অভিমত
রাষ্ট্রীয় সংস্কারের অগ্রাধিকার যেভাবে ঠিক করা যায়
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে প্রধান আলোচনা এখন রাষ্ট্র সংস্কার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও রাষ্ট্র সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে, নিয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপও। অনেকগুলো কমিশনও গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে লিখেছেন গোলাম রসুল
ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের ফলে জনগণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ব্যাপক আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্ম নেয়। এ ব্যাপারে এখন প্রায় সবাই একমত যে বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করা অপরিহার্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্পর্কে সম্ভাব্য ধারণা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।
রাষ্ট্রীয় সংস্কার একটি কঠিন ও জটিল কাজ। কেউ কেউ এটিকে ‘উত্তাল মাঝসমুদ্রে একটি জাহাজের পুনর্নির্মাণ’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন (প্রথম আলো, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৮)। রাষ্ট্রীয় সংস্কারের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা ব্যাপক। সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের সীমিত সময় এবং সাধ্যের মধ্যে সম্ভব নয়। তাই সরকারকে সংস্কারের জন্য একটি অগ্রাধিকার নির্ণয় করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কীভাবে অগ্রাধিকার নির্ণয় করবে, এর মৌলিক ভিত্তি কী হবে, এর ব্যাপ্তি কী হবে, সব সেক্টরই কি এই সংস্কারের আওতায় আসবে, না কতিপয় সেক্টর সীমাবদ্ধ হবে? একইভাবে সংস্কারের গভীরতা কত দূর হবে, মূল কাঠামোকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হবে, না কাঠামো ঠিক রেখে পদ্ধতির সংস্কার ও পরিবর্তন সাধন করা হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন বস্তুনিষ্ঠ ও নির্মোহ পদ্ধতিতে বিচার-বিশ্লেষণ করে সংস্কারের অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা।
যদিও সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটি সহজ কাজ নয়। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্য ও স্বার্থ অনেক সময়ই ভিন্ন এবং তাদের অগ্রাধিকারও ভিন্ন।
এই পরস্পরবিরোধী উদ্দেশ্য ও স্বার্থের কারণে পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এর জন্য প্রয়োজন সুস্পষ্টভাবে সংস্কারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো ঠিক করা, সংস্কারের পরিধি, ব্যাপ্তি ও সীমানা নির্ধারণ করা এবং সংস্কারের ধারণা ও প্রস্তাবগুলোকে সঠিক পদ্ধতি অনুসারে নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করার জন্য একটি বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতি ও নীতিমালা প্রণয়ন করা।
অগ্রাধিকার নির্ণয়ের ওপরের চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য আমি একটি বাস্তবসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তাব করছি। এই ফ্রেমওয়ার্কের মূল সাতটি ধাপ রয়েছে।
প্রধান ধাপগুলো হচ্ছে সংস্কারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ, সংস্কারের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মৌলিক নীতিমালা ও মানদণ্ড নির্ধারণ, সংস্কারের প্রস্তাবগুলো সংগ্রহ ও সংযোজন এবং প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করা, প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব ও সম্ভাব্যতার নিরিখে বিচার-বিশ্লেষণ করা, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা ও নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এই ফ্রেমওয়ার্ক একটি নির্মোহ মানদণ্ডের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে সঠিক পদ্ধতিতে সংস্কারের প্রস্তাবগুলো বিচার, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে অগ্রাধিকার নির্ধারণের পদ্ধতি তুলে ধরেছে।
ফ্রেমওয়ার্কের প্রধান প্রধান ধাপ ও পদ্ধতি
সংস্কারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ: সংস্কারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ সংস্কারপ্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরস্পরবিরোধী মতাদর্শের কারণে সংস্কারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সমঝোতা স্থাপন একটি কঠিন কাজ, কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পটভূমি এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সংস্কারের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সংস্কারের কতিপয় মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সমঝোতায় পৌঁছানো অসম্ভব নয়।
এখন প্রশ্ন আসে, কীভাবে এই সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করা এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ত করা। প্রথমেই দেখতে হবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চরিত্র এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা।
ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট, ছাত্ররা আরেকটি স্বৈরাচারী সরকার দেখতে চায় না এবং তারা একটি বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। কাজেই একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে সব নাগরিক সমান এটাই সংস্কারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পটভূমিতে এটি আশা করা যায় যে কোনো রাজনৈতিক দল এখন একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা চায় না, সবাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে। তা ছাড়া মানুষে মানুষে বৈষম্য মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। কোনো রাজনৈতিক দল নীতিগতভাবে বৈষম্য হ্রাসের বিরোধিতা করতে পারে না।
সংস্কারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। তেমনি সংস্কারের সাফল্যের আরও একটি বিষয় হচ্ছে সরকারের সামর্থ্য এবং সময়ের সীমাবদ্ধতা।
সময়ের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে সময় যত বাড়তে থাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা ও জনপ্রিয়তা ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে। কাজেই সংস্কার পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সময়ের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখতে হবে।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের অগ্রাধিকার নির্ণয়ে নিম্নোক্ত মূলনীতি ও মানদণ্ডগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত মূলনীতি ও মানদণ্ডগুলো
ক. সামাজিক শৃঙ্খলা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা: সংস্কারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির প্রথম কাজ হলো আইনশৃঙ্খলা অবস্থার উন্নতি এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান। আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থার উন্নতি এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং কোনো সংস্কারের কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। কাজেই আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নতি এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেকোনো সংস্কারের অগ্রাধিকার নির্ণয়ে মৌলিক নীতি ও মানদণ্ড হওয়া উচিত। যে সংস্কারগুলো আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সহায়ক, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, অন্যদিকে যে সংস্কারগুলো আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থাকে অবনতি বা ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়, তা সংস্কারের বাইরে রাখা উচিত।
খ. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: অর্থনীতি ও রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষের জীবন, জীবিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং সমাজে কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এ জন্য যে সংস্কারগুলো মানুষের জীবন, জীবিকা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস করে, সে সংস্কারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
গ. বৈষম্য দূরীকরণ ও মানবাধিকার নিশ্চিত: রাষ্ট্রীয় সংস্কারের একটি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত রাষ্ট্রকাঠামোতে বিদ্যমান বৈষম্যের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা এবং এই বৈষম্যগুলো দূর করা যাতে সব জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং লিঙ্গের লোকজন সমান সুযোগ ও সুবিধা পায়। যে সংস্কারগুলো মানুষের মৌলিক অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং বৈষম্য দূরীকরণে সহায়ক হয়, সে সংস্কারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
ঘ. উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন: ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল স্বৈরাচারের অবসান এবং একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা। অতএব যে সংস্কারগুলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে, স্বাধীনভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে, দলীয়করণ রহিত করে, শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি করে এবং ব্যক্তি অধিকার রক্ষা করে সেগুলোই বর্তমান কর্মসূচির মূল লক্ষ্য এবং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্য।
ঙ. সময়সীমা: রাষ্ট্রীয় সংস্কার কর্মসূচির অগ্রাধিকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সময়সীমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাপকাঠি। যেমনটি আগে বলেছি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা এর মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। এই জন্য, যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে যে সংস্কার সাধন সম্ভব নয়, সেই কর্মসূচিগুলোতে সংস্কারের পরিধির বাইরে রাখা উচিত। নতুবা এটা সংস্কারব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
সংস্কারপ্রক্রিয়ার অগ্রাধিকার নির্ণয়ের পরবর্তী ধাপগুলো
উল্লিখিত মৌলিক নীতিমালা এবং মানদণ্ডগুলো এই ফ্রেমওয়ার্কের মূল ভিত্তি এবং অগ্রাধিকার নির্ণয়ের সহায়ক মানদণ্ড হিসেবে কাজ করবে। এই ফ্রেমওয়ার্কের পরবর্তী ধাপগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।
ক. সংস্কারের ধারণা এবং প্রস্তাব সংগ্রহ: সংস্কারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জনগণের চাহিদা ও আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে অনুধাবন করা। এ জন্য সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, এনজিও এবং অন্যান্য মূল অংশীজনদের কাছ থেকে সংস্কারের ধারণা ও প্রস্তাব সংগ্রহ করতে হবে। কাজটি হতে হবে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলকভাবে যাতে প্রস্তাবগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।
খ. সংস্কারের ধারণাগুলোর প্রাথমিক যাচাই-বাছাই: প্রতিটি প্রস্তাব উল্লিখিত পাঁচটি মূল মানদণ্ডের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করতে হবে। যদি কোনো প্রস্তাব উল্লিখিত পাঁচটি মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, অর্থাৎ সংস্কারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তবে সেই প্রস্তাব বর্তমান সংস্কার কর্মসূচির আওতাবহির্ভূত হবে।
গ. সংস্কারের ধারণাগুলো নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করা: প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের উত্তীর্ণ প্রস্তাবগুলোকে এদের গুরুত্ব ও সংস্কারের মূল লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে এদের অপরিহার্যতা এবং বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং পরে বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাজাতে হবে।
ঘ. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সংস্কারগুলোর বাস্তবায়ন: সংস্কারের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন নির্ভর করে এর সফল বাস্তবায়নের ওপর। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক কর্মপরিকল্পনা, সঠিক বাস্তবায়নে উদ্যোগ, বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা, সেই চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের পদক্ষেপ নেওয়া এবং অগ্রগতি নিয়মিত পর্যালোচনা করা এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সমন্বয় করা।
ঙ. নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা, একটি প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব ও চলমান সংস্কার উদ্যোগগুলো হস্তান্তর করা, যাতে অসমাপ্ত সংস্কার কার্যক্রম পরবর্তী সরকার সম্পন্ন করতে পারে। তা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক সম্পাদিত সংস্কার কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় আইনগত ভিত্তি ও বৈধতা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
উপসংহারে বলা যায়, ফ্রেমওয়ার্কটি সংস্কারের ধারণা ও প্রস্তাবগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের একটি বাস্তব দিকনির্দেশনা প্রদান করে। যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলেএটা অংশীজনদের মধ্যে আস্থা অর্জনে এবং বিরোধ নিরসনে সহায়ক হতে পারে।
কিন্তু ফ্রেমওয়ার্কটি মূলত একটি মূল দিকনির্দেশনা প্রদান করে, বাস্তবতার নিরিখে এর পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। তা ছাড়া সংস্কার কর্মসূচির সমন্বয় সাধন এবং বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঠিক ও কার্যকর নেতৃত্ব অপরিহার্য। আশা করি, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে এবং একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
গোলাম রসুল অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা
ই–মেইল: [email protected]