিচে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হচ্ছে। তিন বছরের শিশু আবদুল আহাদ মা-বাবার সঙ্গে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখছিল। হঠাৎ একটা গুলি আহাদের ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরেই আটকে যায়। ফরিদপুরে আহাদকে দাফনের মধ্য দিয়েই তাদের পারিবারিক কবরস্থানটির যাত্রা শুরু হয়।

মিরপুরের কাফরুল থানার সামনের সড়কে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ঢুকছিল ১১ বছরের সাফকাত সামিরের ঘরে। সে জানালা বন্ধ করতে গেলে একটি বুলেট সামিরের চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সামির একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। এলাকাবাসী সামিরের লাশ নিয়ে মিছিল করতে চান। লাশের ময়নাতদন্ত না করে পুলিশের কথা শুনে ‘মামলা করব না, অভিযোগ নেই’ এমন চিঠিতে সই করে সামিরের পরিবার লাশ দাফন করে।

‘তাকাইতে পারি নাই সন্তানের লাশের দিকে’ 

রিয়া, আহাদসহ গুলিতে মারা যাওয়া বেশির ভাগ শিশুর মা-বাবার প্রশ্ন, তাঁদের সন্তানেরা কেন গুলিতে মরবে? শিশুরা যদি আন্দোলনে যায়ও, তারপরও কি তাদের গুলি করে মেরে ফেলতে হবে?

১৭ বছর বয়সী গোলাম নাফিজ ৪ আগস্ট রাজধানীর ফার্মগেটে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। চার হাত–পা ধরে পুলিশ যখন রিকশার পাদানিতে (যাত্রীর পা রাখার জায়গা) গুলিবিদ্ধ নাফিজকে তুলে দেয়, তখনো সে রিকশার লোহার রডটা হাত দিয়ে ধরে রেখেছিল।

দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ পুলিশি এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের বাধার মুখে রিকশার পাদানিতে ঝুলতে থাকা নাফিজের কয়েকটি ছবি তুলতে পেরেছিলেন। এই ছবি দেখেই নাফিজের মা–বাবা তাঁদের সন্তানের খোঁজ পান হাসপাতালের মর্গে। বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছিল নাফিজ। নৌবাহিনী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও নতুন কলেজ ড্রেস পরে তার আর কলেজে যাওয়া হয়নি।

১২ বছরের রাকিব হাসানের পরনে ছিল নেভি ব্লু টি-শার্ট আর কালো হাফপ্যান্ট। পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ। ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার শরীরে আর কোথাও ছিল না আঘাতের চিহ্ন। এসব তথ্য রাকিব হাসানের সুরতহাল প্রতিবেদনের। আর তাকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তির সময় যে টিকিট কাটা হয়েছিল, তাতে লেখা ‘হেড ইনজুরি’ বা ‘মাথায় আঘাত’। পাশে বন্ধনীর ভেতরে লেখা ‘গ্রেনেড ব্লাস্ট’ বা গ্রেনেড বিস্ফোরণ।

মোহাম্মদপুরে মারা যায় রাকিব। সে মোহাম্মদপুরের আইটিজেড স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা আবুল খায়ের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল ৫-এ বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করেন।

খেলতে গিয়ে গুলিতে মারা যাওয়া রাকিব হাসানের লাশের দিকে তাকাতে পারেননি আবুল খায়ের। তিনি বলেন, ‘তাকাইতে পারি নাই লাশের দিকে। শুধু একবার দেখছি মাথা ব্যান্ডেজ করা। সন্তান তো। আমি পালছি। লাশের দিকে তাকালে আর্তনাদ বাড়ে। যে মা-বাবার কোল থেকে সন্তান চলে গেছে, শুধু তাঁরাই বুঝতে পারবেন এ কষ্ট।’

আরও পড়ুন

এই শিশু–কিশোরেরা আর স্বপ্ন দেখবে না 

১৬ বছরের আমিনুল ইসলাম (আমিন) ঘুমাচ্ছিল। তখন বাসা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন ওবায়দুল ইসলাম। যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার অনাবিল হাসপাতালের সামনে রিকশা নিয়ে গেলে দুই ব্যক্তি এসে বলেন, এক কিশোরের গুলি লেগেছে, হাসপাতালে নিতে হবে। ওবায়দুল দেখতে পান, সেই কিশোর আর কেউ নয়, তাঁর ছেলে।

ওবায়দুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘কাছে গিয়া চাইয়্যা দেখি, এ তো আমারই ছেলে।’ এই ঘটনা মানুষের মনে চরমভাবে ধাক্কা দিয়েছিল। আমিনুল স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করত। ফুটবল খেলোয়াড় হতে চেয়েছিল সে। এলাকায় খেলে একটি ক্রেস্টও পেয়েছিল।

জামান মিয়া (১৭) নরসিংদীর তানিয়া ডাইং কারখানার সামনের সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢামেকে সে মারা যায়। জুবাইদ হোসেন (১৫) যাত্রাবাড়ীতে একটি মুদিদোকানে চাকরি করত। ২০ জুলাই সংঘর্ষ শুরুর পর দোকান বন্ধ করে দিয়ে মালিকের বাড়িতে চলে যাচ্ছিল। পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পথচারীরা তার লাশ কাছাকাছি একটি মাদ্রাসার বারান্দায় রেখে দেন। ময়মনসিংহের নান্দাইলে থাকা স্বজনেরা খবর পেয়ে লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন।

