আলতাফ পারভেজের কলাম
ছাত্র-জনতা যেসব ‘সংস্কার’ চেয়েছিল
দেশ স্বাধীন, কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারাই রাজনীতি থেকে প্রশাসনে ঢুকছে, তারাই ‘প্রভু’ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, ‘স্বৈরাচার’ তৈরির অনিবার্য উপাদান এখনকার প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভেতর রয়ে গেছে। সুতরাং সবার তরফ থেকে সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রনৈতিক সংস্কারই এখানে সামাজিক ন্যায়বিচার, সুশাসন ও গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর বাংলাদেশ আবার বিশ্ব-সংবাদ হলো; তবে এবার অনেক বড় বিশ্ব তাৎপর্য নিয়ে। পৃথিবীজুড়ে যখন গণতন্ত্রের দুর্দিন, নানা দেশে স্বৈরাচারদের দাপট চলছে, তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে হলো অনন্য এক জন-অভ্যুত্থান। বিস্মিত বিশ্ব ছাড়াও পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এই ঘটনার প্রবল ছাপ পড়েছে। কয়েক শ মানুষ সরাসরি জীবন দিয়ে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের পক্ষে রায় দিয়েছে, যা উত্তর-ঔপনিবেশিক বৈশ্বিক রাজনীতির ইতিহাসে ইতিমধ্যে এক বড় ঘটনার স্বীকৃতি পাচ্ছে ভাষ্যকারদের কাছে। কিন্তু তা থেকে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে রাজনৈতিক শান্তি আসবে কি?
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে ২০২৪
আপাতত সংস্কারের এজেন্ডা হিসেবে শিক্ষার্থীরা কোটা প্রশ্ন নিয়ে সামনে এলেও বিষয়টা হঠাৎ আসেনি। হঠাৎ এভাবে হাজার হাজার আবু সাঈদরা বন্দুকের সামনে বুক পেতে দেয়নি। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনেও ‘রাষ্ট্র মেরামতে’র প্রশ্ন বড় হয়ে সামনে এনেছিল কিশোর-তরুণেরা। কেউ মোটাদাগে গুরুত্ব দেয়নি।
এটা বেশ কাকতালীয় ঘটনা যে সেই আন্দোলনও হয় এবারের মতো জুলাই-আগস্টে। ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী রক্তগঙ্গায় সে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে। কিন্তু সেই রক্ত থেকে লাখে লাখে নতুন প্রাণ জেগেছে বলেই মনে হলো এবার। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের আগে-পরে শুরু হওয়া ২০১৮ সালের কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে মূলত ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার প্রশ্ন বড় হয়ে উঠতে থাকে দেশজুড়ে। তবে এসবের আরও পেছন ফিরে দেখলে আমাদের মনে পড়বে সংস্কারের এই রাজনীতির শুরু ১৯৭০-৭১–এর আগে থেকেই—‘৬ দফা’ ও ‘১১ দফা’র সময় থেকে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভেতর ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের জায়গায় সাম্য, মানবিক মর্যাদা, স্বাধীনতার বিষয়টাই প্রধান হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তার যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ১৯৯০ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যে ‘১০ দফা’ নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান ঘটায়, সেখানেও প্রধান দাবিগুলো ছিল রাষ্ট্র মেরামত–সংক্রান্ত। তখন ১৫ দল, ৭ দল ও ৫ দল মিলে যে তিন জোটের ‘রূপরেখা’ দিয়েছিল, সেটাও ছিল একধরনের রাজনৈতিক সংস্কার উদ্যোগ।
তবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১০ দফা ছিল প্রকৃতই এক বিস্তারিত সংস্কার দাবি। সেখানে সমাজ, অর্থনীতি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনসহ অনেক বিষয়ে রাষ্ট্রের সামনে সুস্পষ্ট করণীয় ও নির্দেশনা ছিল। রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতায় এসে সেসব সংস্কার করেননি।
জনতা হাল ছাড়েনি
নব্বই–পরবর্তী গত তিন দশকে বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারের ধারণায় অনেক নতুন বিবেচনা যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে এ সময় ছাত্র-জনতা সুশাসনের সংকটের গোড়ার জায়গাটা শনাক্ত করতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তার ডাক উঠেছে বহুদিক থেকে।
একটি দলের বদলে আরেকটি দলের ক্ষমতা দখলে, এমনকি সেটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে হলেও যে বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক সংকট মিটছে না, সেটা ইতিমধ্যে গত তিন-চার দশকে স্পষ্ট।
ব্রিটিশদের তৈরি এই রাষ্ট্র ও প্রশাসন সমাজের কোনো দিকে শান্তি, স্বস্তি, স্থিতিশীলতা, ন্যায়বিচার আনতে পারছে না। একদল ‘অবিশ্বাস্য ধনী’ তথা ‘ভি-ভিআইপি’ তৈরি ছাড়া চলতি শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার আর কোনো বড় অর্জন নেই। বহু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দল ক্ষমতায় এসেছে গত পাঁচ দশকে। যারাই চলতি শাসনতন্ত্র হাতে পেয়েছে, তারাই স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে।
দেশ স্বাধীন, কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারাই রাজনীতি থেকে প্রশাসনে ঢুকছে, তারাই ‘প্রভু’ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, ‘স্বৈরাচার’ তৈরির অনিবার্য উপাদান এখনকার প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভেতর রয়ে গেছে। সুতরাং সবার তরফ থেকে সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রনৈতিক সংস্কারই এখানে সামাজিক ন্যায়বিচার, সুশাসন ও গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে পারে। এবারও ছাত্র-জনতা নানা পরিমণ্ডলে সে কথাই জানাল এবং জানিয়ে যাচ্ছে।
যদি চলতি জুলাই-আগস্টজুড়ে সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ ছিল কেবল সমাবেশের আকার ও কর্মসূচির দিকে। অথচ মাঠপর্যায়ে যদি খেয়াল করা হয়, ছাত্র-জনতা ১৯৭১–এর মতো আবারও দল-মতের ওপরে উঠে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে গণ-সংগ্রাম করল, সেটা ঔপনিবেশিক প্রভু-সংস্কৃতি নির্মূলের জন্য। কোটাব্যবস্থার সংস্কার প্রস্তাব ছিল মূলত বহু ধরনের প্রভু-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঘৃণার এক প্রতীকী দাবি। এ দাবির ভেতর গণরুমের নির্যাতন থেকে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার মতো বহু ধরনের অপমানের যোগফল ছিল।
কিন্তু আইয়ুব খান থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত বারবার জন–আন্দোলনে প্রভুরা পালালেও প্রভুতন্ত্র যে পাল্টাচ্ছে না, তার কারণ বাংলাদেশের শাসন সংকট সম্পর্কে রাজনৈতিক সরকারগুলোর উদাসীনতা। ২০২৪ সালের আগস্টে আবার সুযোগ এসেছে আমাদের সেদিকে নজর দেওয়ার। সদ্য শহীদ হওয়া ৪০০-৫০০ তরুণের আত্মদানকে যদি আমরা আসলেই মর্যাদা দিতে চাই, তাহলে প্রয়োজন তাঁদের রাষ্ট্রনৈতিক সংস্কার ভাবনাকে বাস্তবায়ন করা। সেই কাজে হাত দেওয়া। সেটাই আসল কাজ।
ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো মাঠের আন্দোলনকারীরা কোনো বিশেষ দলের নেতা-নেত্রীর থেকে একদম স্বাধীন। কারও কোনো দলীয় আনুগত্য দেখানোর দরকার পড়ছে না। সুতরাং তারা কোনো দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার চেয়েও বড় করে রাজনৈতিক সংস্কারের কথা ভাবতে পারছে। সেনাবাহিনী তাদের আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং এখনই এই দাবিকে একটা যৌক্তিক উপসংহারের দিকে নেওয়ার উপযুক্ত সময়।
এগোনোর পথ কী
চলতি আন্দোলনকালে বিভিন্ন স্থানের স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাবেশগুলো ঘুরে ঘুরে, মানুষের সঙ্গে কথা বলে আক্ষেপের বড় যে মৌলিক জায়গাটা শনাক্ত করা গেছে, তা হলো লাগামহীন সম্পদ পাচার। এসব সমাবেশে এমন সব মানুষ দেখা গেল, যাঁরা প্রথমবার কোনো মিছিল-মিটিংয়ে এলেন। কিন্তু রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কুশাসনে তাঁরা ক্লান্ত।
তাঁরা বলছেন, ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশরা-পাঞ্জাবিরা সম্পদ পাচার করেছে—তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু স্বাধীন দেশে কেন সেটা ঘটবে এবং এত জোরেশোরে ঘটবে? তথাকথিত ‘আইনের শাসন’ আর ‘স্থিতিশীলতা’র ভেতর দিয়েই সেটা অবলীলায় চলছে দশকের পর দশক। এর একটা বিহিত চায় মানুষ।
মানুষ আর পত্রিকায় হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক জালিয়াতির কাহিনি পড়তে চায় না। সম্পদের এ রকম লুট ঠেকানোর কথা মন্ত্রী-এমপি-আমলা-পুলিশ-বিচারকের। কিন্তু সেটা হচ্ছে না মোটেই। সেই ব্যর্থতাও নজর কাড়ছে মানুষের। সে কারণে এসব পরিসরের মানুষেরও জবাবদিহির আইনি উপায় দেখতে চায় ছাত্র-তরুণেরা।
এসব খাতে প্রভুতন্ত্র এত শক্তিশালী যে সেখানে স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও মানুষ স্বাধীন ব্যক্তির মর্যাদা পায় না। তার মর্যাদা হয় দাসের। যদিও বলা হয়, ‘সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’। কিন্তু কার্যত ক্ষমতার গোড়া রয়েছে এমন সব শাসনতান্ত্রিক আইনের ভেতর, যার জন্য মন্ত্রী-এমপি-আমলা-পুলিশ কাউকে একজন বিশেষ ব্যক্তি ছাড়া কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না।
আইনের মারপ্যাঁচে চূড়ান্ত অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনও ‘বৈধ’ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ রকম বৈধ নির্বাচন যে তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জনতার কোনোই সংযোগ তৈরি করছে না, বরং পুরোনো সংযোগও ছিঁড়ে ফেলছে, তার নজির গত সপ্তাহে দেখেছে সবাই। হয়তো এই জনপ্রতিনিধিরা ভেবে রেখেছিলেন, আবারও তাঁরা একই রকম নির্বাচনী আইন ও নির্বাচন কমিশনের ছত্রচ্ছায়ায় ‘বৈধভাবে’ ভোটের দিনটি পার করতে পারবেন।
জনগণকে ভোটকেন্দ্রে নিতে হবে না। তাঁদের কেবল একজনের কাছে জবাবদিহি করলেই চলবে। নতুন সরকার প্রথম পদক্ষেপে তার একটা জবাব দিলেন ইতিমধ্যে।
ক্ষমতার মালিক কে হবে, কে থাকবে
বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক সংকটের সবচেয়ে করুণ দিক হলো সবার তথাকথিত জবাবদিহির আধার ‘বিশেষ’ একজনকে কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না; জনরোষ বেড়ে গেলে কেবল গণ-অভ্যুত্থানে পালাতে হয় বা জেলে যেতে হয়। বহুকাল ধরে এই যে ‘অসুস্থ’ ব্যবস্থা চলছে, তার অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। ‘ক্ষমতা’ প্রয়োগ ও ভোগের সক্ষমতা জনগণের হাতে আনতে হবে এবার।
বিশেষ করে রাষ্ট্রের সব স্তরের নির্বাহীরা যেহেতু জনগণের অর্থে পরিচালিত, তাই তাঁদের অবশ্যই এক ব্যক্তির বদলে জনগণের কাছে প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। সেটা প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি নাকি সংসদীয় পদ্ধতিতে হবে, তা মুখ্য বিষয় নয়। প্রধান বিষয় হলো আইন।
যেহেতু সমস্যা রয়েছে শাসনতান্ত্রিক আইনে, সুতরাং সরকারপদ্ধতির বদলে জরুরি হলো আইনের সংস্কার। কিন্তু জনগণকে সব সময় বিভিন্ন সরকারপদ্ধতির বিষয় সামনে এনে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। এসব ধোঁকার শেষাংশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের গণতান্ত্রিক ও যৌক্তিক কোনো ব্যবস্থাও রাখা হয়নি, যার পরিণতি পাঁচ বছর পরপর জাতীয় ‘টেনশন’।
২০২৪ সালে এসে আবার দেখা গেল, দেশের রাজনীতির ওপরে আলোচিত সমস্যাগুলো কোনো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংকট নয়। ফলে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে অর্জিত সরকার তার সমাধান দিতে পারবে না। বরং এসব হলো শাসনতান্ত্রিক সংকট। যে সংকট যেকোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ বা ইচ্ছাকে ঔপনিবেশিক আইনি কাঠামোর মাধ্যমে শূন্যই কেবল করে না, তাকে প্রতিক্রিয়াশীলও করে তোলে।
আমরা বারবার, বহুবার দেখেছি, একটি রাজনৈতিক সরকারের বয়স যত বাড়ে, তত জনগণ কোণঠাসা ও নিপীড়িত হতে শুরু করে। জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াতে শুরু করে তারা। জনগণের ওপর ক্ষমতার দাপট দেখানোই তার প্রতিদিনকার রুটিন হয়ে পড়ে।
অথচ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী কথা ছিল, ‘গণক্ষমতা’ থাকবে নাগরিকদের কাছে। সেই গণসক্ষমতার জায়গা যদি শাসনতন্ত্রে নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে বিদ্যমান শাসনতন্ত্রের দুর্বলতাগুলো নিয়ে এখনই গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ ভাবনার জায়গা তৈরি করতে পারে গণপরিষদ নির্বাচন, যাকে আইনের ভাষায় ‘কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি’ বলা হয়। নির্বাচিত পরিষদ বিদ্যমান শাসনতান্ত্রিক আইনের সংস্কার করবে, দরকার হলে নতুন করে ঔপনিবেশিক আইনগুলো বিকল্প তৈরি করবে।
ছাত্র-জনতা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য রাজপথে নামেনি। তাদের কোনো কর্মসূচিতে সে রকম কিছু নেই। কিন্তু তারা এখন এবং ২০১৮ সালেও বারবার সংস্কারের কথা বলছে। যে সংস্কারে থাকতে হবে সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর ওপর নির্বাহী বিভাগের বিশেষ একজনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্তৃত্বের অবসান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন, সংসদ সদস্যদের আইন প্রণয়নে এবং স্থানীয় সরকারের উন্নয়নকাজে পৃথক ভূমিকা নিশ্চিত করা, জাতীয় বাজেট প্রণয়নে জন–অংশগ্রহণ বাড়াতে সংবিধানের ৮০-৯২ অনুচ্ছেদের সংস্কার এবং বিশেষভাবে ভোটব্যবস্থার এমন এক সংস্কার, যাতে ভোট অনুযায়ী আসনের হিস্যা নির্ধারিত হয়। সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তকে নির্বাচিত ঘোষণা করে অন্য প্রার্থীর সমর্থক ভোটারদের রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে বঞ্চিত করার বিষয় সংশোধন হলে জাতীয় নীতিনির্ধারণে পুরো দেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে পারে।
বিগত আন্দোলনে পুলিশ বাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে, তাতে ঔপনিবেশিক শাসনামলের পুলিশ অ্যাক্ট, পরবর্তীকালের মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনগুলোরও জনতার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংস্কার প্রয়োজন।
বলা বাহুল্য, এসব বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব ও ধারণাগুলো নিয়ে কাজ করবে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের সেসব সংস্কারের দিকে নিতে পারে গণপরিষদ নির্বাচনের ডাক। ভবিষ্যতের বাংলাদেশের অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো রাজনৈতিক সংকট সামাল দিতে এবারই এবং এখনই যদি শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের কথা ভাবা না হয়, তাহলে ছাত্র-জনতার বর্তমান ক্ষোভ অপ্রশমিতই থেকে যাবে।
আলতাফ পারভেজ, লেখক ও গবেষক