রাতে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বৈঠাখালীর বাসায় বসে খাওয়াদাওয়া করেছিল স্কুলছাত্র মো. আহাদুন (১৭)। কিছুক্ষণ পর বাইরে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে। দুদিন পর ঢামেকের জরুরি বিভাগের স্টোররুমে তার লাশের সন্ধান পান স্বজনেরা। তার বাবা মজিবুর রহমান ডিজেল ইঞ্জিন মেরামতের কাজের পাশাপাশি একটি মুদিদোকান চালান। আহাদুন পূর্ব বাড্ডার ইউসেপ হাজী সিকান্দার আলী টেকনিক্যাল স্কুল থেকে এবার এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের মুদিদোকান দেখাশোনা করত সে।

 বাবা শাফায়েত মিয়ার সঙ্গে সোহাগ মিয়া (১৬) ঢাকায় রিকশা চালাত। রাজধানীর নয়াবাজার এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় সোহাগ। স্বপ্ন ছিল বাড়তি আয় হলে অথবা টাকা জমিয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দার গ্রামের বাড়িতে একটি ঘর তুলবে। ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়া চালিয়ে যাবে। বাবা শাফায়েত মিয়ার ক্ষোভ, ‘আমার ছেলে কার কী ক্ষতি করেছিল। তার মাথায় গুলি কইরা মারতে হইছে।’

কাঁঠালবাগান এলাকায় নিজেদের গরুর খামারের দুধ সরবরাহ করে ফেরার পথে গ্রিন রোডে মাথায় গুলি লাগে ১৩ বছর বয়সী মোবারক হোসেনের। ১৭ বছর বয়সী আবদুল কাইয়ুম আহাদ যাত্রাবাড়ীতে রেফ্রিজারেটর ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) মেরামতের কাজ শিখত।

যাত্রাবাড়ী উড়ালসড়কের পাশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে ঝাঁঝরা হয় তার শরীর। নোয়াখালীতে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা আবদুল কাইয়ুম ছয় মাস আগে কাজ শিখতে ঢাকায় এসেছিল। স্বপ্ন ছিল কাজ শিখে পরিবারের হাল ধরবে।

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নিখোঁজ হয় ১৪ বছরের সাইমন। পরে পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সাইমনের লাশ খুঁজে পান। সাইমনের দুই বছর বয়সে তার বাবা মারা গেছেন। সাইমন পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছিল।

লাশের ওপরেও গুলি চালিয়েছিল পুলিশ

১৭ বছর বয়সী হৃদয় আহমেদ (শিহাব) রাজধানীর বাড্ডায় একটি আসবাবের দোকানে কাজ করত। দোকানে যাওয়ার পথেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সে।

নরসিংদী শহরের জেলখানার মোড়ে বুলেটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবম শ্রেণি পড়ুয়া তাহমিদ ভূঁইয়া তামিম (১৫)। তার লাশ স্ট্রেচারে রেখে স্লোগান দিচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। সে সময় আবার গুলি চালায় পুলিশ। সেই গুলি তাহমিদের লাশেও লাগে। প্রায় ১০০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে তাহমিদের বাবা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া অসহায়ের মতো সে দৃশ্য দেখেছেন।

রাজধানীর চিটাগাং রোড এলাকায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলছিল। দুপুরে ভাত খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল ছোট্ট হোসেন মিয়া (১০)। পপকর্ন, আইসক্রিম ও চকলেট ফেরি করত সে। অনেক খোঁজার পর স্বজনেরা ঢামেকে মানিক মিয়া ও মালেকা বেগম ছেলে হোসেন মিয়ার লাশ পান।

‘এমন কষ্ট আল্লাহ য্যান আর কাউকে না দেয়’

নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি রোডে গুলিতে নিহত হয় কিশোর মো. রাসেল (১৫)। দেড় বছর ধরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করছিল। ছয়-সাত হাজার টাকা বেতনের সেই চাকরি। রাসেলের বাবা পিন্টু রহমান দিনমজুরি করে সংসার চালান। চার ভাই-বোনের মধ্যে রাসেলের এক বোন মানসিক প্রতিবন্ধী।

পিন্টু রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলের বুকে গুলি লাগছে শুক্রবার (১৯ জুলাই)। চার দিন ধরে হাসপাতালের বেডে কাতরাইছে। ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়োছে জ্যানেও তার পাশে থাকতে পারিনি। কতই–না কষ্ট প্যায়ে মারা গেছে। কতই–না আর্তনাদ করিছে। এমন কষ্ট আল্লাহ য্যান আর কাউকে না দেয়।’ দেশে কারফিউ জারি হওয়ায় এই বাবা ছেলেকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে পারেননি।

মো. ইমন (১৭) ভাটারার বাসা থেকে বেরিয়ে গুলশানে যাওয়ার পথে নতুনবাজার এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সে গুলশানের ফুটপাতে একটি খাবারের দোকানে কাজ করত। তার পেটের ডান পাশে গুলি লাগে।

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ ধানমন্ডিতে গুলিতে মারা যায়। ২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ফারহানের জন্ম। সে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ইন্ট্রোতে ইংরেজিতে লিখেছিল, ‘একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে।’ 

ফারহানের মতো এই শিশুদের অনেকেই হয়তো মনে রাখবে। শুধু এই শিশুদের ও তাদের পরিবারের স্বপ্নটা আর কোনো দিন পূরণ হবে না। 

মানসুরা হোসাইন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক